করোনাভাইরাসের মহামারী এশিয়ার পোশাকশিল্পের জন্য অশনি সংকেত বলে সাবধান করেছেন শিল্পমালিকরা। এ পরিস্থিতিতে তারা সতর্ক করে বলছেন, আমাদের শ্রমিকরা করোনায় মারা না গেলেও অনাহারে মারা যেতে পারে।
করোনা মহামারী কীভাবে পোশাকশিল্পে প্রভাব ফেলতে পারে, তার ছোট্ট একটি মূল্যায়ন বিষয়ে বিবিসি’র সাথে কথা বলেছেন অ্যাম্বাতুর ফ্যাশন ইন্ডিয়ার চেয়ারম্যান বিজয় মাহাতানি।
সাধারণত বিজয় মাহাতানি ও তার পার্টনার অমিত মাহতানি এবং শাওন ইসলাম নিজেদের বাংলাদেশ, ভারত ও জর্ডান কারখানায় ১৮ হাজার শ্রমিক নিযুক্ত করে থাকেন। কিন্তু মহামারীর কারণে ঢাকার একটি মাত্র কারখানা বাদে অধিকাংশই বন্ধ রাখতে হয়েছে তাদেরকে।
তারা বলছেন, এতে করে কেবল তাদের শ্রমিকদের বেতন প্রদানের ক্ষমতাকে হ্রাস করবে তা নয়, মূল সমস্যা হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের মারাত্মক ক্ষতি ও সেখানকার ক্রেতাদের অযৌক্তিক দাবিসমূহ।
টুস্কার অ্যাপারেল, জর্ডানের প্রধান নির্বাহী অমিত মাহতানি বিবিসিকে বলছেন, কিছু অংশীদার ও ক্রেতা পরিস্থিতি বিবেচনা করে অন্তত উচ্চতর নৈতিকতা প্রদর্শন করছেন এবং শ্রমিকদের মজুরি প্রদানের মতো সহযোগিতা করার চেষ্টা করছেন। তবে আমরা এমন কিছু অযৌক্তিক দাবি পাচ্ছি, যা অনেক বড় রকমের ক্ষতির কারণ হবে। আমাদের পণ্য প্রস্তুত হয়েছে, প্রস্তুত হওয়ার পথে আছে, ট্রানজিটে মালামালের জন্য ছাড়ের অনুমতি আছে এমন কিছু পণ্যের অর্ডার বাতিল করার দাবি পেয়েছি। এর মধ্যে অনেকে অর্থ দিতে ৩০ থেকে ১২০ দিনের সময় বাড়ানোর অনুরোধ করছেন। আবার অনেকে ৩০ শতাংশ ছাড় দাবি করেছেন। কারণ হিসেবে লকডাউন এবং করোনার কঠিন পরিস্থিতিকেই্ ইস্যু করছেন তারা। এটি অত্যন্ত আশঙ্কাজনক ও অযৌক্তিক ব্যাপার।
“মার্কিন অনেক ক্রেতা বলছেন, কঠিন পরিস্থিতিতে হাতে অর্থ নেই। তারা আমাদের কাছে সময় চাচ্ছেন, কেননা তারা মার্কিন সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে অর্থ সহায়তার সুযোগ তালাশ করছেন”।
এই সংকটের শুরু মূলত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে যখন তারা পণ্য তৈরির কাঁচামাল চীন থেকে পাচ্ছিলো না, যারা মূলত বিশ্বের সবচেয়ে বড় টেক্সটাইল রপ্তানিকারক দেশ।সরকার লকডাউন ঘোষণা করায় খুচরা বিক্রেতারা তাদের দরজা বন্ধ করতে বাধ্য হয়।
তবে চীন বিশ্বের কারখানা হিসেবে পরিচিত হলেও পোশাকের বিষটি যখন আসে তখন বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম এবং মিয়ানমার ক্রমবর্ধমান ভূমিকা পালন করছে বিশ্বে।
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ এবং ভিয়েতনাম বিশ্বের চারটি বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারীদের মধ্যে আছে। বাংলাদেশ ৬.৭ শতাংশ এবং ভিয়েতনাম ৫.৭% শতাংশ মার্কেট শেয়ার। বাংলাদেশে চার মিলিয়ন গার্মেন্ট শ্রমিক মিলে টেক্সটাইল ও পোশাক পণ্যের রপ্তানিতে গত বছর ছিলো ৯০ শতাংশ। কম্বোডিয়া গত বছর এবং শ্রীলংকা তাদের রপ্তানির ৬০ শতাংশ বেশি এই শিল্পের ওপর নির্ভর করে। কিন্তু করোনাভাইরাস এই অগ্রগতিতে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে আসছে।
প্যারো অ্যাপারেল বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাওন ইসলাম বলছেন, আংশিকভাবে হলেও বাংলাদেশ সরকার এই শিল্পকে সহায়তা করার চেষ্টা করছে। মজুরি ভর্তুকি দেওয়ার জন্য দীর্ঘমেয়াদী ঋণ হিসেবে উদার প্রণোদনা প্যাকেজ ভালো বটে। যদিও ক্ষতির তুলনায় তা যথেষ্ট নয়। তবে তা কিছুটা সাহায্য করবে।
কম্বোডিয়ান সরকারও টেক্সটাইল কারখানার জন্য ছুটি ঘোষণা ও শ্রমিকদের জন্য মজুরি ভর্তুকি প্রকল্পের প্রস্তাব দিয়েছে। কারণ এই মহামারীর দীর্ঘ মেয়াদে কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি শ্রমিক মজুরি হ্রাস করতে পারে এবং উতপাদন কমিয়ে দিতে পারে।
কোভিড-১৯ করোনাভাইরাসের দীর্ঘমেয়াদী এই লকডাউন অবস্থা এশিয়ার পোশাকশিল্পের জন্য বড় ধরনের ধাক্কা অপেক্ষা করছে বলছেন বিশেষজ্ঞরা। সরকারি প্রণোদনাও এর জন্য যথেষ্ট হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
লকডাউন পরিস্থিতি দীর্ঘ হতে থাকলে বহু কারখানা তাদের ক্রেতা ও মূল্য হারাবে, শ্রমিক হারাবে চাকরি। এতে শ্রমিকরা অনাহারে, অর্ধাহারে দিনযানপন করবে। ফলে করোনার মৃত্যুর বদলে অনাহারে মৃত্যুর হার বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের।