করোনা মহামারিতে দেশের বৃহত্তম এনজিও ঠেঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংঘ (টিএমএসএস) দরিদ্রদের পাশে দাঁড়িয়েছে। দেশের ৬৪ জেলায় করোনা চিকিৎসা সহায়তার পাশাপাশি ত্রাণ সহায়তা দিচ্ছে টিএমএসএস। করোনা ঝুঁকি না কমা পর্যন্ত টিএমএসএস তা অব্যাহত রাখবে।
সম্প্রতি উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় ত্রাণ বিতরণ ও চিকিৎসাসেবা উপকরণ প্রদান শেষে টিএমএসএস এর প্রতিষ্ঠাতা ড. হোসনে আর বেগম বলেন, বাংলাদেশকে গত ৫০ বছর ধরে বাস্তুচ্যুত ,দুর্ভিক্ষ, ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, রাজনৈতিক অস্থিরতা , সঙ্কট ও প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ অনাকাঙ্খিত প্রতিবন্ধকতা লক্ষ লক্ষ মানুষকে পুনর্বাসিত করার প্রয়াসকে করোনা অধিক রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। বিশ্বব্যাপি কোভিড-১৯ এর মহামারী এর আগে পৃথিবী এমন বিশালত্বের অভিজ্ঞতা কখনও অর্জন করেনি ।
এমন বিপর্যয় মোকাবিলার জন্য পদ্ধতি প্রস্তুতির ব্যর্থতা এবং দুর্বলতা প্রকাশ করেছে একুশ শতকের বিজ্ঞান, একুশ শতকের পৃথিবী। ছ’মাসাধিক অতিবাহিত হলেও কোভিড-১৯ এর প্রতিকারমূলক কার্যকর কোনো মেডিসিন আবিস্কার হয়নি। কবে হবে তারও কোনো পূর্বাভাস নেই।
তিনি বলেন,বাংলাদেশের সাড়ে ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে আজ অজানা এক আতঙ্ক বিরাজ করছে । মৃত্যুভয় তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে সর্বত্র।এই অনিশ্চয়তার শুরু থেকেই অথনীতিকে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে কোভিড-১৯ এর আঘাত। একটা সম্প্রদায়ের কার্যকলাপকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে ,একটা পরিবার, একজন ব্যক্তির বর্তমান এবং ভবিষ্যতকেও দিশেহারা করছে এর ভয়াবহতা। আর এর প্রভাব বিশ্বব্যাপী। বিশেষ করে গ্রামীণ এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলে বা শহরাঞ্চলে হোক না কেন সমাজের সবচেয়ে অভাবী মানুষকে উন্মোচিত করেছে। হতাশার সময়ে দ্ররিদ্রতম সর্বাধিক প্রান্তিক, সংখ্যালঘু এবং সহজে আঘাত প্রাপ্ত মানুষের জন্য সাহায্য চালিয়ে যাওয়াও একটা বড় অনুপ্রেরণা। সরকারিও বেসরকারি খাত আন্তরিকতার সাথে মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরনের জন্য কাজ করে গেলেও বর্তমানে সেই চাহিদা পূরণ না হওযার আশাঙ্কা দেখা দিয়েছে। ভেঙ্গে পড়েছে স্বাস্থ্যসেবা।
এ কঠিন সময়ে টিএমএসএস সমাজ পরিবর্তনকারী এবং অন্যান্য তৃণমূলের সংগঠনের প্রেরণাদায়ক স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সাথে একযোগে কাজ করে যাচ্ছেন। বিশেষ করে কোভিড-১৯ শুরু থেকে মানুষকে রক্ষায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এ কাজে বাংলাদেশের ৬৪ টি জেলার লক্ষ লক্ষ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। কোভিড-১৯ সংকট ঘোষণার পর থেকে টিএমএসএস প্রতিদিন ৫০০ এর বেশি পরিবারকে খাদ্য ত্রাণ এবং ৫০০ পরিবারকে পুষ্টিকর খাবার প্যাকেট সররবরাহ করে আসছে। এবং ক্রমাগত তা বাড়ছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সকল প্রয়াসের সম্মানে গত মাসের শুরুর দিকে টিএমএসএসের সমস্ত কর্মীরা তাদের বেতনের এক শতাংশ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে অনুদান দিয়েছে। এ পর্যন্ত টিএমএসএস হ্যান্ড স্যানিটাইজার, সাবান, স্বাস্থ্য সুরক্ষা কর্মীদের ২ মিলিয়ন মাস্ক সহ ব্যক্তিগত সুরক্ষামূলক সরঞ্জাম বিতরণ করেছে। বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদফতকে ৫০,০০০ এরও বেশি পিপিই কিটস সরবরাহ করেছে, জেলা প্রশাসকদের কার্যালয়, বাংলাদেশ পুলিশ এবং সমাজকল্যাণ কর্মকর্তাদের। টিএমএসএস সারা দেশের তৃণমূল পর্যায়ে কোভিড- ১৯ সম্পর্কিত সচেতনতা বিধানের জন্য সক্রিয় সংগঠক হিসাবে কাজ করছে হোম কোয়ারানটাইন, আইসোলেশন এবং সামাজিক দূরত্ব বিধি বিধানের জন্য কমিউনিটি পুলিশিংএর স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে সমর্থন যোগাচ্ছে ।
এই প্রচেষ্টার মধ্যে টিএমএসএস কোভিড-১৯ সন্দেহভাজন রোগীসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলে ঘরে ঘরে চিকিৎ্সা ব্যবস্থা এবং পরামর্শ দেওয়ার জন্য একটি চিকিৎসক সহকর্মী মোবাইল টিম গঠন করেছে। বগুড়ায় ১,০০০ বিছানার রাফাতুল্লাহ কমিউনিটি হাসপাতাল করা হয়েছে। জেলার শাজাদপুর উপজেলাতে ২০০ শয্যার আইসোলেশন কেন্দ্র, বগুড়া সদর উপজেলাতে ১৫০ শয্যা আইসোলেশন কেন্দ্র এবং উলতা ভবনে ২০ বিছানা আইসোলেশন ইউনিট স্থাপন করা হয়েছে। আমাদের দেশের প্রথম সারির স্বাস্থ্যসেবা বীরাঙ্গনাদের সুরক্ষার জন্য শুধুমাত্র কোভিড -১৯ রোগীদের জন্য বরাদ্দকৃত পৃথক ট্রান্সপোটেশনসহ সব হাসপাতালের কর্মীদের জন্য আবাসন এবং খাওয়ার ব্যবস্থাও করা হয়েছে। টিএমএসএস দেশব্যাপী ৭৭ টি সাব ক্লিনিকের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা ও পরিষেবাও সরবরাহ করছে। তদ্ব্যতীত, আরসিএইচে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রনালয় দ্বারা অনুমোদিত আরসিএইচে পলিমারিজ চেইন রিঅ্যাকশন (আরসিআর) ল্যাব টেস্টিং সুবিধা বাংলাদেশের এপিডেমিওলজি ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড রিসার্চ (আইইডিসিআর) ইনস্টিটিউটে সাথে একত্রে কাজ করে পরীক্ষা ও রোগ নির্ণয়ে কাজ করে যাচ্ছে। কোভিড-১৯ চলাকালীন বাংলাদেশের আরও দুর্বল জনগোষ্ঠীর সহায়তার জন্য টিএমএসএস একটি দান বাক্স চালু করেছে
ড. হোসনে আরা বলেন, ৪০ বছর আগে টিএমএসএস দারিদ্র সীমার নীচ থেকে জন্মগ্রহণ করে। জাতির পিতার অনুপ্রেরণার সাথে টিএমএসএস দারিদ্র্য বিমোচন এবং অগ্রগতি ও টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে সংহতি হিসাবে তাদের এলাকায় গরিব মানুষকে নেতৃত্বে আনতে সক্ষম হয়েছে এবং তা সকল সম্প্রদায়ের জন্য। টিএমএসএস বর্তমানে সারা দেশে ১,৬০০ টি অফিসে ৩৩,০০০ কর্মচারী রয়েছে। টিএমএসএস বৈষম্যের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে এবং সমাজ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার সমস্ত বিভাজনের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে। প্রায় মিলিয়ে যাওয়া, যাদের কণ্ঠ শোনা যায়নি টিএমএসএস তাদের কণ্ঠ দিয়েছে, তাদের দমন করা হয়নি বরং তাদের ক্ষমতায়িত করা হয়েছে। টিএমএসএস এর কাজ অব্যাহত রয়েছে এর মূল্যবোধকে সমুন্নত রেখে এবং সমস্ত দুর্ভোগ ও দারিদ্র্যের অবসানের লক্ষ্যে এই সমস্ত ঝুঁকিপূর্ণ প্রান্তিক সংখ্যালঘুদের পাশে দাঁড়িয়ে কাজ করে চলেছে।
মশালের মতো টিএমএসএস এমন একটি দেশের প্রতি আশা জাগিয়ে তুলছে যার সম্ভাবনা এখনও টেকসই বিকাশ লক্ষ্য (এসডিজি) অর্জনের দিকে সচেষ্ট হওয়ার প্রচেষ্টা শেষ হয়নি। যেখানে দারিদ্র্যতা ও ক্ষুধার কোনও স্থান নেই।
ড. আরা বলেন, যে কথাটি না বললেই নয়, তা হচ্ছে জননেত্রী শেখ হাসিনার ২০৪১ এর চ্যালেঞ্জের রুপায়ন এবং ভবিষ্যতে কোভিড-১৯ এর চেয়েও বিশালাকার সংকট মোকাবেলায় আমাদের সকলকে এগিয়ে আসতেই হবে। মনে রাখতে হবে সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানই নয় রাষ্ট্রের সর্বময় ক্ষমতার মালিক আপামর জনসাধারণকে সজাগ, সচেতন ও সততার সঙ্গে ঐক্যবদ্ধবাবে কাজ করতে হবে। তবেই সফর হবে প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন। সফল হবে জাতির জনকের স্বপ্ন।