করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে দেশে নারীদের মৃত্যু হঠাৎই বেড়েছে। গতকাল মৃত ৫৬ জনের মধ্যে ৩৭ জনই নারীর মৃত্যুর খবর দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। বিষয়টি নজরে এসেছে বিশেষজ্ঞদের।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নারীদের অনেকেই এখনও ভ্যাকসিন নেননি। এছাড়াও নারী হওয়ায় সামাজিকভাবে তারা চিকিৎসায় বৈষম্যের শিকার হয়েছেন।
হঠাৎই বেড়ে যাওয়া নারী মৃত্যুর সঙ্গে করোনার কোনো ভ্যারিয়েন্টের সম্পর্ক নেই বলেও জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, বর্তমানে ভ্যাকসিন রেজিস্ট্রেশন ৪ কোটি ছুঁই ছুঁই করছে। করোনাভাইরাস শনাক্তে নমুনা পরীক্ষায় তুলনায় রোগী শনাক্তের হার টানা চারদিন ধরে ১০ শতাংশের নিচে রয়েছে, যা স্বস্তিদায়ক।
করোনায় গত ২৪ ঘণ্টায় পুরুষের চেয়ে দ্বিগুণ সংখ্যক নারীর মৃত্যু হয়েছে। গত বছরের মার্চে দেশে করোনার সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে কখনো এমন চিত্র দেখা যায়নি। সংক্রমণের শুরু থেকে দেশে করোনায় পুরুষের চেয়ে নারীদের মৃত্যু কম ছিল। গত জুন থেকে নারীদের মৃত্যু বাড়ছে। গত মাসে বেশ কিছু দিন দৈনিক মৃত্যুর প্রায় অর্ধেক ছিল নারী।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ১ মার্চ পর্যন্ত দেশে করোনায় মোট মৃত্যুর ২৪ দশমিক ৩৯ শতাংশ ছিলেন নারী। আর গতকালের হিসাবে দেখা যাচ্ছে, মোট মৃত্যুর ৩৫ দশমিক ৪০ শতাংশ নারী।
সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় হঠাৎই ৫৬ জনের মৃত্যুর মধ্যে নারীর মৃত্যু ছিল ৩৭ জন। মৃত্যু বেড়ে গেল কেন সে বিষয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন বৈজ্ঞানিকভাবে এ বিষয়ে সুনিদিষ্ট কোন কারণ নেই।
নারীদের ভ্যাকসিন না নেওয়া অন্যতম কারণ
করোনায় মোট মৃত্যু হারে সম্প্রতি সময়ে নারীর মৃত্যু বাড়ায় ভ্যাকসিন না নেওয়ার প্রভাব বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের সাবেক পরিচালক ডা. বে-নজির আহমেদ।
চ্যানেল আই অনলাইনকে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের গ্রাম অঞ্চলে অনেক নারী ভ্যাকসিন নেন নি। এরফলে মৃত্যুহার বৃদ্ধি পেয়েছে। এ মৃত্যু বাড়ার জন্য আমাদের নারীদের ভ্যাকসিন প্রয়োগের বিষয়টি নজর দিতে হবে।’
সামাজিক বৈষম্যের কারণে নারীর মৃত্যু বেশি
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. আহমেদ পারভেজ জাবীন চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, বৈজ্ঞানিক কোন কারণ নেই তবে সামাজিক কারণ রয়েছে। নারীদের প্রতি আমাদের বৈষম্য রয়েছে, দেখা যাচ্ছে কোন নারী আক্রান্ত হলে তাকে সঠিক সময়ে নিকটস্থ হাসপাতাল বা চিকিৎসকের কাছে নেয়া হচ্ছে না। এ কারণে মৃত্যুহারটা বেড়েছে।
নারীদের মৃত্যুতে ভ্যারিয়েন্টের সম্পর্ক নেই
হঠাৎই বেড়ে যাওয়া নারীদের মৃত্যুতে করোনার কোন ভ্যারিয়েন্টের সম্পর্ক নেই বলে জানিয়েছেন এই দুই বিশেষজ্ঞ জনস্বাস্থ্যবিদ।
ডা. আহমেদ পারভেজ জাবীন বলেন, ‘এখন পর্যন্ত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্ন ও ভ্যাকসিন অব ইন্টারেস্ট-এ নারীর মৃত্যুর হার বেশি বলা হয়নি। এমনিতেই করোনাভাইরাসে পুরুষের মৃত্যু হার বেশি থাকে।’
ডা. আহমেদ পারভেজ জাবীনের সঙ্গে সহমত প্রকাশ করে বে-নজির আহমেদ বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থ্যার গাইডলাইন অনুযায়ী কোন ভ্যারিয়েন্টের সঙ্গে জেন্ডারের সম্পর্ক নেই। ভ্যারিয়েন্ট অনুযায়ী বয়সের ক্ষেত্রে মৃত্যু কম বেশি হয়েছে। করোনার শুরুর দিকে ছোট বয়সীদের আক্রান্তের হার কম থাকলেও ডেল্টার প্রাদুর্ভাবে ছোটরাও আক্রান্ত হয়েছে।
বুধবার ৮ সেপ্টেম্বর দুপুরে কোভিড-১৯ পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ভার্চুয়াল স্বাস্থ্য বুলেটিনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র ও পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল ইসলাম বলেছেন, করোনাভাইরাস শনাক্তে নমুনা পরীক্ষায় তুলনায় রোগী শনাক্তের হার টানা চারদিন ধরে ১০ শতাংশের নিচে রয়েছে, যা স্বস্তিদায়ক।
তিনি জানান, সাম্প্রতিক সময়ে করোনা রোগী শনাক্ত ও মৃত্যু আগের তুলনায় কমেছে। চলতি বছরের সবচেয়ে কম সংখ্যক রোগী ফেব্রুয়ারিতে ও সবচেয়ে বেশি রোগী জুলাইয়ে শনাক্ত হয়েছে।
বিশেষজ্ঞ সকলের অভিমত, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে রাখতে সবাইকে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি (মাস্ক পরিধান, সাবান বা স্যানিটাইজার দিয়ে ঘন ঘন হাত ধোঁয়া, ভিড় এড়িয়ে চলা ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ অন্যান্য) নিয়ম মেনে চলতে হবে।