চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

করোনার সঙ্গে বাঁচতে শেখাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা

এক বছরের বেশি সময় ধরে মহামারি করোনা শনাক্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা গোনার পর বিজ্ঞানীরা এখন এর পরবর্তী করণীয়ের দিকে মনোনিবেশ করতে শুরু করেছেন। ধনী দেশগুলো জনসংখ্যার অনুপাতে ভ্যাকসিন প্রয়োগের ফলে সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা হ্রাস করে আনতে পারছে। এখন তাদের লক্ষ্য ‘করোনার সাথে বাঁচতে শেখার পরিস্থিতি তৈরি করা’। লকডাউন এড়িয়ে কীভাবে স্বাভাবিক রোগ হিসেবে এর সঙ্গে চলা যায় সেটাই ভাবার কথা বলছেন গবেষকরা।

জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের করোনাভাইরাস রিসোর্সের সেন্টারের বিশেষজ্ঞ জেনিফার নুজোর কথায় এমনটাই বোঝা যাচ্ছে। তিনি বলছেন, সম্ভবত আমরা হাসপাতালগুলোতে ভর্তি পর্যবেক্ষণের পর্যায়ে পৌঁছাতে পারবো।

তার মতে, হাসপাতালে ভর্তি ও চিকিৎসার বিষয়টা স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার ও অন্য রোগের মতোই সামনে দেখতে হতে পারে।

এই বিশেষজ্ঞের এমন বক্তব্যের কারণ হলো যে, এই ভাইরাসের প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় ঢেউ আসছে। একেক দেশে তা ভয়ংকর রূপ নিচ্ছে। ভাইরাস দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে। নতুন অধিক সংক্রামক ধরন খুব সহজেই ছড়িয়ে পড়ছে। ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট এখন আতঙ্ক ছড়াচ্ছে বিভিন্ন দেশে। তাই শিগগিরই ‘হার্ড ইমিউনিটি’ অর্জনের সম্ভাবনা কম। সেই সাথে ভ্যাকসিন প্রক্রিয়াও দ্রুত গতিতে চলছে।

ব্লুমবার্গের তথ্য মতে, যুক্তরাজ্যের ৪৬ শতাংশ জনগণকে পুরোপুরি ভ্যাকসিনের আওতায় আনা গেছে, যা গ্রীষ্মে পর থেকে করোনার মৃত্যুর সর্বনিম্ন স্তরে নামিয়ে আনতে সহায়তা করবে। এরপরও ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের ভয় দেখা যাচ্ছে দেশটিতে। ভ্যাকসিন নেওয়ার পরও তাই হাসপাতালে ভর্তি বাড়ছে।

সোমবার প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন লকডাউন প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছেন। বাড়িয়েছেন আরো ৪ সপ্তাহ। মূলত সকল নাগরিককে ভ্যাকসিনের আওতায় আনার চেষ্টা থেকে এমন সিদ্ধান্ত। সংক্রমণ হ্রাস করা এবং মৃত্যু কমিয়ে আনাই তার লক্ষ্য। এভাবে ধীরে ধীরে করা গেলে করোনা এক সময় সাধারণ ফ্লু বা মৌসুমী রোগের মতো দেখাবে। ইংল্যান্ডের নীতিনির্ধারকরা এমনটাই মনে করেন।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী ম্যাট হ্যানকক গত সপ্তাহে সংসদে এমনটাই বলেছেন। তিনি বলেন, আমরা সাধারণ ফ্লুর সঙ্গে যেভাবে জীবনধারণ করি, এই ভাইরাসের ক্ষেত্রে তেমনটা করতে হতে পারে।

যদিও বহু দেশ এখনো নিয়মিত করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু গুনছে। সেই সঙ্গে চলছে ভ্যাকসিন কর্মসূচিও। চীন ও তাইওয়ানও করোনার হিসাব রাখছে। যদিও তাইওয়ানে সংক্রমণ শূন্যের কোটায়। সেই সাথে তারা ভ্যাকসিন প্রয়োগ করছে। চীন ইতোমধ্যে ১০০ কোটির বেশি ডোজ ভ্যাকসিন প্রয়োগ করেছে। তবে ভ্যাকসিনের সংকট হলে সামান্য প্রাদুর্ভাব থেকেও বড় রূপ নিতে পারে।

বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা, ভ্যাকসিন প্রয়োগের পরও এই ভাইরাস নতুন নতুন রূপ নিতে পারে। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট আক্রান্ত ব্যক্তিরা আলফা ভ্যারিয়েন্টের চেয়ে বেশি হুমকির মুখে।

সম্প্রতি নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বিজ্ঞানীরা বলেছেন, যদি বিশ্বের বেশির ভাগ অঞ্চলে করোনা অনিয়ন্ত্রিত সংক্রমণ অব্যাহত রাখে, তাহলে তা স্থানীয় রোগে পরিণত হওয়ার পথে রয়েছে। তার মানে দাঁড়াবে, বিশ্বে তার হুমকি সব সময়ই থাকবে। সেক্ষেত্রে এই রোগের সঙ্গে বাঁচতে শেখাকেই প্রাধান্য দিচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।

ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ মার্ক বাগুয়েলিন বলেছেন, আমাদের এখন থেকে নতুন রূপের সত্যতা নিয়ে বাঁচতে হবে, এটি এমন কিছু , যা সর্বদা ঘটবে।