তামিম-মুশফিকদের সঙ্গে জাহানারা-রুমানাদের আয়ের ব্যবধান অনেক। ম্যাচ ফি ও বেতনে বিস্তর ফারাক। এবার কিছুটা হলেও বৈষম্য কমিয়ে আনার কথা ভাবছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)।
বিসিবি পরিচালক ও উইমেন্স উইং প্রধান শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল জানিয়েছেন, ম্যাচ ফি তিন-চার গুণ ও মাসিক বেতন অন্তত ১০ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হবে। সামনের বিসিবি সভাতেই যেটি অনুমোদনের জোর সম্ভাবনা রয়েছে।
তামিম-মুশফিকরা একটি ওয়ানডে ম্যাচ খেলে পান তিন লাখ টাকা। অপরদিকে সালমা-রুমানারা পান একশ মার্কিন ডলার বা প্রায় সাড়ে ৮ হাজার টাকা। টি-টুয়েন্টি খেললে ছেলেরা পান দুই লাখ টাকা, আর মেয়েরা ৭৫ মার্কিন ডলার বা সাড়ে ৬ হাজার টাকা।
মেয়েদের ম্যাচ ফি চার গুণ বাড়লেও সেটি ছেলেদের টাকার অঙ্কের ধারেকাছে যাবে না। তারপরও এমন খবরে দারুণ খুশি নারী দলের অভিজ্ঞ পেসার জাহানারা আলম।
চ্যানেল আই অনলাইনকে তিনি বললেন, ‘এটা আমাদের জন্য অনেক বড় সুখবর। ক্রিকেট খেলে যে টাকা পাই তাতে চলতে পারি। পরিবারের কাছ থেকে নিতে হয় না। যদি ম্যাচ ফি বাড়ে তাহলে হয়ত আরেকটু সচ্ছল হতে পারব। নিজেকে পেশাদার ক্রিকেটার হিসেবে দাবি করতে পারব। যখন কোনো মেয়ে জানবে খেলাধুলা করে সুন্দরভাবে চলা সম্ভব তখন সে আগ্রহ পাবে, অভিভাবকরাও ক্রিকেটে দিতে চাইবে তাদের মেয়েকে।’
বর্তমানে চারটি গ্রেডে জাতীয় দলের ২০ নারী ক্রিকেটার বিসিবি থেকে বেতন পান। ‘এ’ ক্যাটাগরিতে ৫০ হাজার, ‘বি’ ক্যাটাগরিতে ৪০ হাজার, ‘সি’ ক্যাটাগরিতে ৩০ হাজার ও ‘ডি’ ক্যাটাগরিতে ২০ হাজার করে। প্রতিটি গ্রেডেই দশ হাজার টাকা বাড়তে পারে। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় চুক্তিতে বাড়তে পারে খেলোয়াড় সংখ্যাও।
আরেকটি ভালো খবর হল, ছেলেদের মতো মেয়েদের ক্রিকেটেও এফটিপি বা ফিউচার ট্যুরস প্রোগ্রাম (ভবিষ্যৎ সফর কর্মসূচি) চালুর প্রক্রিয়া শুরু করছে বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসি। যেটি কার্যকর হলে লাভবান হবে বাংলাদেশ।
র্যাঙ্কিংয়ে যারা একটু পিছিয়ে তাদের আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার সুযোগ কম। এফটিপি হলে বেড়ে যাবে ম্যাচ সংখ্যা। তখন তীর্থের কাকের মতো ম্যাচের জন্য অপেক্ষা করতে হবে না জাহানারাদের।
‘এফটিপি হলে আমরা সারাবছরের সূচি জানতে পারব। প্রস্তুতি নিতে খুব সুবিধা হবে। আন্তর্জাতিক ক্যালেন্ডার হলে ঘরোয়া ক্রিকেটের জন্য সুবিধা হবে। ঘরোয়া লিগ নিয়ে আমরা সবসময় চিন্তায় থাকি, কখন হবে, আদৌ হবে তো! আন্তর্জাতিক সূচি হলে বিসিবি কিংবা ক্লাবের পক্ষে ঘরোয়া ক্রিকেটের সূচি করাও সুবিধা হবে। ম্যাচ বাড়লে খেলায়ও আমরা উন্নতি করতে পারব।’
করোনা বিরতি কাটিয়ে ছেলেদের পর মেয়েরাও ফিরেছে মাঠে। মিরপুরসহ দেশের সাতটি ভেন্যুতে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) ব্যবস্থাপনায় ক্রিকেটাররা করছেন সিডিউল অনুশীলন। মুশফিক-তামিমদের সমান সুযোগ পাচ্ছেন জাহানারা-রুমানারা।
অনুশীলনে তামিম-মুশফিকদের সমান সুযোগ অবাক করেছে জাহানারাকে। এই পেসার ভাবতেই পারেননি করোনা বিরতির পর মিরপুরে পুরুষ ক্রিকেটারদের মতোই সুযোগ-সুবিধা পাবেন তারা।
‘ইনডোর ও জিম সেশনে ছেলেদের জন্য যতটুকু সময় বরাদ্দ মেয়েদেরও তাই। এতটা সুযোগ আমরা পাবো ভাবতেই পারিনি। ধীরে ধীরে অনেককিছুই বদলাচ্ছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আমরা নিয়মিত সাফল্য পেলে আরও গুরুত্ব পাবো। বিশ্বাস করি তখন ব্যবধান আরও কমে আসবে। এজন্য মাঠে আমাদের প্রমাণ দিতে হবে।’