করোনাভাইরাসের পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনে ব্যার্থতার পরিচয় দিয়ে যাচ্ছে বলে দাবি করেছেন নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।
তিনি বলেন, দায়িত্বশীল ভুমিকায় ব্যর্থ হওয়ায় বিএনপিকে মানুষ আগামী দিনে আস্তাকুড়ে নিক্ষেপ করবে।
শনিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) উদ্যোগে এম্বুলেন্স সেবার উদ্বোধনের সময় এ কথা বলেন তিনি।
খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, করোনাভাইরাসের মহামারিতে পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশ, যে দেশগুলো স্বাস্থ্য সেবায় সারা বিশ্বে নেতৃত্ব দেয় তারাও অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছে। অথচ আমাদের দেশের স্বাস্থ্য ক্ষেত্রের সক্ষমতার সীমাবদ্ধতার থাকা সত্বেও সরকার সাহসিকতার সাথে এই করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবেলা করে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, অনেকে, অনেক ধরনের সমালোচনা করেন, তিরস্কার করেন। বাস্তবতা হলো, ইউরোপসহ আমেরিকা রাশিয়ায় লাখ লাখ মানুষ শনাক্ত হচ্ছে, আবার হাজার হাজার মানুষ সেখানে প্রাণ হারাচ্ছে। ইটালিতেতে দেড় লক্ষ শনাক্ত হয়েছে সেখানে ২৯ হাজার মানুষ জীবন দিয়েছে। বাংলাদেশে এক লাখ ৩০ হাজার মানুষের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমন ধরা পড়েছে, মৃত্যুর সংখ্যা দেড় হাজার। মৃত্যুর হার সেখানে ১.২৩ শতাংশ। এটার মধ্য দিয়ে বোঝা যাচ্ছে বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের মধ্যে আমরা কিভাবে মোকাবিলা করে এগিয়ে যাচ্ছি।
বিএনপির সমালোচনা করে তিনি বলেন, করোনাভাইরাসকে নিয়ে রাজনীতি নয়, আজকে করোনাভারাসকে নিয়ে যে সকল রাজনৈতিক দল সমালোচনা করছেন বিশেষ করে বিএনপি। আমরা ১৯৯১ সালে ঘূর্ণিঝড়ে দেখেছি। দুই লাখ মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে। অসহায় ভাবে মৃত্যুবরণ করেছে ,কোন ধরণের সাপোর্ট সরকারি ভাবে দেয়া হয়নি, পশুমানুষ এক সঙ্গে দাফন করা হয়েছে। একই ভাবে গণকবর দেওয়া হয়েছে, অথচ বর্তমানে বাংলাদেশে সেই রকম অবস্থার ধারেকাছেও নেই।
করোনা পরিস্থিতি বিষয়ে তিনি বলেন, এ ধরণের পরিস্থিতির জন্য সমগ্র পৃথিবীর কোথাও প্রস্তুতি ছিল না। সেখানে মুখরোচক সমালোচনা করে আজকে বাংলাদেশের মানুষকে আতঙ্কিত না করে সঠিক রাস্তায় আমাদের হাঁটতে হবে এবং সরকার যে ব্যবস্থাগুলো নিচ্ছে সেই ব্যবস্থার কোন জায়গায় গুলোতে ত্রুটি আছে, সেই জায়গা গুলোতে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য দায়িত্বশীল ভুমিকা পালন করতে হবে।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব থেকে বাঁচতে স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আমাদের অস্বীকার করার উপায় নাই, যে বাংলাদেশের মানুষের সচেতনতার কিছুটা অভাব আছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকার গ্রাম পর্যায়ে কমিউনিটি ক্লিনিক করে দিয়েছেন স্বাস্থ্য সেবার জন্য এবং স্বাস্থ্য সচেতনতার জন্য, আজকে সেই জায়গাটিতে অভাব আমরা লক্ষ করছি। এই করোনাভাইরাস সমগ্র পৃথিবীতে বলা হচ্ছে স্বাস্থ্য সচেতনতার মধ্যে প্রাদুর্ভাব কমানো সম্ভব। আমাদেরও স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রাদুর্ভাব থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। সচেতনতার বিষয়টি গুরুত্ব দিতে হবে।
এ সময় গণমাধ্যম কর্মীদের ছাটাই বন্ধ করার জন্য মালিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদের ইতিহাসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের পরে শেখ হাসিনা ছাড়া এমন গণমাধ্যম বান্ধব নেতা আর আছে বলে আমার মনে হয় না। শেখ হাসিনা সাংবাদিকদের কথা যেভাবে চিন্তা করেন, সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের কথা চিন্তা করেন। করোনাভাইরাসের এই মহামারীতে তিনি গণমাধ্যম কর্মীদের জন্য প্রনোদনার আওতায় নিয়ে এসেছেন। গত দুই মাস যাবত সরকার এই কর্মহীন মানুষদের পাশে থেকেছেন। অনেকেই অনেক ধরণের আশঙ্কা করেছিলেন, যে এখানে বিভিন্ন ধরনের সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি হবে। কিন্তু বাংলাদেশের গণমাধ্যম সংবাদ পরিবেশন করে যাচ্ছেন এই দুই মাসে এমন একটি সংবাদও প্রকাশ হয় নি, যে সংবাদে সামাজিত অস্থিরতা বাড়বে। আমরা দেখতে পাচ্ছি খুব দুঃখজনক হলেও সত্য, অনেক বিত্তবান যারা অনেক বড় বড় গণমাধ্যম পরিচালনা করেন তারা কোটি কোটি টাকা বিভিন্ন জায়গায় অনুদান হিসেবে দিচ্ছেন। কিন্তু সেই জায়গা থেকেও গণমাধ্যম কর্মীদের ছাটাই করা হচ্ছে, এটা দুঃখজনক। এখানে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নসহ সাংবাদিক সংগঠনগুলো তাদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে এই সমস্যা সমাধান করতে হবে বলে আমি মনে করি। আশা করছি গণমাধ্যম কর্মীদের ছাটাই বন্ধ করবেন। ক্ষমতা প্রযোগ করে ছাটাই করাটা দুঃখজনক। গণমাধ্যমকে চটিয়ে কেউ কখনও এগিয়ে যেতে পারে না। এই ভুল রাস্তায় আপনারা হাঁটবেন না কখনও । আমি মনে করি গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার জন্য বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য, বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রগতির জন্য গণমাধ্যম একটি স্তম্ভ। এটাকে দুর্বল করে বাংলাদেশে কখনও উন্নয়ন এবং অগ্রগতি হতে পারে না, এগিয়ে যেতে পারে না। বাংলাদেশের এই উন্নয়ন অগ্রগতি গণমাধ্যম তুলে ধরেছে বলেই সমগ্র পৃথিবীতে প্রশংসা হচ্ছে। কাজেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা গণমাধ্যমের পাশে আছেন এবং থাকবে।
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজের) সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদের সভাপতিত্বে সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু সহ অন্য নেতৃবৃন্দ বক্তৃত রাখেন।