বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের সুস্থ করতে ব্ল্যাড প্লাজমা থেরাপি দেবে সাউথ কোরিয়া। দেশটি জানিয়েছে সেরে ওঠা ব্যক্তিদের কাছ থেকে অ্যান্টিবডি নিয়ে রোগীদের প্লাজমা থেরাপি দেয়া হবে।
সাউথ কোরিয়ার সংবাদপত্র দ্য কোরিয়া টাইমসের এক প্রতিবেদনে বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে।
সম্প্রতি কোরিয়া সেন্টারস ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (কেসিডিসি) এর উপ-পরিচালক কোয়ান জুন-উইক এই পরিকল্পনার ঘোষণা দিয়ে বলেন: প্লাজমা পদ্ধতিটি আশঙ্কজনক রোগীদের চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করা হবে।
কোয়ান জানান, ২০১৫ সালে মিডল ইস্ট রেসপিরেটরি সিন্ড্রোমে (মার্স) যখন দেশের মানুষ আক্রান্ত হলো তখন প্রথম প্লাজমা পদ্ধতিটি ব্যবহার করা হয়। সেখান থেকে নয় জন রোগী সুস্থ হয়েছিল।
তিনি বলেন, চীন এই পদ্ধতিতে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের সফল চিকিৎসা দিচ্ছে।
‘‘যদিও বৈজ্ঞানিকভাবে করোনভাইরাসটির জন্য এই চিকিৎসা প্রমাণিত না, তারপরেও আশঙ্কাজনক অবস্থায় রোগীদের চিকিৎসার বিকল্প হতে পারে প্লাজমা ,’’ কোয়ান বলেছিলেন।
যদিও করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) এখনো প্লাজমা-ভিত্তিক চিকিৎসার কার্যকারিতা এখনও প্রমাণিত হয়নি। তবে বিজ্ঞানীরা আশা করছেন যে করোনা থেকে সুস্থ হওয়া ব্যক্তিদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা অ্যান্টিবডি সমৃদ্ধ প্লাজমা করোনা আক্রান্ত রোগীদের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলবে।
ইতিমধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চিকিৎসকরা এ থেরাপি প্রয়োগ করে সুফল পেয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের একটি হাসপাতালে গত ৩১ মার্চ পরীক্ষামূলকভাবে প্লাজমা পদ্ধতিতে চিকিৎসা শুরু করেছে। গত সপ্তহে ইরানও এই পদ্ধতিতে চিকিৎসা শুরু করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের মাউন্ট সিনাই হাসপাতালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ডেভিড এল. রেইচ বলেন, হাসপাতালে শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যায় থাকা রোগীদের তারা এ থেরাপি দেবেন।
যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ইয়ান লিপকিন বলেন, সুস্থ হয়ে ওঠা ব্যক্তিদের প্লাজমাদাতা হিসেবে এগিয়ে আসতে হবে। সংক্রমিতদের চিকিৎসায় এটি ব্যবহৃত হবে। একজনের প্লাজমায় তিনজনের চিকিৎসা সম্ভব। এটি সহজ এবং ভ্যাকসিন না আসা পর্যন্ত কার্যকর সমাধান হতে চলেছে। সুস্থ হয়ে ওঠা ব্যক্তির রক্ত প্রচুর অ্যান্টিবডির উৎস হতে পারে। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যে প্রোটিন তৈরি করে, তা করোনাভাইরাসকে আক্রমণ করতে পারে।
অ্যান্টিবডি থাকা রক্তকে বলা হয় ‘ক্যানভ্যালসেন্টস প্লাজমা’। এটি কয়েক দশক ধরে ইবোলা, ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো সংক্রামক রোগে ব্যবহৃত হচ্ছে।
চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসে বিশ্বের ২০৩টি দেশ ও অঞ্চলে এখন পর্যন্ত সাড়ে ৯ লাখ মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে মারা গেছেন ৪৭ হাজার ২৪৯ জন। তবে সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরেছেন ১ লাখ ৯৪ হাজারের বেশি মানুষ।