দেশে করোনা সংক্রমণ শনাক্তের এক বছরের মাথায় আজ রোববার শনাক্ত রোগীর সংখ্যা সাড়ে পাঁচ লাখ ছাড়িয়েছে।
এ পর্যন্ত দেশে মোট পাঁচ লাখ ৫০ হাজার ৩৩০ জনের করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। আট হাজার ৪৬২ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর মোট সুস্থ হয়েছেন পাঁচ লাখ তিন হাজার তিন জন।
রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) ডা. নাসিমা সুলতানার সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছিল। দেশে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্তের পর ১৮ মার্চ প্রথম করোনা রোগীর মৃত্যু হয়। আজ পর্যন্ত মোট মৃত্যু আট হাজার ৪৬২ জন। তাদের মধ্যে পুরুষ ছয় হাজার ৩৯৮ জন (৭৫ দশমিক ৬০ শতাংশ) ও নারী দুই হাজার ৬৫ জন (২৪ দশমিক ৪০ শতাংশ)।
এক বছরের মাথায় আজ পর্যন্ত ছয় লাখ ৩০ হাজার ৯৮৫ জনকে কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে। ছাড় পেয়েছেন পাঁচ লাখ ৯৯ হাজার ১৮৫ জন। বর্তমানে কোয়ারেন্টাইনে আছে ৩১ হাজার ৮০০ জন।
এছাড়া এখন পর্যন্ত আইসোলেশনে পাঠানো হয়েছে এক লাখ ৯০৫ জনকে। ছাড় পেয়েছেন ৯১ হাজার ১৯১ জন। বর্তমানে আইসোলেশনে আছেন নয় হাজার ৭১৪ জন।
এখন পর্যন্ত এক বছরে বিমান, সমুদ্র, স্থল বন্দর ও রেল স্টেশনে বিদেশে থেকে আগত যাত্রীদের স্ক্রিনিং করা হয়েছে ১৮ লাখ ৪৫ হাজার ৩৯৫ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, শুরুর দিকে করোনা সংক্রমণ রাজধানীকেন্দ্রিক ছিল। রোগী শনাক্তের হারও কম ছিল। ওই বছরের মে মাসের মাঝামাঝি থেকে সংক্রমণ বাড়তে শুরু করে। আগস্টের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত সেটি ২০ শতাংশের ওপরে ছিল। তারপর থেকে নতুন রোগীর পাশাপাশি শনাক্তের হার কমে যায়। কিন্তু মাস দুয়েক সংক্রমণ নিম্নমুখী থাকার পর গত নভেম্বরের শুরুর দিক থেকে নতুন রোগী ও শনাক্তের হারে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা শুরু হয়।
নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে দৈনিক নতুন রোগী শনাক্তের গড় দুই হাজার ছাড়ায়। গত ১০ ডিসেম্বর থেকে নতুন রোগী শনাক্ত এবং শনাক্তের হার কম। তিন সপ্তাহ ধরে পরীক্ষার তুলনায় রোগী শনাক্তের হার ১০ শতাংশের নিচে। চলতি বছরের অধিকাংশ দিন এক হাজারের কম রোগী শনাক্ত হয়েছে।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের এই নিম্নমুখী ধারার মধ্যেই গত ৭ই ফেব্রুয়ারি থেকে সারাদেশে শুরু হয়েছে কোভিড-১৯ এর গণ টিকাদান কার্যক্রম।
এক বছরে ষাটোর্ধ্ব ৪ হাজার ৭১২ রোগীর মৃত্যু
করোনার এক বছরে এখন পর্যন্ত ষাটোর্ধ্ব চার হাজার ৭১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়াও শূন্য থেকে দশ বয়সী ৩৭ জনের, এগারো থেকে বিশ বয়সী ৬৪ জনের, একুশ থেকে ত্রিশ বয়সী ১৭৩ জনের, ত্রিশোর্ধ্ব ৪২৪ জনের, চল্লিশোর্ধ্ব ৯৫৮ জনের, পঞ্চাশোর্ধ্ব দুই হাজার ৯৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এক বছরে ঢাকা বিভাগে মৃত্যু ৪ হাজার ৭৩৫ রোগী
করোনার এক বছরে ঢাকা বিভাগে চার হাজার ৭৩৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়াও চট্টগ্রাম বিভাগে এক হাজার ৫৫৯ জনের, রাজশাহী বিভাগে ৪৮১ জনের, খুলনা বিভাগে ৫৬৩ জনের, বরিশাল বিভাগে ২৫৪ জনের, সিলেট বিভাগে ৩১১ জনের, রংপুর বিভাগে ৩৬৩ জনের এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ১৯৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।
করোনা প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়েছে
করোনা শ্বাসতন্ত্রের একটি ভাইরাস, তাই হার্ড ইমিউনিটি, ক্রস ইমিউনিটি বা যে কোনো উপায়েই হোক আমরা প্রতিরোধ করার ক্ষমতা তৈরি করেছি-এমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ও সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মোশতাক হোসেন চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ‘‘সংক্রমণের হার যদি নিম্নমুখী রাখতে হয় তাহলে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে, করোনাভাইরাসের রোগী শনাক্ত হওয়ার সাথে সাথে তাকে আইসোলেশনে রেখে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। তার যোগাযোগে আসা মানুষদের কোয়ারেন্টিন করা, এসব বিষয়ে সর্বোচ্চ মনোযোগ দিতে হবে, যেন সংক্রমণ পুনরায় ছড়াতে না পারে।’’
স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এম এ আজিজ চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ‘‘আমরা যদি স্বাস্থ্যবিধি আর মাস্ক ব্যবহার করতে পারি, ভ্যাকসিন গ্রহণ করি; তাহলে দেশ থেকে কোভিড নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি নির্মূল সম্ভব।’’