সরকারি ল্যাবগুলোতে করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষার জন্য ‘ফি’ নির্ধারণ করা হলে লাভের চেয়ে লোকসান বেশি হবে বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তারা মনে করেন, করোনা প্রতিরোধে বেশি বেশি টেস্ট করানোর বিকল্প নেই। কিন্তু নমুনা পরীক্ষা ফি নির্ধারণ করলে টেস্টের প্রবণতা অনেক কমে যাবে, যদিও আমাদের দেশে প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম টেস্ট করানো হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে করোনা বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, “অনেক মানুষের টেস্ট করানোর সমর্থ্য নেই। এই সিদ্ধান্ত নেয়া হলে বিষয়টা ঠিক হচ্ছে না। অথচ বেশি বেশি টেস্ট করানো অবশ্য কর্তব্য।”
আমাদের দেশে সরকারি ল্যাবগুলোতে এখন পর্ন্ত বিনামূল্যে টেস্ট করানোর পরও টেস্ট করানোর হার লাখে একশ’রও কম। অথচ প্রতিবেশী দেশ ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, শ্রীলঙ্কা, ভুটান, নেপালে জনসংখ্যা অনুপাতে টেস্টের হার আমাদের তুলনায় অনেক বেশি বলে উল্লেখ করেন অধ্যাপক নজরুল।
অধ্যাপক নজরুল’র মতে, “করোনা সংক্রমণ টেস্ট করানো তো কোন আয়ের বিষয় না। করোনা সংক্রমণের হার জানার জন্য বেশি বেশি টেস্ট খুবই দরকার। আর এটা নিশ্চিত করা সরকারেরই দায়িত্ব। জনগণ নিজের টাকা খরচ করে সরকারকে তথ্য দিবে সেটা ঠিক না।”
অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, টেস্ট করানোর জন্য ফি নির্ধারণ সরকারের চিন্তা ও পরিকল্পনার দৈন্য।
করোনা মহামারীতে বাংলাদেশসহ সারাবিশ্ব যখন মহা সঙ্কটে তখন নিজের ও চারপাশের মানুষকে নিরাপদ রাখার জন্য জন্য বেশি বেশি করোনা সংক্রম টেস্ট করা খুবই জরুরি বলে মন্তব্য করেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী। তিনি মনে করেন, এ পরিস্থিতিতে করোনা পরীক্ষায় ফি নির্ধারণ যুক্তিহীন ও অগ্রহণযোগ্য।
ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, “করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে বেশি বেশি টেস্টের চেয়ে সহজ উপায় আর নেই। এখন করোনা পরীক্ষায় ফি নির্ধারণ করলে বেশীরভাগ সংক্রমিত মানুষ টেস্ট করাতে নিরুৎসাহিত বোধ করবেন। সংক্রমণের পর যার খুব বেশি শারিরীক কষ্ট হচ্ছে না তিনি আর টেস্ট করাতে আগ্রহী হবেন না। এতে সংক্রমণ বহুগুণ বাড়বে। লাভের চেয়ে ক্ষতি হবে বেশি।”
তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, “টেস্ট না করানোর ফলে সংক্রমণ বৃদ্ধিতে রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাবে। হাসপাতালগুলোতে রোগীর ভীড় বাড়বে। বেশি বেশি ক্রিটিক্যাল রোগীর জন্য আইসিইউ দরকার হবে। কেউ কেউ হয়তো চিকিৎসার অভাবে মারা যাবেন। এইসব রোগীর চিকিৎসা খরচ যোগাতে যেয়ে টেস্টিং এ যা আয় হবে তার চেয়ে বহুগুণ অর্থ খরচ হয়ে যাবে।”
এসব ক্ষেত্রে সচেতন নাগরিকদের মতাতম সরকার গ্রহণ না করলে অনেক বড় মূল্য দিতে হবে। বাংলাদেশ এই মহামারীতে ইতোমধ্যে অনেক মূল্য দিয়েছে। করোনাভাইরাস ইস্যুতে সরকারের যা করার ছিলো তা না করে যা করার দরকার নেই সেসব কাজ করছে, এতে কারো কল্যাণ হবে না বলে মন্তব্য করেন ডা. লেলিন চৌধুরী।
কোভিড-১৯ বা করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা সরকারিভাবে এতদিন বিনামূল্যে করা হলেও সেটা আর বিনামূল্যে থাকছে না বলে শনিবার গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। ঠিক কবে থেকে করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষার জন্য ফি দিতে হবে এবং ফি এর পরিমাণ কত হবে, সে বিষয়ে জানতে ফোনে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলা সম্ভব হয়নি।