আসাদুজ্জামান বাবুল:
রাতারাতি বদলে গেছে গোপালগঞ্জের চিত্র। করোনাভাইরাস আক্রান্তের ভয় উপেক্ষা করে পেটের তাগিদে বেশ কয়েকদিন ধরে নানান পেশার মানুষ ঘর থেকে বের হলেও বৃহস্পতিবার রাস্তা-ঘাটের চিত্র ছিল একবারেই ব্যতিক্রম।
দেশের সকল স্থানে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং হোম কোয়ারেন্টাইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার হতে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করার আইএসপিআরের পূর্ব ঘোষণা পর সকাল থেকেই গোটা জেলার চিত্র বদলে যায়।
সেনাবাহিনীর গোপালগঞ্জ জেলা শহর ছাড়াও মুকসুদপুর, কাশিয়ানী, কোটালীপাড়া ও টুঙ্গিপাড়া উপজেলা শহরগুলোতে সেনাবাহিনী ও পুলিশ বাহিনীকে টহল দিতে দেখা গেছে। জরুরী কোনো কাজ ছাড়া কাউকে ঘর থেকে বের হতে দেখা যায়নি। বিশেষ কাজে ঘর থেকে যারা বের হয়েছে তাদের সকলকে মাস্ক ব্যবহার করতে দেখা গেছে।
ঢাকা- খুলনা মহাসড়কসহ অভ্যন্তরীণ সকল সড়কে সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যদের টহল জোরদার করা হয়েছে।
গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, সভা-সমাবেশ, ওয়াজ মাহফিল, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বন্ধ করে দেয়া হয়েছে দোকানপাট, যানবাহন চলাচল সীমিত করা হয়েছে, মানুষকে পরিষ্কার পরিছন্নতা থাকতে বলা হয়েছে, করোনা আতংকের সুযোগে কেউ যাহাতে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যর দাম বাড়িয়ে না নেয় সেদিকে নজরদারী রাখতে বলা হয়েছে, ন্যায্য মূল্যের চেয়ে অধিক মূল্যে মালামাল বিক্রি করা হলে তার বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
করোনাভাইরাস রোধে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং স্বাস্থ্য বিভাগের নির্দেশনা মেনে চলতে সেনাবাহিনীর টহল জোরদার করা হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিসের লোকজন গোপালগঞ্জ জেলা শহরের প্রতিটি হাট-বাজার, প্রধান প্রধান সড়কের পাশে এবং আশপাশের ভবনগুলো ছাড়াও গাছপালা ও হাসপাতাল এলাকা ওষুধ দিয়ে ভিজিয়ে দিচ্ছে। ওষুধ দিয়ে প্রতিটি সড়কের আশপাশের এলাকা ধোয়ার পাশাপাশি পৌর এলাকার প্রতিটি ওয়ার্ডের বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার রাস্তার পাশের ভবন ও আশপাশের এলাকায় ওষুধ ছিটানোর কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
দরিদ্র লোকজনের মধ্যে হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণের পাশাপাশি জেলার বাজার দর নিয়ন্ত্রণের জন্য নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছেন। জেলায় আগত প্রবাসীরা যাতে নিয়ম মাফিক হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকে সে ব্যাপারেও জেলা প্রশাসন কাজ করে যাচ্ছে।
মুকসুদপুর উপজেলা ইউএনও মোসাম্মদ তাসলিমা আলী জানিয়েছেন, অন্যান্য দিন কিছু কিছু দোকানপাট খোলা থাকলেও আজ তা দেখা যায়নি। রাস্তায় লোকজনের সমাগমও চোখে পড়েনি। করোনা ভাইরাস আতংকে আতংকিত অধিকাংশ রোগীরা নিজের থেকেই হাসপাতাল ছেড়ে চলে গেছে। তবে, হাসপাতালে খোলা রয়েছে আইসোলেশন ওয়ার্ড। বাজার দর নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে। সরকার থেকে বরাদ্দকৃত খাদ্য স্বল্প আয়ের মানুষদের বাড়ী বাড়ী পৌঁছে দেয়া হচ্ছে।
গোপালগঞ্জের সিভিল সার্জন ড. নিয়াজ মোহাম্মদ বলেন, গোপালগঞ্জ জেলায় এখনও পর্যন্ত কেউ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়নি। তবে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা ৫৬৪ জন মানুষ ঝুকিমুক্ত হয়েছে।
‘‘আজ বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টা পর্যন্ত ৩৪১ জন মানুষ হোম কোয়ারেন্টাইনে আছে।’’