চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

করোনা বিস্তাররোধে ‘সামাজিক দূরত্ব’

চীনের উহান থেকে বিশ্বব্যাপী দ্রুত বিস্তার করেছে করোনা ভাইরাস। বিশ্বের প্রত্যেকটি দেশ করোনায় আক্রান্ত হতে শুরু করেছে দ্রুতই।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, করোনায় এখন পযন্ত সারা বিশ্বে ১,৮৮,৬৩০ জন আক্রান্ত হয়েছে, মৃত্যু হয়েছে ৭ হাজার ৫১১ জনের এবং সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৮০ হাজার ৮৭৪ জন।

করোনা ভাইরাস প্রথমে ধীরে শুরু হয়। দ্বিতীয় বা তৃতীয় দিন থেকে তা দ্বিগুণ হারে বিস্তার করে। দ্রুতবেগে ছড়িয়ে যায়। যেমন যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম সপ্তাহে করোনায় আক্রান্ত শনাক্ত হয় মাত্র ২ জন। কিন্তু দ্বিতীয় সপ্তাহে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১০৫ জন। তৃতীয় সপ্তাহে ৬১৩ জন আক্রান্ত হয়।

একইভাবে ইটালিতে প্রথম সপ্তাহে করোনা ধরা পড়ে মাত্র ৩ জনের দেহে। দ্বিতীয় সপ্তাহে তা হয়ে যায় ১৫২ জন, তৃতীয় সপ্তাহে ১০৩৬ জন, চতুর্থ সপ্তাহে ৬৩৬২ জন এবং পঞ্চম সপ্তাহে মাত্রা ছাড়িয়ে দাঁড়ায় ২১১৫৭ জনে। এভাবেই দ্রুত গতিতে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে ব্যক্তি থেকে ব্যক্তির দেহে।

ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে, যুক্তরাষ্ট্রে রোগটি ছড়িয়ে পড়ার বিষয়টি দেখানো হয় একটি রেখাচিত্রে। যেখানে দেখা যায়, শুরুটা ধীরে হলেও এরপর তা দ্রুত বিস্তার করে।

এ নিয়ে বিশেষজ্ঞরা মারাত্মক চিন্তিত। প্রতি তিন দিনে যদি আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণ বাড়তে থাকে তাহলে মে মাসের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় একশ মিলিয়ন (১০ কোটি) লোক করোনায় আক্রান্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা।

তারা বলছেন, এটি গাণিতিক হিসাব, কোনো ভবিষ্যদ্বাণী নয়। যখন আক্রান্ত ব্যক্তি সুস্থ ব্যক্তির সংস্পর্শে আসে এই রোগ ছড়ায়।

এই রোগ বিস্তাররোধে বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়েছেন।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জনবহুল এলাকা এড়িয়ে যেতে হবে। সাধারণের চলাচল সীমিত রেখে লোকজন যদি ‘সামাজিক দূরত্ব’ অনুশীলন করে তবে এর বিস্তাররোধ করা সম্ভব। এক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করা উচিত। যেভাবে হুবাই প্রদেশে চীন সরকার জোরপূর্বক কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করেছে।

বাল্টিমোর শহরের প্রাক্তন স্বাস্থ্য কমিশনার লিয়ানা ওয়েন ওয়াশিংটন পোস্টকে এই বিষয়টি ব্যাখ্যা করেছেন। জোরপূর্ব কোয়ারেন্টিন বা পৃথকীকরণের বিষয়টি প্রায় অসম্ভব।

তিনি বলছেন, মানুষ কি তাদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হচ্ছে? প্রতিটি সড়কে কীভাবে বাধা দেয়া যাবে? কীভাবে প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো তাদের কাছে পৌঁছাবে?

জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্লোবাল হেলথ আইনের অধ্যাপক লরেন্স ও গস্টিন বলছেন, সত্য হলো, এভাবে আটকে রাখার বিষয়টি কাযকর হওয়া বিরল। কিন্তু তাদেরকে বাধ্য করা উচিত। তবে আরো কিছু পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে। যেমন জনসাধারণের সমাবেশ এড়িয়ে চলা, বাড়িতে অবস্থান করা এবং লোকজনের কাছ থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। যদি লোকজন পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ সীমিত রাখে, পরস্পরের সঙ্গে মেলামেশা বন্ধ করে, তবে ভাইরাসের সংক্রমণের সুযোগ কম থাকে।

“মূলত সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার ষিয়টি নিশ্চিত করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা”।

তারা বলছেন, বেশি সামাজিক দূরত্ব, বেশি মানুষকে সুস্থ রাখবে। আমরা জনবহুল স্থানে  অযাচিত যাতায়াত বন্ধ করি ও নিয়ন্ত্রণ করি। ইটালি তার সমস্ত রেস্টুরেন্ট বন্ধ করে দিয়েছে। চীন সবকিছু বন্ধ করে দিয়েছে এবং  যুক্তরাষ্ট্রও একই উদ্যোগ নিয়েছে।

লোকদের জড়ো হওয়ার স্থানগুলো বন্ধ করে দিলে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে সহায়তা করে বলে জানান থমাস জেফারসন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ ও জনসংখ্যা স্বাস্থ্য গবেষক ও সহকারী অধ্যাপক ড্রু হ্যারিস।

বিশেষজ্ঞদের মতে, অবাধ, মুক্তস্থান, কোয়ারেন্টিন, সামাজিক দূরত্ব এবং বিস্তৃত সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করার মাধ্যমে করোনা ভাইরাস বিস্তাররোধ করা সম্ভব হতে পারে।