চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

করোনামুক্ত দেশগুলো কতটা লাভবান?

বিশ্বের প্রায় সব দেশের মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম মাত্র ১০টি দেশ। যে দশটি দেশ এখনো করোনামুক্ত: প্যালাও, মাইক্রোনেশিয়া, মারশ্যাল আইল্যান্ড, নাওরু, কিরিবাতি, সলোমন আইল্যান্ড, টুভালু, সামোয়া, ভানুয়াতু, টংগা। মহামারির সময়ে ব্যতিক্রমী এই দেশগুলোতে এখন কী চলছে?

এই দশ দেশের একটি প্যালাও। ১৯৮২ সালে সেখানে প্যালাও হোটেল চালু করা হয়। সমুদ্রবেষ্টিত দেশটির অর্থনীতি সে সময় থেকে পর্যটন শিল্প দিয়েই চাঙ্গা হয়েছে। ২০১৯ সালে দেশটিতে ৯০ হাজার পর্যটক সফর করেছেন। যে সংখ্যা দেশটির মোট জনসংখ্যার ৫ গুণ। আইএমএফ এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্যালাও এর জিডিপির ৪০% অর্জিত হয়েছে পর্যটন শিল্প থেকে। কিন্তু সেই পরিস্থিতি ছিলো করোনা মহামারীর আগে।

গত মার্চ থেকে প্যালাও এর সীমান্ত বন্ধ রয়েছে। দেশটির একজন নাগরিকও করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়নি।  কিন্তু কোভিড১৯ দেশটিকে তছনছ করে দিয়েছে।

মার্চ মাস থেকেই বন্ধ আছে ‘দ্যা প্যালাও হোটেল’।  কেবল হোটেলটি নয়, রেস্তোরাঁগুলোও বন্ধ আছে।  সুভেনির শপগুলো বন্ধ। একটিমাত্র হোটেল খোলা আছে বিদেশফেরত নাগরিকদের কোয়ারেন্টাইনে রাখার জন্য।

প্যালাও হোটেলের ম্যানেজার এবং মালিকদের একজন ব্রায়ান লী।  তিনি জানালেন মহামারির আগে হোটেলের ৫৪টি কক্ষের বেশীরভাগেই পর্যটক থাকতেন। ছোট্ট এই দেশেটির নাগরিকরা তো আর হোটেলে থাকতে আসবেন না।

হোটেলটিতে কর্মী সংখ্যা ২০ জন। তাদের সবাইকে বেতন দেয়া হচ্ছে। তবে তাদের কর্মঘণ্টা কমানো হয়েছে। ব্রায়ান জানান, এ পরিস্থিতি এভাবেই থাকলে বড়জোর ৬ মাস টিকে থাকা সম্ভব। এর মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে তাকে সব বন্ধ করে দিতে হবে।

এসব কিছুর জন্য ব্রায়ান সরকারকে দায়ী করছেন না। সরকার তার নাগরিকদের আর্থিক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। নানান পদক্ষেপ নিয়ে নাগরিকদের করোনাভাইরাসমুক্ত রেখেছে।

সম্প্রতি সরকার ঘোষণা দিয়েছে, আগামী এক সেপটেম্বর থেকে আকাশপথে জরুরি যোগাযোগ আবার চালু করা হবে।

ব্রায়ান মনে করেন, এখন সবকিছু চালু করা উচিত। নিউজিল্যান্ড বা এ ধরণের দেশগুলোর সঙ্গে আকাশ পথে যোগাযোগ শুরু করা যেতে পারে। তা ছাড়া দেশটির কারোই বেঁচে থাকার উপায় থাকবে না।

করোনাভাইরাসমুক্ত আরেকটি দেশ মারশ্যাল আইল্যান্ড। প্যালাও এর মতো এ দেশটিও করোনা প্রভাবমুক্ত থাকতে পারেনি। গত কয়েক মাসে এ দেশেরও পর্টন শিল্প ধ্বংসের মুখে। দেশটির ৭শ’র বেশী চাকরী থেকে কর্মী ছাঁটাই হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এসব চাকরীর ২৫৮টি পর্যটন সেক্টরে।

মহামারির সময়ে বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কেবল পর্যটন শিল্প ধ্বংস হচ্ছে তা নয়।  মারশ্যাল আইল্যান্ডের অর্থনীতি প্যালাও এর মতো পর্যটন নির্ভর নয়। তাদের সবচেয়ে বড় শিল্প মাছ শিকার। কোভিডমুক্ত রাখতে অন্য দেশের জাহাজগুলোকে সেদেশের বন্দরে ভীড়তে অনুমতি দেয়া হয়নি। জ্বালানী তেলবাহী বা অন্য পণ্যবাহী জাহাজও তাদের বন্দর ব্যবহারের অনুমতি পায়নি।

স্বাভাবিকভাবেই এসব নিষেধাজ্ঞার প্রভাব পড়েছে অর্থনীতিতে। মাছ রপ্তানী ৫০% কমে গিয়েছে।

মূলকথা হলো, করোনাকে সীমানার বাইরে রাখা সম্ভব হচ্ছে কিন্তু এর সঙ্গে যুদ্ধে টিকে থাকা যাচ্ছে না। কোন না কোনভাবে করোনা আঘাত হেনে যাচ্ছে। সীমানা বন্ধ করার পর দরিদ্র দেশগুলো আরো দরিদ্র হচ্ছে। তারপরও এসব দেশের অনেক নাগরিক চায় না সীমানা খুলে দেয়া হোক। তারা আরো দীর্ঘ সময় আর্থিক কষ্ট মেনে চলতে রাজি আছেন। তারপরও করোনায় আক্রান্ত হতে চান না।