কোভিড-১৯ চিকিৎসায় সফলতা আনতে পারে বাংলাদেশের অ্যালার্জি অ্যাজমা এন্ড এনভায়রমেন্টাল রিসার্চ ইন্সটিটিউটের (প্রাইভেট) প্রধান বিজ্ঞানী এবং সভাপতি ডা. এম এ হাসানের গবেষণা।
তার গবেষণায় দেখা যায়, টেনোফোভির এবং ফ্যাভিপিরাভির একত্রে ব্যবহারের ফলে ৫০ থেকে ৭০ বছর বয়স্ক রোগীরা সর্বোচ্চ ৯ দিন সময়ের ব্যবধানে সুস্থ হয়ে উঠেছেন। এছাড়াও চার পাঁচ দিনের মধ্যে ২৫ থেকে ৫৫ বছর বয়স্ক রোগীরা ঐ ওষুধে সেরে উঠেছেন।
বিশিষ্ট অ্যাজমা ও ইমার্জিং ডিজিজ গবেষক ডা. এম এ হাসান জানান, পৃথিবীর আরো অনেক চিকিৎসা বিজ্ঞানীর মত করোনা মহামারির শুরু থেকেই এর চিকিৎসা নিয়ে গবেষণা করছেন তিনি। এর চিকিৎসা ও ভাইরাস প্রতিরোধে সার্স, মার্স এবং ইনফ্লুয়েঞ্জার ওষুধ নিয়েও গবেষণা চালান তিনি। কোভিড-১৯ প্রতিরোধে কার্যকর ভ্যাকসিন পাওয়ার আগে মার্চের শেষের দিকে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় বাস করা এবং বেশি ঝুঁকিতে থাকা সম্ভাব্য তথা আক্রান্ত রোগীদের জন্য আরো কিছু অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ বাছাই করা হয়। ওই ওষুধগুলোর মধ্যে রয়েছে রিবাভিরিন, অসেল্টামিভির এবং ফ্যাভিপিরাভির। এছাড়া বিশেষ বিবেচনায় টেনোফোভির নামক একটি ওষুধকে নির্বাচন করা হয়।
এমন গবেষণায় এইচআইভি ও বি হেপাটাইটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মাঝে কোভিড-১৯ এর খুব কম সংক্রমণ লক্ষ্য করেন এইচআইভি ও সার্স সংক্রান্ত গবেষণায় অভিজ্ঞ ডা. এম এ হাসান। এ প্রেক্ষিতে গত এপ্রিলের শুরু থেকে এইচআইভি এবং হেপাটাইটিস বি রোগীদের জন্য ব্যবহৃত অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ টেনোফোভির নিয়ে পরীক্ষা চালান ডা. এম এ হাসান।
নিয়মিত টেনোফোভির পাচ্ছে এমন কিছু ছোট গ্রুপের মাঝে দেখা যায় ওই ওষুধ নেয়া কোনো রোগীই করোনায় আক্রান্ত হয়নি। টেনোফোভির ওষুধটিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এইচআইভি এবং হেপাটাইটিস বি রোগীদের চিকিৎসার জন্য আগেই অনুমোদন দিয়েছে।
গবেষক ডা. এম এ হাসান করোনা রোগীদের চিকিৎসায় টেনোফোভির ও ফ্যভিপিরাভির এবং টেনোফোভির ও রিভাভিরিন-এই দুই যুগল ওষুধের কার্যকারিতা নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। ওই গবেষণায় দেখা যায়, দুটো অ্যান্টিভাইরাল যুগলভাবে করোনা রোগীদের চিকিৎসায় বেশী কার্যকর হচ্ছে।
ডা. এম এ হাসানের গবেষণায় দেখা যায়, টেনোফোভির এবং ফ্যভিপিরাভির অথবা টেনোফোভির এবং রিবাভিরিন একত্রে ব্যবহারের ফলে চার-পাঁচ দিনের মধ্যে ২৫ থেকে ৫০ বছর বয়স্ক রোগীরা সুস্থ হয়ে উঠেছেন। এ ছাড়া ৫০ থেকে ৭০ বছর বয়স পর্যন্ত রোগীদের ওই ওষুধে করোনা থেকে সেরে উঠতে ৯-১০ দিন সময় লেগেছে।
২০০২-০৪ সালে এইচআইভি ও সার্স নিয়ে কাজ করেছেন ডা. হাসান। তার কাজ পর্যালোচনা করেন যুক্তরাষ্ট্রের এনআইএআইডি’র প্রধান ড. অ্যানথনি ফাউসি।
ডা. এম এ হাসানের গবেষণাটি আরো পরীক্ষা ও পর্যালোচনার জন্য ২৫ এপ্রিল ২০২০-এ নরওয়ে, নিউজিল্যান্ড এবং বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থায় পাঠানো হয়।
সম্প্রতি নিউজিল্যান্ডের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ড. ডেভিড ক্লার্ক এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নিয়োজিত গবেষক দল এর ফলাফলের বিষয়ে অত্যন্ত ইতিবাচক মন্তব্য পেশ করেছেন।
গত ১৩ জুলাই লিখিতভাবে তারা ডা. এম এ হাসানকে জানিয়েছেন টেনোফোভির কোভিড -১৯ এর সম্ভাব্য চিকিৎসা হিসেবে ভাল তবে এর অ্যান্টিভাইরাল চিকিৎসার ভূমিকা অস্পষ্ট রয়ে গেছে।
এতে এই আবিষ্কারে বাংলাদেশী চিকিৎসক ও বিজ্ঞানির অগ্রণী তথা মৌলিক অবদান প্রমাণিত হয়েছে।
টেনোফোভির ৩০০ মি.গ্রাম. ট্যাবলেট বা পাউডার যা যুক্তরাষ্ট্রে ভ্যারেড (Viread) নামে এবং বাংলাদেশে জাইলোভির নামে পরিচিত।
ডা. এম এ হাসান জানান, দীর্ঘমেয়াদে টেনোফোভির নিরাপদ হলেও এটি ভ্যাকসিনের বিকল্প নয়। তবে ভ্যাকসিন কার্যকর হবার আগে এটি রোগ প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে বিশেষ করে হাইরিস্ক গ্রুপের মধ্যে।