করোনাভাইরাস এ আক্রান্ত পুলিশ সদস্যরা দ্রুতই সুস্থ হয় উঠছেন জানিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম কমিশনার শাহ মিজান শাফিউর রহমান বলেছেন: আক্রান্ত সদস্যদের যথেষ্ট মনোবল চাঙ্গা রয়েছে।
শনিবার করোনাভাইরাস আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের সশরীরে দেখতে গিয়ে এসব কথা বলেন তিনি।
আক্রান্তদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দিয়ে তিনি বলেন: পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ ও ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার মোহাঃ শফিকুল ইসলাম আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের সার্বক্ষণিক খোঁজ খবর রাখছেন এবং বাহিনীর সদস্যদের সুচিকিৎসা ও পুনর্বাসন প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার নির্দেশনা প্রদান করে যাচ্ছেন।
পরিদর্শন দল রাজধানীর উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজ, হোটেল আরামবাগ, রাজারবাগ স্কুল অ্যান্ড কলেজ, বিজয়নগর হোটেল, ডিটেকটিভ ট্রেনিং স্কুল, ডিএমপির ট্রাফিক ব্যারাকে স্থাপিত অস্থায়ী চিকিৎসা কেন্দ্র ও রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে বাংলাদেশ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের চিকিৎসাধীন করোনা আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের দেখতে যান।
চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে ডিএমপির এই উর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, আক্রান্তরা বড় কোনো অসুবিধা ছাড়াই সেরে উঠছেন। তাদের মধ্যে কিছু সদস্য ইতোমধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছেন এবং তারা তাদের পরিবারের কাছে ফিরে যাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন।
চিকিৎসাধীন পুলিশ সদস্যদের সশরীরে পরিদর্শন শেষে শাহ মিজান শাফিউর রহমান আরও জানান, আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের মনোবল যথেষ্ট চাঙ্গা রয়েছে। আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের সুচিকিৎসা ও সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিত করতে ইতোমধ্যেই পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে কয়েকটি টিম গঠন করা হয়েছে।
এসব টিমের কর্মকর্তাগণ সার্বক্ষণিক করোনা আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের পাশে যাচ্ছেন, তাদের সাথে কথা বলছেন, তাদের স্বাস্থ্যের খোঁজ নিচ্ছেন ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সদা তৎপর রয়েছেন।
তিনি বলেন: অত্যন্ত আন্তরিকভাবে করোনা আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের সুচিকিৎসা ও অন্যান্য সেবা প্রদান করা হচ্ছে।
দুই হাজার ছাড়াল পুলিশে আক্রান্তের সংখ্যা
পুলিশে করোনায় আক্রান্তের রেকর্ড দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ২৪১ জন পুলিশ সদস্য করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এটিই পুলিশ বাহিনীতে একদিনে সর্বোচ্চ আক্রান্তের রেকর্ড। সবমিলিয়ে, আইনশৃঙ্খলার এ বাহিনীতে এখন পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৩৮২ জনে।
এ সংখ্যা শনিবার পর্যন্ত ঢাকাসহ সারা দেশের সকল পুলিশ ইউনিটের। এর আগে, মে মাসের ১১ তারিখে একদিনে সর্বোচ্চ ২০৭ জন পুলিশ করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন।
পুলিশের করোনা কন্ট্রোল রুম সুত্রে জানা গেছে, আক্রান্তদের মধ্যে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সদস্য এক হাজার ৪১ জন। আক্রান্তদের মধ্যে মাঠপর্যায়ের পুলিশ সদস্যই বেশি।
ডিএমপির পক্ষ থেকে জানায়, করোনায় মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা ছাড়াও তাদের দু’জন অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) ও একজন সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) পদমর্যাদার কর্মকর্তা আক্রান্ত হয়েছেন।
সারা দেশের পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের তথ্য-উপাত্ত থেকে জানা গেছে, করোনা ভাইরাসমুক্ত হয়ে ৩৬১ পুলিশ সদস্য সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। মারা গেছেন আটজন।
শনিবার পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ২০ হাজার ৯৯৫ জন। ভাইরাসটিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩১৪ জনে। সুস্থ হয়েছেন চার হাজার ১১৭ জন।
চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসে বিশ্বের ২১২টি দেশ ও অঞ্চলে এখন পর্যন্ত সাড়ে ৪৬ লাখের বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে মারা গেছেন তিন লাখের বেশি মানুষ। তবে সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরেছেন সাড়ে ১৭ লাখের বেশি মানুষ।
করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে প্রথমে ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। পরে বিভিন্ন মেয়াদে ছুটি বাড়িয়ে সর্বশেষ ৩০ মে পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার।
ছুটির সময়ে অফিস-আদালত থেকে গণপরিবহন, সব বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তবে কাঁচাবাজার, খাবার, ওষুধের দোকান, হাসপাতাল, জরুরি সেবা এই বন্ধের বাইরে থাকছে। জনগণকে ঘরে রাখার জন্য মোতায়েন রয়েছে সশস্ত্র বাহিনীও।