করোনাভাইরাস এর কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে গভীর মন্দা এবং তা ধীর পুনরুদ্ধারের আশঙ্কার কথা জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল আইএমএফ।
করোনা মহামারির কারণে বিশ্ব অর্থনীতির ক্ষতি ১২ ট্রিলিয়ন ডলারে গিয়ে দাঁড়াবে বলে আভাস দিয়েছে আইএমএফের প্রধান অর্থনীতিবীদ গীতা গোপিনাথ।
এর আগে এপ্রিলে সংস্থাটির পক্ষ থেকে এক পূর্বাভাসে বলা হয়েছিল করোনার কারণে ২০২০ সালে বিশ্ব অর্থনীতি ৩ শতাংশ সংকুচিত হবে। এখন তারা তা সংশোধন করে বলছে, করোনায় চলতি বছরে বিশ্ব অর্থনীতির সংকোচন হবে ৪ দশমিক ৯ শতাংশ।
বুধবার নতুন করে প্রকাশিত এক পূর্বাভাসে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।
এছাড়া আইএমএফ জানিয়েছে, ২০২১ সালে প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৮ শতাংশ থেকে নেমে ৫ দশমিক ৪ শতাংশে চলে আসতে পারে।
করোনা মহামারি পর অর্থনৈতিক মন্দার বিষয়ে সতর্ক করে দিয়ে আইএমএফ জানিয়েছে, করোনায় সামাজিক দুরত্ব ও অন্যান্য সুরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে ক্রমাগত হতাশা বৃদ্ধি পাচ্ছে। করোনায় মোকাবিলায় বিভিন্নি দেশে লকডাউনের সময় বর্ধিত করছে ফলে প্রবৃদ্ধিতে বড় ধরণের প্রভাব ফেলছে।
আইএমএফ বলছে, বিশ্বের ২০১৯ সালের অর্থনৈতিক অবস্থায় ফিরে আসতে আরও দুই বছর সময় লাগবে। সরকারগুলোকে তাদের ভঙ্গুর অর্থনীতির আর্থিক সহায়তা অপসারণের বিষয়ে সতর্ক হতে হবে।
তারা বলছে, করোনার কারণে চলতি অর্থবছরে বিশ্ব অর্থনীতিতে যে হারে মন্দা দেখা দেবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল, প্রথম ছয় মাসে প্রকৃত ক্ষতির পরিমাণ এর চেয়ে আরও অনেক বেশি। ধীরে ধীরে অর্থনীতির গতি ফিরবে।
বিশ্ব অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির আপডেটের জন্য ভার্চুয়াল প্রেস কনফারেন্সে গীতা গোপীনাথ বলেন, করোনার এই সময় উচ্চ পর্যায়ের অনিশ্চয়তাসহ উর্ধ্ব ও নিম্নমুখী ঝুঁকি দিয়ে ঘিরে রেখেছে। এ পরিস্থিতিতে উর্ধ্বমুখির ক্ষেত্রে কেবল ভালো সংবাদ হচ্ছে করোনার ভ্যাকসিন, চিকিৎসা দ্রুত অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে সহায়ক হবে।
অন্যদিক থেকে, ভাইরাসের সংক্রমণ আরও বেড়ে গেলে আর্থিক সঙ্কট আরো বৃদ্ধি পেতে পারে।
গোপীনাথ বলেন, বর্তমান মন্দা ১৯৩০ এর দশকে বিশ্ব অর্থনৈতিক আয়ের প্রায় ১০ শতাংশ ক্ষতির সাথে তুলনা করা যায়।
আইএমএফ বলছে, বিশ্বের কোনো বৃহৎ অর্থনীতিই মহামারির থেকে রক্ষা পাবে না। সর্ববৃহৎ অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিও চলতি বছর ৮ শতাংশ সংকুচিত হবে। এ ছাড়া শুধু ইউরো ব্যবহার করে, এমন দেশগুলোর সংকোচন হবে ১০ শতাংশের বেশি। যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি সংকুচিত হবে ১০ দশমিক ২ শতাংশ। ফ্রান্সের বেলায় ১২ দশমিক ৫ শতাংশ ও ইতালির ক্ষেত্রে ১২ দশমিক ৮ শতাংশ সংকুচিত হতে পারে। জাপানের উৎপাদন ৫ দশমিক ৮ শতাংশ কম হবে। চীনের অর্থনীতি ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি দেখতে পারে।
এশিয়ার উদীয়মান ও উন্নয়নশীল দেশের মধ্যে ভারতের অর্থনীতি সাড়ে ৪ শতাংশ সংকুচিত হবে বলে জানিয়েছে আইএমএফ। আসিয়ান ফাইভভুক্ত (ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপিন্স, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ড) দেশগুলোর অর্থনীতি সংকুচিত হবে ২ শতাংশ।