দুইশ’ বছরের বেশি সময়ের ইতিহাস বুকে নিয়ে দাঁড়িয়েছে আছে পুরান ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডের সদ্য সাবেক কেন্দ্রীয় কারাগার। তবে খাতা-কলমে বয়সটা ২২৮ হলেও ঐতিহাসিক নিদের্শন হিসেবে বয়সটা আরও বেশি; প্রায় ৪০০ বছর!
বাঙ্গালী জাতির দীর্ঘ বছরের সংগ্রামের এ সাক্ষী ঐতিহাসিক নিদের্শন হিসেবে জনসাধারণের জন্য খুলে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। নিয়েছে নানামুখী উদ্যোগ। তারই অংশ হিসেবে ২ থেকে ৫ নভেম্বর কারা অভ্যন্তরে আয়োজন করা হয়েছে ‘সংগ্রামী জীবন গাঁথা’ শিরোনামে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জাতীয় চার নেতার দুর্লভ আলোকচিত্র নিয়ে প্রথম প্রদর্শনী।
অবশ্য এখনই মিলছে না পুরো স্থাপনা ঘুরে দেখার। এ জন্য অপেক্ষা করতে হবে আরো কিছু দিন।
ঠিকানা বদলে কেন্দ্রীয় কারাগার এখন কেরানীগঞ্জে। তাই সেখানে দেখা গেলো ভিন্ন আয়োজন। মূল কারা ফটক পেরিয়ে কিছু দূর এগোতেই চোখে পড়বে দক্ষ হাতের অপূর্ব এক শিল্পকর্ম। কথিত আছে, বহু বছর আগে কোনো এক ফাঁসিরদণ্ড প্রাপ্ত আসামী এ স্থাপত্য শিল্পকর্মটি তৈরি করেছিলেন। পরবর্তীতে এ কর্মের স্বীকৃতি হিসেবে তার ফাঁসিরদণ্ড মওকুফও করা হয়। তার কিছুটা সামনেই আয়োজন করা হয়েছে আলোকচিত্র প্রদর্শনী।
এতো আলোর মাঝেও আছে কৌতুহল! কিছু কিছু জায়গায় জনসাধারণের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা তা নিয়ে কৌতুহল বাড়িয়ে তুলেছে। প্রদর্শনীর ঠিক বিপরীত দিকে তাকালেই একটা স্তব্ধতা ছুঁয়ে যাবে। জানা গেলো-পরিত্যাক্ত এ এলাকায় একসময় সশ্রম কারাদণ্ড পাওয়া কয়েদিদের কাজ করতো। আছে কর্মবন্টন রুমও। চ্যানেল আই অনলাইনের কৌতুহলী চোখ সেদিকে। কর্মবন্টন সেলের সামনের জীর্ণ লোহার গেট পেরিয়ে ভেতরে যেতেই চারিদিকে পিনপতন নীরবতা।
তার কিছুদূর গিয়ে ডান দিকে এগোতেই কয়েকটি পরিত্যক্ত গুদাম ঘর। তবে ভেতরে ঢুকলেই স্পষ্ট হয়: মাত্র কিছুদিন আগেই জীর্ণ এই গুদামগুলোতে ছিলো কর্মচাঞ্চল্য। অকেজো হয়ে পড়ে থাকা গম থেকে আটা বানানোর মেশিন। সেখানে বস্তাবন্দী পরিত্যক্ত কিছু গম তারই প্রমাণ দেয়।
এমন তিনটি গুদাম পেরিয়ে চোখে পড়লো একটু উচু মতো জায়গা; যার উপরটা মরিচা ধরা ঢেউটিন দিয়ে ঢাকা। আপাতত দৃষ্টিতে পরিষ্কারভাবে বোঝানা না গেলেও অনুমান করা যায়, এটা সম্ভবত ফাঁসির মঞ্চ।
একই রাস্তা ধরে শেষ প্রান্তে রয়েছে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামীদের রাখার জন্য কনডেম সেল। ফাঁসি কার্যকরের আগে কয়েদিদের এখানে এনে রাখা হতো। এক সঙ্গে ৮জন কয়েদিকে রাখার ব্যবস্থা ছিলো পুরান কেন্দ্রীয় কারাগারের কনডেম সেলে। অন্য সেলগুলো থেকে এই সেল একটু ভিন্ন। চারদিকে দেওয়ালের পাশাপাশি উপরে কাঁটাতার দিয়ে ঘিরে রাখা। ভেতরে ঢুকলে যে কারও শরীরই ছমছম করে উঠবে।
এরপাশেই রয়েছে মূল ফাঁসির মঞ্চ। যেটা দেখলে স্পষ্ট হবে-আগে যেটাকে ফাঁসির মঞ্চ বলে মনে হয়েছিল সেটা আসলে ফাঁসির মঞ্চই ছিলো। কিন্তু আগেরটা থেকে এটা একটু গোছালো। এ থেকে বোঝা যায়: পুরান কেন্দ্রীয় কারাগারে দুটি ফাঁসির মঞ্চ থাকলেও একটি দীর্ঘদিন থেকেই পরিত্যক্ত। সেই হিসাবে ধরে নেয়া যায় যুদ্ধাপরাধী বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী, জামায়াতে ইসলামীর নেতা অালী আহসান মুজাহিদ-মতিউর রহমান নিজামী, মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর করা হয় এ মঞ্চেই।