চারদিকে এক শব্দ ‘করোনাভাইরাস’। বিশ্বকে তটস্থ করে মানুষকে গৃহবন্দি করছে এ ভাইরাস । কারণ জীবন বাঁচাতে হলে পারস্পরিক যোগাযোগ বন্ধ করতে হবে। পরিস্কার পরিছন্ন থাকতে হবে সকলকে। চীনের উহানে করোনা ভাইরাসের সূত্রপাত্র হয় গত ডিসেম্বরে। তারপর মানুষের মাধ্যমেই ছড়াচ্ছে দেশ থেকে দেশে। যার ধারাবাহিকতায় আজ বাংলাদেশ প্রায় অচল। করোনা ভাইরাসে প্রতিরোধে এখন অবধি আবিস্কার হয়নি ওষুধ। শুধু মাত্র মানুষ থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকাটাই দমন করতে পারে করোনা ভাইরাস আক্রান্ত হবার সম্ভাবনাকে। এ ভাইরাস প্রকৃতির লীলা খেলা বা মানুষের সৃষ্টিই হোক না কেন, এর চেইন ভাংগতে হলে আপন জন থেকেও প্রয়োজনে দূরে থাকতে হবে কম পক্ষে ১৪ দিন।
এমন দূরে থাকার জন্য প্রবাস ফেরত প্রিয়জনদের নিয়ে বিড়ম্বনাতে আছে পরিবার,সমাজ, দেশ। করোনা ভাইরাসের বাহক হলো মানুষ। আক্রান্ত দেশ গুলো থেকে প্রবাসীদের আসার মাধ্যমে বাংলাদেশে এ ভাইরাস আসতে শুরু করে মার্চ মাসের প্রথম দিকে। প্রথম দিকে বিষয়টি গুরুত্ব সেভাবে দেয়া হয়নি বলে আজ আতংকিত সকলে।
এ আতংকিত পরিস্থিতিতে সবার আগে দরকার সচেতনতা। বাংগালী জাতি হিসাবে পরিস্কার পরিছন্নতাতে অসচেতন তা চারপাশের পরিবেশ থেকে অনুমেয়। করোনা ভাইরাসকে ঠেকাতে হলে নিজের সাথে অন্যকে সচেতন করতে হবে। প্রবাসীদের অবাধে ঘোরাঘুরি করা যাবে না – এ কথাটা প্রশাসন থেকে বলা হলেও কার্যকর হয়নি। হোম কোয়ান্টেরাইন করার কথা কানেই তুলছে না প্রবাসীরা। অন্যদিকে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ করতে বাংলাদেশের মত দেশ প্রতিকূল পরিস্থিতিতে পড়বে তা বোধ করি সকলেই বুঝতে পারে বিশ্ব পরিস্থিতি দেখে।
বেঁচে থাকার জন্য লড়াইটা করতে হয় সাহস আর ধৈর্য্য নিয়ে। দেশের এ দূর্যোগ পরিস্থিতিতে প্রশাসন ও চিকিৎসকদের পাশে ভিন্ন এক রূপে মানুষের পাশে দাঁড়ায় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ। চট্টগ্রামকে করোনা ভাইরাস মুক্ত রাখতে নিয়ম মাফিক কার্যক্রমের পাশাপাশি মানবিক দায়িত্ব পালনে তৎপর হয় পুলিশ কমিশনার মাহবুবর রহমান ও তাঁর পুলিশ বাহিনী। আসলে জাহাজের ক্যাপ্টেন যদি শক্ত হাতে কান্ডারী ধরে তখন তার নাবিকরা সাগর পাড়ি দিতে অক্লান্ত পরিশ্রমেও পরিশ্রান্ত হয় না। সিএমপি কমিশনার মাহবুবর রহমান তেমনই একজন ক্যাপ্টেন, যিনি দেশের যে কোন পরিস্থিতিতে দক্ষতার সাথে মানুষের পাশে দাঁড়ান মানবতার ছায়া নিয়ে। আর তার সহকর্মীরা সহযোদ্ধা হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে দেশের মানুষের জন্য।
বর্তমান সময়ে চট্টগ্রামবাসী নানা পরিস্থিতিতে নির্ভয়ে নির্ভর করতে পারে সিএমপির ওপর। কারণ চট্টগ্রামের পুলিশ বাহিনী অত্যন্ত দক্ষতার সাথে মানবিকতা প্রতিষ্ঠা করতে বিন্দুমাত্র সময় অপচয় করে না।
আর সে কারণে করোনা ভাইরাস ঠেকাতে সবার আগে চট্টগ্রামে জন সমাবেশ এড়াতে পদক্ষেপ গ্রহণ করে সি এম পি। বাজারে মাস্ক, হ্যান্ড স্যানেটারিজের দাম নিয়ন্ত্রণ করতে সচেষ্ট হয়। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির বিষয় ও নজরদারিতে রাখে এবং পথচারীদের মাস্ক বিতরণ করে। একই সাথে মানুষকে করোনা ভাইরাস সম্পর্কে সচেতন করতে থাকে প্রচারণার মাধ্যমে।
স্কুল কলেজে ছুটির কারণে পতেংগা সমুদ্র সৈকতে মানুষের যাওয়া বন্ধ করে কেবল ক্ষান্ত হয়নি সিএমপি। প্রবাসীরা দেশে ফিরে করোনা ভাইরাসের বিষয় হোম কোয়ান্টেরাইন করছে না বলে অভিযোগ উঠে আসে সামাজিক মাধ্যমে। সিএমপি কমিশনার মাহবুবর রহমান প্রবাসীদের কারনে করোনা ভাইরাস যাতে ছড়িয়ে না পড়ে তার জন্য ব্যবস্থা নিতে শুরু করেন। থানা বা জনগণের মাধ্যমে প্রবাসীর খবর পেলে সে বিষয়ে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিচ্ছেন তিনি। এলাকা অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট থানার মাধ্যমে অবস্থানরত প্রবাসীর খোঁজ খবর রাখছেন এবং তালিকা তৈরি করছেন চলমান প্রক্রিয়াতে।
প্রবাসীরা যেন হোম কোয়ান্টেরাইনে থাকতে উৎসাহিত বোধ করেন সেজন্য সিএমপি নিজস্ব উদ্যোগে শুভেচ্ছা স্বরূপ ফলের ডালা পাঠিয়েছেন প্রবাসীদের ঘরে। জনস্বার্থে দেশকে বাঁচাতে এ ধরনের উদ্যোগ তখনই সম্ভব, যখন নিজের ভেতর দেশপ্রেম আর মানুষের জন্য ভালোবাসা থাকে। পুলিশ কেবল আইনের কঠোরতার প্রতীক নয় তা প্রমাণ করেছে চট্টগ্রামের মেট্রোপলিটন পুলিশ বাহিনী।
‘ঢাল নাই তলোয়ার নাই নিধিরাম সর্দার’ হয়েও সিএমপি করোনা ভাইরাস থেকে এ শহরকে বাঁচাতে নিরলস পরিশ্রম করছে। নিজেদের জীবনকে অনেকটাই সংশয়ে রেখে এ বাহিনী সেবা দিচ্ছে নগর বাসীকে। সারা শহরকে পরিস্কার করতে ওয়াটার ক্যানন দিয়ে ব্লিচিং মিশ্রিত পানি ছিটানোর কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এর সাথে সাথে করোনা ভাইরাস সম্পর্কিত নানা বিষয়ের জন্য হট লাইন চালু করছে।
আপনি নিজে বাঁচুন, জাতিকে বাঁচান – সচেতনতার এ আহব্বান জানিয়ে চট্রগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ বাহিনী করোনা ভাইরাস মুক্ত করতে যে দৃষ্টান্ত রাখছে তা সকলের জন্য উদাহরণ।
মানবিক পুলিশিংয়ের ভাবনাকে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সকল স্তরে এ মুহূর্তে অনেক বেশি প্রয়োজন। করোনা ভাইরাস থেকে মুক্তি পেতে হলে সচেতনতার কোন বিকল্প নাই। আর দেশ ও জনগনের সেবক হিসাবে সিএমপির এ মহৎ উদ্যোগ সারা দেশে অত্যাবশ্যক এখন।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)