চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

করোনা দুর্যোগেও বাংলাদেশের কৃষি মাথা উচুঁ করে দাঁড়িয়েছে: জি এ এফ এস পি

মিসিং মিডল ইনিশিয়েটিভ (এম এম আই) ও গ্লোবাল এগ্রিকালচার এন্ড ফুড সিকিউরিটি প্রোগাম (জি এ এফ এস পি) বাংলাদেশের কৃষক সংগঠনের জন্য আর্থিক সেবা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্প এমএমআই কমিউনিটি ওয়েবিনার সিরিজের সমাপনী অনুষ্ঠান হয়েছে। অনুষ্ঠানে বিশ্বব্যাপী করোনাকালীন দুর্যোগেও বাংলাদেশের কৃষি মাথা উচুঁ করে দাঁড়িয়েছে বলে বক্তারা মন্তব্য করেছেন।

আজ (মঙ্গলবার) জুম প্লাটফর্ম ব্যবহার করে সারা বাংলা কৃষক সোসাইটি’র সহায়তায় জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার আয়োজনে এমএমআই কমিউনিটি ওয়েবিনার সিরিজের সমাপনী অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছে।

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের কৃষি খোরাকি কৃষি থেকে বাণিজ্যিকীকরণের পথে। কৃষির রূপান্তর ঘটছে বৈশ্বিক চাহিদার নিরিখে। বিশ্বব্যাপী করোনাকালীন দুর্যোগেও বাংলাদেশের কৃষি মাথা উচুঁ করে দাঁড়িয়ে আছে। উৎপাদনে ঈর্ষনীয় সাফল্য বজায় রেখেছে। কিন্তু বিপণন ব্যবস্থাপনা বা কৃষি যান্ত্রিকীকরণে কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জনে বিনিয়োগ পরিকল্পনায় কৃষক সংগঠনের ভূমিকা সর্বজন স্বীকৃত। সংগঠিত মানুষ যে কোন দুর্যোগ সহজে মোকাবেলা করতে পারে।

এমএমআই কৃষক সংগঠনগুলো আবার সেটি প্রমাণ করলো। সারা বাংলা কৃষক সোসাইটির সহায়তায় ৫৫ টি ভার্চুয়াল কল সেন্টার প্রতিষ্ঠা করে কৃষি পণ্যের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তিতে সহায়তা করছে। বক্তারা শক্তিশালী কৃষক সংগঠনের উপর গুরুত্বারোপ করে বাংলাদেশের কৃষির রূপান্তরে কৃষক সংগঠনকে অংশীদার করার আহবান জানান।

সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) এর চেয়ারম্যান জনাব মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জনাব মোহাম্মদ ইউসুফ এর সভাপতিত্বে অতিথি হিসেবে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. আব্দুল জব্বার সিকদার, এফএও বাংলাদেশের সিনিয়র টেকনিক্যাল এ্যাডভাইজার ড. তায়ান রাজ গুরুং, এবং আলোচক হিসেবে বিশ্ব ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ ড. ইফতিখার মোস্তফা, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি শক্তি ও যন্ত্র বিভাগের অধ্যাপক ড. মনজুরুল আলম, লাইভস্টক এন্ড ডেয়রি ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (এলডিডিপি) এর চীফ টেকনিক্যাল কো-অর্ডিনেটর ড. গোলাম রব্বানি, ঢাকা ব্রিটিশ হাইকমিশনের লাইভলিহুড এডভাইজার জনাব এবিএম ফিরোজ আহমেদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের কৃষি ঋণ বিভাগের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার জনাব শহীদ রেজা এবং এফএও ইনভেস্টমেন্ট সেন্টারের কর্মকর্তা অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শামসুদ্দীন অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে আলোচনা করেন। সরকারি কৃষি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার জ্যেষ্ঠ ও আঞ্চলিক কর্মকর্তাবৃন্দ, বাণিজ্যিক ব্যাংক সমূহের আঞ্চলিক প্রতিনিধিবৃন্দ, বেসরকারী কৃষি উপকরণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাবৃন্দ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকমন্ডলী, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ ও কৃষক সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ ২৩৬ জন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন এমএমআই-বাংলাদেশের সমন্বয়কারী ড. ইমানুন নবী খান এবং দিনের শিখন আলোচনা করেন এমএমআই প্রকল্পের জৈষ্ঠ্য উপদেষ্টা জনাব মোঃ মাহমুদ হোসেন।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বিএডিসি চেয়ারম্যান বলেন, ‘এমএমআই প্রকল্প ইতোমধ্যে এর উদ্ভাবনী কর্মপন্থার মাধ্যমে কৃষক সংগঠন, সম্প্রসারণ এজেন্সি এবং উন্নয়ন সহযোগীদের মধ্যে সাড়া ফেলেছে। প্রকল্পটি এফএও বাংলাদেশ – ডিএই, বিএডিসি, প্রাণি সম্পদ ও মৎস্য অধিদপ্তর এর সাথে সমন্বয় করে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রতিশ্রুতি ডিজিটাল বাংলাদেশের ছোঁয়া এমএমআই কৃষকদের মাঝেও ছড়িয়েছে। তারা প্রযুক্তির আলোয় আলোকিত। রুরাল ইনভেস্ট টুলকিট ব্যবহার করে অংশগ্রহণমূলক পরিকল্পনা প্রণয়ন বা মোবাইল অ্যাপস ব্যবহার করে পরিবীক্ষণ তথ্য সংগ্রহ কৃষকদের অগ্রগতির আরেক ধাপ। অন্যদিকে, সংগঠন পর্যায়ে সাধারণ সেবা কেন্দ্র গড়ে তোলায় কৃষকদের সেবা দোরগোড়ায় পৌঁছানো সহজ হচ্ছে।

তিনি আশা পোষণ করেন, ১৪টি ওয়েবিনার সিরিজে গৃহিত সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনাসমূহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করবে এবং সেগুলো বাংলাদেশের কৃষির অগ্রযাত্রায় কার্যকর ভ‚মিকা রাখবে। প্রধান অতিথি কৃষি যান্ত্রিকীকরণের উপর গুরুত্বারোপ করে কৃষক সংগঠন ভিত্তিক কৃষি যন্ত্রপাতি ক্রয়, ভাড়া ও রক্ষণাবেক্ষণ করার পরামর্শ দেন। তিনি সরকারি-বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক সমূহের প্রতি নিবন্ধিত এবং স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতামূলক কৃষক সংগঠনের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রণীত কৃষি ও পল্লী ঋণ নীতিমালা মোতাবেক ঋণ বিতরণের আহবান জানান।

উল্লেখ্য, জিএএফএসপি সহায়তায় কৃষি মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় এফএও এমএমআই প্রকল্পের পরামর্শ ও নির্দেশনায় কৃষক সংগঠন এবং ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষক ক্রমাগত দক্ষ ও আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠছে। সেই ধারাবাহিকতার ফসল হলো কমিউনিটি ওয়েবিনার সিরিজ তথা প্রশিক্ষণের আয়োজন। মোট ১৪টি বিষয়ে এই প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হবে। অংশীদার কৃষক সংগঠনগুলো ১৫টি ভ্যালুচেইনে বিনিয়োগের জন্য ঠিক করেছে এবং রুরাল ইনভেস্ট টুল ব্যবহার করে ব্যবসা পরিকল্পনা দাঁড় করিয়েছে। যে সকল বিষয় ওয়েবিনারে অর্ন্তভুক্ত করা হয়েছে- বীজ গ্রাম, নিরাপদ মাংস উৎপাদন, মাছ চাষ, দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকরণ, সোনালী মুরগী, হাঁস পালন, নিরাপদ সবজি উৎপাদন, লাভজনক শস্য বিন্যাস, মিশ্র উদ্যান ফসল, ঔষধি বৃক্ষ, স্বাস্থ্যকর খাদ্য, টেকসই কৃষক সংগঠন এবং ভার্চুয়াল কল সেন্টার।