বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাসে সিঙ্গাপুরে অভিবাসী শ্রমিকের মাধ্যমে সংক্রমণ বাড়ছে। গত ২৪ ঘন্টায় ৬২৩ জন আক্রান্ত হয়েছে সেদেশে। আক্রান্ত রোগীদের বেশিভাগেররই বসবাস বিভিন্ন ডরমিটরিতে। প্রত্যেক ডরমিটরিতে কয়েক হাজার কর্মজীবী মানুষের বসবাস।
দেশটির সরকার জানিয়েছে, করোনায় আক্রান্ত রোগীদের সুস্থ ব্যক্তিদের থেকে আলাদা করে বিভিন্ন হাসপাতাল চিকিৎসার জন্য পাঠানো হবে।
গত ২৪ ঘণ্টায় সিঙ্গাপুরে ৬২৩ জনের দেহে কোভিড-১৯ এর নমুনা শনাক্ত হয়েছে, তবে বৃহস্পতিবারে ৭২৮ জন শনাক্ত হয়েছিলেন যা আগের একদিনে সর্বাধিক আক্রান্তের রেকর্ডের প্রায় দ্বিগুণ। দেশটিতে ইতিমধ্যে ১৩১৫ জন বাংলাদেশি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।
সিঙ্গাপুরের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত সিঙ্গাপুরে আক্রান্তদের শনাক্তের সংখ্যা পাঁচ হাজার ৫০, যার মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হয়েছেন ৬২৩ জন। এদের মধ্যে মারা গেছেন দশ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে কোনো আক্রান্তের মৃত্যু হয়নি। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৬৪৩ জন। এছাড়াও জরুরি অবস্থায় চিকিৎসাধীন আছেন ২৯ জন।
বৃহস্পতিবার শনাক্ত হওয়া করোনা রোগীদের প্রায় ৯০ শতাংশই অভিবাসী ডরমিটরি সম্পর্কিত। গত ২৪ ঘণ্টায় এ ধরনের রোগী শনাক্ত হয়েছেন অন্তত ৬৫৪ জন।
গত বুধবার একদিনে সর্বোচ্চ ৪৪৭ জন রোগী শনাক্তের রেকর্ড গড়েছিল সিঙ্গাপুর। বৃহস্পতিবার সেই সংখ্যা থেকেও বহুদূর এগিয়ে গেছে তারা। তবে শুক্রবার পযন্ত আক্রান্ত শনাক্তের সংখ্যা প্রায় এক’শ জনের নীচে নেমেছে।
প্রায় ৬০ লাখ জনসংখ্যার ছোট্ট নগররাষ্ট্রটিতে শ্রমশক্তির এক-তৃতীয়াংশই অভিবাসী। এর মধ্যে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানসহ এশীয় দেশগুলোর কর্মীরা নিবন্ধিত ৪৩টি ডরমিটরিতে বসবাস করেন। সেখানে একেকটি রুমে গাদাগাদি করে থাকেন প্রায় ২০ জন করে। তাদের সবাই একই বাথরুম ও রান্নাঘর ব্যবহার করেন। এক কথায়, এ ধরনের জায়গায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা অসম্ভব। এ কারণে সেসব জায়গায় করোনা সংক্রমণের ঝুঁকিও অত্যন্ত বেশি।
ইতোমধ্যেই সিঙ্গাপুরের নয়টি বেসরকারি ডরমিটরিতে ছড়িয়ে পড়েছে নভেল করোনাভাইরাস। আর এর জন্য কর্তৃপক্ষের তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা না নেয়াকেই দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। দেশটিতে করোনা আক্রান্তদের প্রায় এক-চতুর্থাংশই এসব ডরমিটরির সঙ্গে সম্পর্কিত।
সরকারের তরফ থেকে বলা হয়েছে সর্বমোট ৯টি ডরমিটরি লকডাউনের আওতাধীন থাকবে। ডরমিটরিগুলো হচ্ছে— মানডাই ডরমিটরি-১, চকরেন ডরমিটরি-১, চকরেন ডরমিটরি-২, আকাশিয়া ডরমিটরি, তামপানিস ডরমিটরি, সাংগাই তেনগা ডরমিটরি, পংগোল এস-১১ ডরমিটরি, ওয়েস্টলাইট ডরমিটরি তোগয়ান এবং তোগয়ান ডরমিটরি। এর মধ্যে পংগোল এস-১১ ডরমিটরি থেকে করোনায় আক্রান্ত সর্বোচ্চ রোগী শনাক্ত করা হয়েছে।
দেশটিতে (মিনিস্টারি অব ম্যানপাওয়ার) এমওএমের পক্ষ থেকে প্রত্যেক প্রবাসীদের বাধ্যতামূলক করোনার নমুনা পরীক্ষা করা শুরু হয়েছে। এই পদ্ধতির মাধ্যমে দ্রুত করোনায় আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা সম্ভব হবে। করোনায় আক্রান্ত রোগীদের সুস্থ ব্যক্তিদের থেকে আলাদা করে বিভিন্ন হাসপাতাল চিকিৎসার জন্য পাঠানো হবে।
করোনাভাইরাসের কারণে সিঙ্গাপুরে শিল্পকারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় প্রবাসীরা কাজ হারিয়েছেন। দেশটির মন্ত্রী জোসেফ টিও প্রবাসীদের এবিষয়ে উদ্বিগ্ন না হওয়ার জন্য বলেছেন।
জোসেফ টিও বলেন, প্রবাসী কর্মীদের কাজ না থাকলেও জনশক্তি মন্ত্রণালয় নিশ্চিত করবে নিয়োগকর্তা যেন আপনার বেতন ঠিকমত সময় পরিশোধ করে। মন্ত্রী সর্বশেষ নিজেকে সুস্থ রেখে সবাইকে সুস্থ রাখার পরামর্শ দিয়েছেন।