কোভিড-১৯ এর কারণে সুবিধা বঞ্চিত দুঃস্থ মানুষের টিকে থাকা আরো দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে কর্মহীনতা ও বেকারত্বের কারণে। তাদের মধ্যে কিছু মানুষের দুর্ভোগ কিছুটা কমাতে গত রমজান মাসে যাকাতের টাকায় সুবিধাবঞ্চিত পরিবারকে স্বাবলম্বীকরণ উদ্যোগ গ্রহণ করে মজার ইশকুল। এরই অংশ হিসেবে ২০১৭ সালে নেয়া RIKSA (Rehabilitation Idea Key for Sustainable Activity) প্রজেক্টের আওতায় নতুন করে আরো ২১টি দুঃস্থ পরিবারকে ২১টি নতুন রিকশা প্রদান করেছে মজার ইশকুল।
রিকশাগুলো হস্তান্তর অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার, মজার ইশকুলের উদ্যোক্তা আরিয়ান আরিফসহ মজার ইশকুল এর স্বেচ্ছাসেবী টিম।
দুঃস্থ পরিবারের হাতে রিকশা তুলে দিয়ে প্রধান অতিথি কবির বিন আনোয়ার বলেন, “আমার ৩১ বছর সরকারী চাকুরীর অভিজ্ঞতায় এর আগে কখনো দেখি নাই কোন তরুণদল ছোট ছোট শিশুদের বিনামূল্যে পড়ায় আবার তাদের বাবাকে রিকশাও কিনে দেয়। আমার মনে হয় এটাই বাংলাদেশের প্রথম যে, এমন একটা ঘটনা ঘটলো আমরা শুধু শিশুদের দিকে খেয়াল করছি তা না তার বাবা-মা কি করবে, কীভাবে থাকবে, খাবে কিংবা শিশুদের কিভাবে মানুষ করবে ভবিষ্যতে পড়াশোনা করাবে তা নিয়ে চিন্তা করছে।
যাদের কারণে এই করোনা পরিস্থিতিতে মজার ইশকুল এই দুঃস্থ পরিবারগুলোর পাশে থাকতে সেই সকল দাতাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে উদ্যোক্তা আরিয়ান আরিফ বলেন, “শুধু প্রদান করেই শেষ নয়, পুরো বছর জুড়ে নিয়মিত মনিটর করা হবে যাতে যাদের রিকশা প্রদান করা হয়েছে তারা রিকশার সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারে”।
রিকশা পাওয়া মজার ইশকুলের দুই শিক্ষার্থীর বাবা মোঃ রফিকুল ইসলাম জানান “ প্রায় ১০ বছর ধরে ভাড়ায় রিকশা চালাচ্ছি। সারাদিন রিকশা চালানোর পর ১৫০-২০০ টাকা মহাজনকে দিতে হত। এখন মজার ইশকুল থেকে রিকশা পাওয়ার পর জমা টাকা দেওয়ার চিন্তা নাই। এই টাকা জমিয়ে আমি আর একটা রিকশা কিনে ভাড়ায় চালাতে দিতে পারবো। পরিবারকে নিয়ে আগের চেয়ে ভালো থাকতে পারবো”।
এই করোনা পরিস্থিতিতে মজার ইশকুল আরো বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালন করেছে সুবিধাবঞ্চিত পরিবার, পথশিশু ও ছিন্নমূল মানুষের জন্য। ২৪ মার্চ ২০২০ থেকে ত্রাণ প্রদান কার্যক্রম শুরু করে এখন পর্যন্ত প্রায় ১৪০০ পরিবারকে ১ মাসের খাদ্য উপকরণ প্রদান, ৫০,০০০ পথশিশু ও ছিন্নমূল মানুষকে রান্না করা খাবার প্রদান, ১,০০০ পিস সাবান/হ্যান্ড স্যানিটাইজার, ১০,৫০০ পিস সার্জিক্যাল মাস্ক, ৩০টি পিপিই বিতরণ করা হয়েছে।
এছাড়াও মজার ইশকুল, ইসাবেলা ফাউন্ডেশন ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সাথে যৌথ উদ্যোগে ৪০ জন পথশিশুর শেল্টারে থাকার ব্যবস্থা করেছে। পুরো কার্যক্রম সফলভাবে পরিচালনা করতে অর্ধ-শতাধিক স্বেচ্ছাসেবী ঝুঁকি নিয়ে ৩০,০০০+ ঘণ্টা কাজ করেছে মাঠ পর্যায়ে।