উত্তরবঙ্গের প্রত্যন্ত অঞ্চলের ১০০ লোকসঙ্গীত শিল্পী পরিবারের মধ্যে উপহারসামগ্রী বিতরণ করেছে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি।
উত্তরবঙ্গের রংপুর বিভাগের লালমনিরহাট, আদিতমারি, কুড়িগ্রাম, চাপারহাট, কালীগঞ্জ, হাতিবান্ধা, নীলফামারি, নওদাবাস ও পাটগ্রামের ১০০ লোকসঙ্গীত শিল্পী পরিবারের হাতে ১৩ ও ১৪ মে এসব উপহারসামগ্রী তুলে দেওয়া হয়।
২০০৪ সালে বিশিষ্ট নরওয়েজীয় লোকসঙ্গীত গবেষক ও লেখক ওয়েরা সেথের বাংলাদেশে এসে আবহমান বাংলার ভাওয়াইয়া, ভাটিয়ালি, বাউল ও মরমিয়া গান শুনে মুগ্ধ হয়ে লুপ্তপ্রায় এই সঙ্গীত ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য উত্তরবঙ্গের ৩টি জেলায় ‘মায়ের তরী’ নামে ২৬টি গুরুগৃহ স্থাপন করেন, যেখানে প্রবীণ শিল্পীরা যারা বংশ পরম্পরায় এই সঙ্গীতের ধারা প্রবহমান রেখেছেন তারা নবীনদের গান ও বাদন শেখান। লোকসঙ্গীতের ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ উত্তরবঙ্গের শত শত কণ্ঠ ও যন্ত্রসঙ্গীত শিল্পীর জীবিকার একমাত্র বা প্রধান অবলম্বন হচ্ছে সঙ্গীত, যা করোনাভাইরাস সংক্রমণ মহামারীর জন্য লকডাউনের কারণে সম্পূর্ণ বিপর্যন্ত হয়ে পড়েছে।
তিন সপ্তাহ আগে নির্মূল কমিটির স্থানীয় নেতৃবৃন্দ ‘মায়ের তরী’র প্রায় তিনশ শিল্পী পরিবারের মধ্যে থেকে একশ’ জনের তালিকা কেন্দ্রে পাঠিয়ে দ্রুত ত্রাণ সাহায্যের আবেদন জানিয়েছিলেন। গত সপ্তাহে লালমনিরহাট জেলা শাখার পক্ষ থেকে জীবিকা-বিপর্যস্ত এই শিল্পীদের তালিকা বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকদেরও পাঠানো হয়েছে।
দুর্দশাগ্রস্ত লোকসঙ্গীত শিল্পীদের জন্য সংগঠনের উপহার হিসেবে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি জরুরি ভিত্তিতে এক লক্ষ দশ হাজার টাকা বরাদ্দ করেছে। প্রতিটি শিল্পী পরিবারের জন্য নির্মূল কমিটির উপহার সামগ্রীর ভেতর রয়েছে- দশ কেজি চাল, এক কেজি ডাল, চার কেজি আলু, এক লিটার ভোজ্য তেল, এক কেজি গুঁড়া দুধ, এক কেজি চিনি, দুই প্যাকেট সেমাই, এক প্যাকেট বিস্কুট ও একটি সাবান।
আগামী সপ্তাহে দিনাজপুরের আদিবাসী সাঁওতালদের ভেতর ত্রাণ বিতরণ করবে নির্মূল কমিটি। ইতিমধ্যে সংগঠনের বিভিন্ন শাখা জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে দুই হাজারেরও অধিক দুর্গত পরিবারের ভেতর ত্রাণ বিতরণ করেছে।
প্রত্যন্ত অঞ্চলের জীবিকা-বিপর্যস্ত লোকসঙ্গীত ও কারুশিল্পীসহ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর দুর্গত মানুষের জন্য সরকারের বিশেষ প্রণোদনা ঘোষণার দাবি জানিয়েছে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি।