জুন মাসের প্রথম ১৮ দিনেই করোনাভাইরাসের সংক্রমণে মোট আক্রান্ত ও মোট মৃতের অর্ধেক রোগী শনাক্ত হয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত শনাক্তের সংখ্যা ৫২ হাজার ৭৬০ জন এবং মৃতের সংখ্যা ৬৭১ জনে।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)-এর তথ্যমতে, দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিশ্চিত হওয়ার পর ইতোমধ্যে ১০৩ দিন অতিবাহিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১০৩তম দিন) ৩ হাজার ৮০৩ জন আক্রান্ত, বুধবার (১০২তম দিন) ৪ হাজার ৮ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে, যা ছিল একদিনে সর্বোচ্চ।
দেশে সংক্রমণের শুরু থেকে এ পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ২ হাজার ২৯২ জনে। একই সময়ে দেশে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ১ হাজার ৩৪৩ জনের। আক্রান্ত এবং মৃতের প্রায় অর্ধেক রোগী শনাক্ত হয়েছে চলতি মাসের প্রথম ১৮ দিনে। এই সময়ে আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ৫২ হাজার ৭৬০ জন এবং মৃত্যু হয়েছেন ৬৭১ জনের। এই সময়ে সুস্থ হয়েছেন ২৯ হাজার ৫৬৭ জন।
আইইডিসিআরের তথ্যানুযায়ী, দেশে প্রথম ১০০ রোগী শনাক্ত হয় প্রথম ২৮ দিনে, অর্থাৎ ৬ এপ্রিল। পরবর্তী ৮ দিনে (১৪ এপ্রিল) এই সংখ্যা এক হাজারে পৌঁছায়। এর ১৯ দিন পর অর্থাৎ ৩ মে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়ায় ১০ হাজারে। এরপর ১৮ মে রোগীর সংখ্যা দাঁড়ায় ২৫ হাজারে। গত ১ জুন এই সংখ্যা ৫০ হাজারে পৌঁছায়। আর ১৭ জুন পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯৮ হাজার ৪৮৯ জনে।
আরও জানা যায়, ৫ এপ্রিল পর্যন্ত মৃত্যুর ঘটনা ছিল অনিয়মিত। পরবর্তী সময়ে দেশে করোনায় মৃত্যু যেন প্রতিদিনের একটি স্থায়ী ঘটনায় পরিণত হয়েছে। এখন পর্যন্ত সরকার করোনাভাইরাস সংক্রমণে ১ হাজার ৩০৫ জনের মৃত্যুর কথা নিশ্চিত করেছে। এর মধ্যে চলতি মাসের প্রথম ১৭ দিনে মৃত্যু হয়েছে ৬৩৩ জনের, যা মোট মৃত্যুর প্রায় অর্ধেক। গত ১৮ মার্চ প্রথম রোগীর মৃত্যু ঘটে।
এরপর ৬ এপ্রিল মৃতের সংখ্যা ছিল ১২ জন, ১৪ এপ্রিল ৪৬ জন, ৩ মে ১৭৭ জন, ১৮ মে ৩৪৯ জন, ১ জুন ৬৭২ জন, ১১ জুন ১ হাজার জন এবং ১৮ জুন এই সংখ্যা দাঁড়ায় ১ হাজার ৩৪৩ জনে।
আইইডিসিআর বলছে, পয়লা জুন সুস্থ হন ৮১৬ জন, ওই দিন মোট সুস্থ হয়েছিলেন ১০ হাজার ৫৯৭ জন। আজ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মোট সুস্থতার সংখ্যা ৪০ হাজার ১৬৪ জন।
ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব প্রিভেন্টিভ অ্যান্ড সোশ্যাল মেডিসিন (নিপসম)-এর ভাইরোলজিস্ট ডা. মোহাম্মদ জামালউদ্দিন বলেন, আমাদের দেশে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ভাইরাসের রি-প্রোডাকশন নম্বর না করায় এটি বাড়া-কমার হার সঠিকভাবে বলা কঠিন। ভাইরাসের ট্রান্সমিশন স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় থাকলে সেটি বলা সহজ হতো। কিন্তু সংক্রমণ চলাবস্থায় সারা দেশে জনসাধারণের অবাধ যাতায়াতের ফলে সংক্রমণের হার কয়েকগুণ বেড়েছে। তবে ভাইরোলজিক্যাল বিশ্লেষণ করে বলা যায়, বর্তমানে যে হারে সংক্রমণ বাড়ছে, সেটি আগামী এক থেকে দু’সপ্তাহ পরে ধীরে ধীরে কমতে শুরু করবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শনাক্তদের ২৫ শতাংশই উপসর্গহীন তাই তারা না-জেনেই নীরবে ভাইরাসটি ছড়িয়ে দিচ্ছে। তাছাড়া ঈদে বাড়ি গিয়ে বয়স্কদের এই ভাইরাস দিয়ে আসা হয়েছে। ফলে মৃত্যুও বেড়েছে। এটি নিয়ন্ত্রণে এখন যে কোনো উপায়ে ট্রান্সমিশন বন্ধ করতে হবে। তাই সময়ক্ষেপণ না করে লকডাউন অতিদ্রুত কার্যকর করা দরকার। কারণ, রোগী বাড়ছে, মৃত্যু বাড়ছে-প্রতিটি দিনই উদ্বেগের।