স্কুলের ঘণ্টা বাজলো। মিষ্টি শব্দে শুরু হলো স্কুলের সকাল। মিস হা তার নির্ধারিত ইংরেজি ক্লাস নিতে ক্লাস রুমে গেলেন। কিন্তু শ্রেণীকক্ষে নেই কোনো শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থীশূন্য ক্লাসরুমে ল্যাপটপের সামনে বসে একে একে সবার উপস্থিতি নিতে থাকলেন হা- ‘সুবিন, উপস্থিত আছো?’
জবাব মিললো সুবিনের কাছ থেকে, সামাজিক বিচ্ছিন্নতার ছুটি কাটাচ্ছি। যেহেতু কয়েক সপ্তাহ থেকে ঘরেই সময় কাটাচ্ছি তাই আমার জীবনযাপনও ধীরগতির ও অলস হয়ে গেছে। এই বলেই হাসলেন সুবিন। হাইস্কুলে এটাই তাদের প্রথম দিন, শিক্ষকের সঙ্গে প্রথম দর্শনে সত্যি কথাটাই বললেন সুবিন।
সাউথ কোরিয়ার হানকুক একাডেমির ফরেন স্টাডিজের ইংলিশ ডিপার্টমেন্টের প্রধান মিস হা বলেন, ক্লাসের আগে আগে খুব উদ্বিগ্ন লাগছিলো। এই ধরনের প্রযুক্তিতো আগে ব্যবহার করিনি। তবে যতটা খারাপ ভেবেছিলাম ততটাও না। এভাবে কখনো ভালোমতো ক্লাস নেওয়া যায় না তা ঠিক। কিন্তু এই ধরনের পরিস্থিতিতে এটি একটি ভালো সমাধান।
বিশ্বের সবচেয়ে কঠিন পড়াশোনার পদ্ধতি সাউথ কোরিয়াতে। স্কুলের পড়া মুখস্থ করার জন্য প্রায় শিক্ষার্থীদের রাত জেগে পড়াশোনা করতে হয়, বিশেষ করে তাদের যারা কলেজের প্রবেশপরীক্ষায় অংশ নিতে চায়। কলেজিয়েট স্কলাসটিক অ্যাপটিটিউড টেস্ট আটঘণ্টার একটা ম্যারাথন পরীক্ষা যেটাকে জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা হিসেবে ধরা হয় দেশটিতে।
করোনাভাইরাসের কারণে মন্ত্রণালয় এই পরীক্ষা কয়েক সপ্তাহ পিছিয়ে ডিসেম্বরে হওয়ার ঘোষণা দিয়েছে কিন্তু তারপরও শিক্ষার্থীরা বেশ চাপ অনুভব করছেন। গত দুই সপ্তাহে নিয়মিত ব্রিফিং রুম থেকে কোরিয়ান সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল জনসাধারণকে সামাজিক বিচ্ছিন্নতা নির্দেশনা মেনে চলার কথা বলেছে। সেখানেও শিশু ও তাদের পড়াশোনার কথা ভাবতে বলা হয়েছে।
কিন্তু দেশটিতে ছোট ছোট করোনাভাইরাস সংক্রমণের ক্লাস্টার দেখা যাচ্ছে। সিউলের এক হোস্টেস বারেও করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা গেছে। দায়েগু হসপাতালের পাশে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ থেকে আসা অনেকের করোনা সংক্রমণ নিশ্চিত হওয়া গেছে।
দেশটিতে স্কুল শুরু হওয়া এরই মধ্যে পাঁচ সপ্তাহ পিছিয়েছে। সেটা আর পেছানো যাবে না। তাই অনলাইনে পাঠদানই একমাত্র উপায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করে এরই মধ্যে বাহবা পেয়েছে দেশটি। সেসব সত্ত্বেও আবার ক্লাসরুম খুলে দিলে ঝুঁকি অনেক বেশি বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা প্রবল।
দেশটির প্রধানমন্ত্রঅ চুং সি কুন বলেন, অনলাইনে ক্লাস নেওয়াটা এমন একটি পথ যেখানে আমরা কখনো হাঁটিনি। বরং আমরা নতুন পথ তৈরি করছি। দূরশিক্ষণ ভালো চলুক সেই প্রচেষ্টা চালাচ্ছি। করোনা মহামারী নিয়ন্ত্রণে রেখে শিশুরা যেন আবার স্কুলে যেতে পারে সেই চেষ্টা চালাচ্ছি।
প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত সাউথ কোরিয়াতেও ভার্চুয়াল ক্লাস একটি চ্যালেঞ্জ। সরকার এরই মধ্যে নিম্নআয়ের পরিবারগুলোকে ইন্টারনেট বিল দিয়ে সাহায্য করেছে। কিন্তু তাদের স্মার্ট ডিভাইস আছে কিনা সেটাই তো ভাবার বিষয়। রোল কল থেকে জানা যায় ২২৩,০০ মানুষের অনলাইন স্কুল করার মতো কোনো প্রযুক্তি নেই। অনেক দাতা ট্যাবলেট, পোর্টেবল ইন্টারনেট ডিভাইস প্রদান করেছে তাদের। অনেকে খাবারও পার্সেল করে পাঠাচ্ছে যেন শিক্ষার্থীরা পড়াশোনায় মন দিতে পারে।
গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের উহান শহর থেকে ছড়িয়ে পড়ে করোনাভাইরাস। বর্তমানে সারাবিশ্বে এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ১৬ লাখ। আর প্রাণ হারিয়েছে প্রায় ৯৬ হাজার মানুষ।