আসন্ন ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে ব্যক্তিখাতে করমুক্ত আয়সীমা ৩ লাখ থেকে বাড়িয়ে ৪ লাখ এবং নারী ও ৬০ বছরের ঊর্ধ্বে বয়সের ব্যক্তিদের জন্য ৫ লাখ করার আহ্বান জানিয়েছে অর্থনীতি বিটের সাংবাদিকদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ)।
বৃহস্পতিবার ভার্চ্যুয়ালি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যানের কাছে এই আহ্বান জানিয়েছেন সংগঠনটির সভাপতি শারমীন রিনভী।
শারমীন রিনভী বলেন: করোনার কারণে মানুষের আয় কমেছে। তাই ব্যক্তিখাতে করমুক্ত আয়সীমা ৩ লাখ থেকে বাড়িয়ে ৪ লাখ এবং নারী ও ৬০ বছরের ঊর্ধ্বে বয়সের ব্যক্তিদের জন্য ৫ লাখ করা যেতে পারে।
তিনি বলেন: ডিজিটাল এনবিআরের স্বপ্ন দেখা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে এখনো আয়কর ও ভ্যাট রিটার্ন দিতে হয়রানির শিকার হতে হয়। রিটার্ন দাখিল পদ্ধতিতে যুগোপযোগী ডিজিটাল ব্যবস্থার প্রয়োজন। এতে এনবিআর ও করদাতাদের মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েন কমবে।
এছাড়া সংগঠনটি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রাক-বাজেটে অন্তর্ভুক্তির জন্য এনবিআরের কাছে ২৭টি প্রস্তাবনা দিয়েছে।
প্রস্তাবে ইআরএফ বলছে: এলডিসি থেকে উত্তরণের পর বিভিন্ন দেশে রপ্তানি বাণিজ্যে প্রমিত হারে শুল্ক পরিশোধ করে প্রবেশ করতে হবে বাংলাদশি পণ্যকে। ইউরোপের বর্তমানে ইবিএ’র আওতায় শুল্কমুক্তভাবে পণ্য রপ্তানি করলেও তখন প্রায় ১০ থেকে ১২ শতাংশ শুল্ক পরিশোধ করতে হবে। কোনো কোনো দেশে এ হার আরো বেশি হবে। অথচ একই সময়ে ভিয়েতনাম মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির (এফটিএ) কারণে ইউরোপের বাজারে পর্যায়ক্রমে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে। ফলে বাড়তি প্রতিযোগিতার মুখে পড়ে রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কাও রয়েছে।
এমন পরিস্থিতি মেকাবিলায় বিভিন্ন দেশের সঙ্গে এফটিএ বা পিটিএ (প্রেফারেন্সিয়াল ট্রেড এগ্রিমেন্ট) করার জন্য এখনই উদ্যোগ নিতে হবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশও সংশ্লিষ্ট দেশ থেকে আমদানিকৃত পণ্যে শুল্কমুক্ত কিংবা শুল্ক ছাড়ের সুবিধা দিতে হবে। ফলে এনবিআরের বিপুল পরিমাণ আমদানি শুল্ক বাবদ সম্ভাব্য রাজস্ব কমে যেতে পারে। তাই এনবিআরকে এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে।
বাংলাদেশে ট্যারিফ হার অনেক বেশি। ট্যারিফ হার কমানোর পাশাপাশি একটি যুগোপযোগী ট্যারিফ পলিসি প্রণয়নের প্রয়োজন। একইসঙ্গে বন্দর ও কাস্টমস সেবা আরও সহজ ও দ্রুততর করার সঙ্গে সঙ্গে সামগ্রিকভাবে ট্রেড ফ্যাসিলেটেশন বাড়ানোর প্রতি নজর দিতে হবে।
শারমীন রিনভী বলেন: বন্ড লাইসেন্সের অপব্যবহার করে বিদেশে অর্থ পাচার হচ্ছে। বলা যায়, বাণিজ্য নির্ভর অর্থ পাচার সবচেয়ে বেশি। তাই প্রশিক্ষিণ প্রাপ্ত মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ ইউনিট গড়ে তোলা জরুরি।
করপোরেট কর হার কমানোর প্রতি জোর দিয়ে ইআরএফ সভাপতি বলেন: প্রতিবেশি দেশের সঙ্গে তুলনা করে করপোরেট কর হার কমানো দরকার। এ হার ৫ শতাংশ কমালে বিনিয়োগ উৎসাহিত হবে। বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে। বর্তমানে দেশে সাধারণ ননলিস্টেট কোম্পানির ক্ষেত্রে সাড়ে ৩২ দশমিক ৫ শতাংশ, লিস্টেড কোম্পানির ক্ষেত্রে ২৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছ।
এক্ষেত্রে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এবং তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানির মধ্যে করপোরেট করের ব্যবধান বাড়ানো প্রয়োজন।
করের আওতা বাড়ানোর পরামর্শ ইআরএফ বলেছে: বাড়ির মালিকদের করের আওতা আনা জরুরি। এছাড়া উপজেলা বা মফস্বলে এনবিআরের নিজস্ব অফিস নেই। কর আওতা বাড়াতে হলে সেখানে প্রতিনিধি নিয়োগ করতে হবে। এলাকার শিক্ষিত তরুণদের কাজে লাগানো যেতে পারে। এতে কর্মসংস্থান বাড়বে।
এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ভবিষ্যত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এনবিআরকে প্রস্তুত থাকার পরামর্শ দিয়ে ইআরএফের সাধারন সম্পাদক এস এম রাশিদুল ইসলাম বলেন: ভবিষ্যতে শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রত্যাহার হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে রপ্তানি বাণিজ্যে টিকে থাকতে হলে বাংলাদেশকে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) বা অগ্রাধিকারমূলক বানিজ্য চুক্তিতে (পিটিএ) যেতে হবে।
অনুষ্ঠানে এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন: বাজেটে দেশীয় অর্থনীতি শক্তিশালী করার লক্ষ্যে স্থানীয় শিল্পকে গুরুত্ব দিতে চায় এনবিআর। কোন কোন খাতে সহায়তা দিলে স্থানীয় উৎপাদন বাড়বে এবং পরনির্ভরশীলতা কমে আসবে সে বিষয়ে কাজ চলছে।
তিনি বলেন: স্থানীয় শিল্পকে উৎপাদনে সহায়তা দিতে চাই। কোন জায়গায় সহায়তা দিলে দেশীয় অর্থনীতি গতিশীল হবে এবং ভিন্ন ভিন্ন পণ্য উৎপাদন যাতে বাড়ে, সেটি দেখছি।
করযোগ্য আয় রয়েছে, কিন্তু করের আওতার বাইরে রয়েছেন- এমন ব্যক্তিদের করের আওতায় আনতে অন্যান্য সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এনবিআর সংযুক্ত হচ্ছে বলে জানান তিনি।
এছাড়া বাজেট অধিবেশনন বিকেলের পরিবর্তে সকালে শুরু করা, কর আদায়ে সংস্কার কার্যক্রমকে গতিশীল করা, বিনিয়োগ আকর্ষণে কর সংক্রান্ত জটিলতা কমানো, পাবলিক-প্রাইভেট কর কমিটি গঠন করা, প্রতি ৩ মাস অন্তর রাজস্ব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন বিষয়ে পর্যালোচনা সভা করা, সরকারের রাজস্ব সংক্রান্ত কোন ছাড় যাদের উদ্দেশ্যে দেয়া হয়, তারা ওই সুবিধা পাচ্ছে কিনা, তা পর্যালোচনা করে পদক্ষেপ নেয়ার প্রস্তাব দেন ইআরএফ সদস্যরা।
এছাড়া কালো টাকা বিনিয়োগের বিদ্যমান নীতিমালা বৈধভাবে কর প্রদানকারীদের নিরুৎসাহিত করছে এবং অবৈধ অর্থ আয়কে উৎসাহিত করছে উল্লেখ করে, কেবল বৈধভাবে উপার্জিত অপ্রদর্শিত আয়কে নির্ধারত কর প্রদান ও জরিমানা সাপেক্ষে বৈধ করতে আইনে পরিবর্তন আনার প্রস্তাব দেয়া হয়।