শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের খারাপ ফলাফলের কারণ হিসেবে রাজনৈতিক অস্থিরতাকে দায়ী করলেও শিক্ষাবিদরা ভিন্নকথা বলেছেন।
শিক্ষাবিদ রাশেদা কে চৌধুরী এবারের ফলাফলকে খারাপ বলতেই রাজি নন। তিনি বলেছেন, ফলাফল সবসময় একই রকম থাকবে তা নিশ্চয়ই না। প্রতিবছর সেটাতে পরিবর্তন আসবে এমনটাই স্বাভাবিক।
চ্যানেল আই অনলাইনকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক এ উপদেষ্টা বলেন, পরিবেশ খারাপ হতেই পারে। সেটা মানবসৃষ্ট হোক বা প্রকৃতি প্রদত্ত। তবে এসব থেকে উত্তরণের জন্য দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা দরকার।
‘পরিবেশ খারাপ, রাজনৈতিক অস্থিরতা ছিলো সেসব কথা আমরা বলছি, কিন্তু শিক্ষায় যে বাজেট কমে গেছে সেটা তো বলছি না। গ্রামের সঙ্গে- মহানগরের বৈষম্যও বাড়ছে। এখনও অনেক স্কুলে বিজ্ঞান শিক্ষার্থীদের জন্য ল্যাবই নেই। ল্যাব আছে তো তার শিক্ষক নেই। আবার কোথাও কোথাও পর্যাপ্ত উপকরণ নেই। তাহলে শিক্ষার্থীরা শিখবে কি করে?’
এজন্য দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার প্রয়োজনীয়তার কথাও বললেন তিনি, ‘স্বল্পমেয়াদী চিন্তাতো বটেই, আমাদের দীর্ঘমেয়াদী চিন্তাও করতে হবে। এখনকার ফলাফলই যেন মূল না হয়। এটা যেন তাদের পরবর্তী শিক্ষা প্রস্তুতির একটা পথ হয়।’
এসময় ক্রমাগত মেয়েদের ভালো ফলাফল বা এগিয়ে চলার প্রশংসাও করেন রাশেদা কে চৌধুরী।
তবে ফলাফলের এই বিপর্যয়ের পেছনে রাজনৈতিক অস্থিরতাকে দায়ী করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক।
গতবছরের তুলনায় পাসের হার কমার কারণ সম্পর্কে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠের উপাচার্য বলেন, এবারতো শিক্ষার্থীরা স্থিরভাবে পরীক্ষা দিতে পারেনি। এক বিষয়ের পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে গেলে তা অনুষ্ঠিত হয়নি। পরে আবার অন্য বিষয়ের প্রস্তুতি নিতে হয়েছে। রাস্তাঘাটে হামলার শিকার হওয়ার একটা আতঙ্ক ছিলো।
আবার রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে ক্লাসও করতে পারেনি। তবে মেয়েদের পাসের হার বৃদ্ধির কারণ সম্পর্কে আরেফিন সিদ্দিক বলেন, মেয়েরা ছেলেদের তুলনায় ঘরোয়া পরিবেশেই পড়ালেখা বেশি করে। তাই গত কয়েক বছরের মতোই তাদের পাসের হার বেশি।
বাংলাদেশের ইতিহাস ঐতিহ্যের সাথে মিশে থাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য তার এই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতির কথাও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখার ক্ষেত্রেও মেয়েরা ছেলেদের তুলনায় ভালো ফলাফল করছে।
শিক্ষামন্ত্রী কারিগরি বোর্ডে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ানো এবং এই ক্ষেত্রে বেশি গুরুত্ব দেয়ার কথা বলেছেন। শিক্ষামন্ত্রীর এই বক্তব্যকে প্রশংসনীয় বলে উল্লেখ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য।
রাশেদা কে চৌধুরীর মতো শিক্ষা ও শিশুরক্ষা আন্দোলনের আহবায়ক রাখাল রাহাও অবশ্য তার বক্তব্যে তুলে আনলেন বৈষম্যের কথাই। বললেন, রাজনৈতিক অস্থিরতাকে আমরা অ্যাভয়েড করতে পারছি না। অনেক কষ্ট করে শিক্ষার্থীরা এখন পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে। তবু শিক্ষার ক্ষেত্রে কিছু বৈষম্য থেকেই যাচ্ছে।’ শিক্ষাকে ধ্বংস করে কোনো জাতিই উন্নত হতে পারে না বলেও মন্তব্য তার।