দেশে কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের ৯০তম দিন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছেন ২১ থেকে ৩০ বছর বয়সীরা। এদের আক্রান্তের হার ২৮ শতাংশ। তরুণেরা বেশি আক্রান্ত হলেও মৃত্যুর হারে এগিয়ে ৬০ বছরের বেশি বয়সীরা।
আক্রান্তের দিক থেকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্থানে রয়েছেন ৩১ থেকে ৪০ বছর বয়সীরা। তাদের আক্রান্তের হার ২৭ শতাংশ। কারণ এই বয়সীরা কর্মক্ষেত্রে যাচ্ছে। তাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাচল করতে হবে।
শুক্রবার দুপুরে করোনাভাইরাস বিষয়ক নিয়মিত স্বাস্থ্য বুলেটিনে এসব তথ্য জানান স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা।
করোনা সংক্রমণের পর থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে তিনি এসব তথ্য তুলে ধরেন। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) কাছ থেকে তথ্য নিয়ে এ বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
৪ জুন পর্যন্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে নাসিমা সুলতানা বলেন: ‘লিঙ্গভেদে শনাক্তের হার পুরুষ ৭১ শতাংশ এবং নারী ২৯ শতাংশ। বয়স বিবেচনায় ৬০ বছরের বেশি বয়সী ৭ শতাংশ, ৫১ থেকে ৬০ বছরের ১১ শতাংশ, ৪১ থেকে ৫০ বছরের ১৭ শতাংশ, ৩১ থেকে ৪০ বছরের ২৭ শতাংশ, ২১ থেকে ৩০ বছরের ২৮ শতাংশ, ১১ থেকে ২০ বছরের ৭ শতাংশ এবং ১ থেকে ১০ বছরের মধ্যে ৩ শতাংশ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।’
এ বিষয়ে তিনি বলেন: ‘২১ থেকে ৩০ বছর বয়সীরা সবচেয়ে বেশি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তারপরই আক্রান্তের দিক থেকে এগিয়ে রয়েছেন ৩১ থেকে ৪০ বছর বয়সীরা। এই বয়সী মানুষদের অনেক বেশি সতর্কতা ও সচেতনতা প্রয়োজন। এই বয়সের মানুষেরা কর্মস্থলে বেশি থাকেন। বাইরে বেশি ঘোরাঘুরি করেন, কাজের জন্যই হোক বা অন্য কারণেই হোক। যেহেতু তরুণ বয়স, তারা অনেক সময় সতর্কতা ও সচেতনতাকে ঠিকভাবে গ্রহণ করেন না। এ জন্য ২১ থেকে ৩০ এবং ৩১ থেকে ৪০ বছর বয়সীদের বিশেষভাবে অনুরোধ করব, আপনারা সতর্ক হোন, সচেতন থাকেন। আপনার কারণে যেন আপনার পরিবারের অন্য কেউ যেন ঝুঁকিতে না পড়ে।’
করোনায় মৃতদের বয়সের হার তুলে ধরে নাসিমা সুলতানা বলেন: ‘১ থেকে ১০ বছর বয়সীদের মৃতের হার দশমিক ৮২ শতাংশ, ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে ১ দশমিক ৪৯ শতাংশ, ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ৩ দশমিক ৪ শতাংশ, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ৮ দশমিক ২৯ শতাংশ, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ১৭ দশমিক ৩৯ শতাংশ, ৫১ থেকে ৬০ বয়সীদের ২৯ দশমিক ৬২ শতাংশ এবং ৬১ বছরের বেশি বয়সীদের মৃত্যুর হার ৩৮ দশমিক ৯৯ শতাংশ।’
তিনি বলেন: ‘মৃত্যুর হার বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, ৬০ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যেই মৃত্যুর হার বেশি। কাজেই এই বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষদেরকে বিশেষভাবে অনুরোধ করব, আপনারাও অনেক বেশি সচেতন থাকবেন।’
বুলেটিনে বলা হয়: গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনার পরীক্ষার ভিত্তিতে শনাক্তের হার ২০ দশমিক ৭ শতাংশ। এ পর্যন্ত রোগী শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ২১ দশমিক ২০ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৩৪ শতাংশ।
গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে নেয়া হয়েছে আরও ৩৬৫ জনকে এবং বর্তমানে আইসোলেশনে রয়েছেন ছয় হাজার ৯৪৬ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশন থেকে ছাড় পেয়েছেন ১৭৩ জন এবং এ পর্যন্ত ছাড় পেয়েছেন তিন হাজার ৮৪৭ জন।
তিনি বলেন: দেশে মোট আইসোলেশন শয্যা রয়েছে ১৩ হাজার ২৮৪টি। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকায় সাত হাজার ২৫০টি এবং ঢাকার বাইরে বিভিন্ন হাসপাতালে ছয় হাজার ৩৪টি শয্যা রয়েছে। সারাদেশে আইসিইউ শয্যার সংখ্যা ৩৯৯টি এবং ডায়ালাইসিস ইউনিট রয়েছে ১১২।
গত ২৪ ঘণ্টায় হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক মিলিয়ে কোয়ারেন্টাইনে নেয়া হয়েছে দুই হাজার ২৪৫ জনকে। এ পর্যন্ত কোয়ারেন্টাইনে নেয়া হয়েছে দুই লাখ ৯৭ হাজার ৪৩৩ জনকে। গত ২৪ ঘণ্টায় কোয়ারেন্টাইন থেকে ছাড় পেয়েছেন দুই হাজার ৪৯৫ জন। এ পর্যন্ত মোট ছাড় পেয়েছেন দুই লাখ ৪০ হাজার ১১৪ জন। বর্তমানে হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক মিলিয়ে কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন ৫৭ হাজার ৩১৯ জন।
দেশের ৬৪ জেলা-উপজেলা পর্যায়ে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনের জন্য ৬২৯টি প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে সেবা দেয়া যাবে ৩১ হাজার ৯৯১ জনকে।