সাফটা চুক্তির ভিত্তিতে শুক্রবার (৮ নভেম্বর) বাংলাদেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেতে চলেছে জয়া আহসান অভিনীত শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ও নন্দিতা রায়ের আলোচিত ছবি ‘কণ্ঠ’। বাংলাদেশে ছবিটির পরিবেশক ইমপ্রেস টেলিফিল্ম। এ উপলক্ষ্যে চ্যানেল আইয়ের ছাদ বারান্দায় অনুষ্ঠিত হলো সংবাদ সম্মেলনের। যেখানে শিবপ্রসাদ ও নন্দিতা ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন জয়া আহসান ও ইমপ্রেস টেলিফিল্মের পক্ষে নির্মাতা মুশফিকুর রহমান গুলজার।
‘কণ্ঠ’র প্রচারণায় কোনো কমতি রাখছেন না জয়া আহসান। নিজের প্রযোজিত ও অভিনীত ‘দেবী’ চলচ্চিত্রটির মতোই দৌড়ঝাঁপ তার। কারণ এটি তার অভিনীত প্রথম কোনো ভারতীয় ছবি, যা মুক্তি পাচ্ছে বাংলাদেশের প্রেক্ষাগৃহে! আর তাইতো বাংলাদেশের সাংবাদিকদের কাছে তার অনুরোধ, যেন ছবিটির কথা সবার কাছে পৌঁছে দেয়া হয়!
‘কণ্ঠ’র কথা কেন পৌঁছে দেয়া উচিত, সেটাও সংবাদ সম্মেলনে ব্যাখ্যা করেন জয়া। বলেন, তার ফিল্ম ক্যারিয়ারে অন্যতম একটি ছবি ‘কণ্ঠ’।
ছবিটি নিয়ে জয়া বলেন: ‘কণ্ঠ’ ছবিটি আমার জন্য একটি জার্নির মতো। জীবনকে কাছ থেকে দেখা, লড়াই করে বেঁচে থাকা মানুষগুলোকে দেখা, কী যে অনুপ্রেরণার ছিলো আমার জন্য! আমাকে এমন একটি যাত্রায় সামিল করায় আমি কৃতজ্ঞতা জানাই নির্মাতা শিবপ্রসাদ ও নন্দিতা দিদিকে। আমার উপর ভরসা করেছেন তারা, এটা আমার জন্য গর্বের।
এই চরিত্রটি তার ক্যারিয়ারে উজ্জ্বল হয়ে থাকবে। এমন আশাবাদ ব্যক্তি করে জয়া বলেন: জীবনে প্রচুর চরিত্রে অভিনয় করেছি। কিন্তু সব সময়ইতো সব চরিত্র গুরুত্বপূর্ণ বা দাগ কেটে যায় না, আবার কিছু চরিত্র আছে যেগুলো থেকে যায়, মনে গেঁথে যায়। শিল্পীর জীবনেও আঁচড় কেটে যায়। ‘কণ্ঠ’ ছবিতে ঠিক তেমন একটি চরিত্র আমার। আমার ভীষণ আত্মতৃপ্তি রয়েছে এই চরিত্রটি করে, এই ছবিতে অভিনয় করে।
‘কণ্ঠ’ ছবিটির পরিবেশনার দায়িত্ব ইমপ্রেস টেলিফিল্ম কাঁধে তুলে নেয়ায় উচ্ছ্বসিত জয়া। বললেন: ইমপ্রেস টেলিফিল্ম ও চ্যানেল আই আমার জীবনের প্রথম ছবি থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত সবসময় আমার পাশে ছিলো। আমার অভিনীত প্রথম ভারতীয় কোনো ছবি বাংলাদেশে মুক্তির ব্যবস্থাও তারাই করলেন। তাদের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। ‘কণ্ঠ’ ছবিটি আমার ফিল্ম ক্যারিয়ারে একটি অন্যতম অধ্যায়। ভারতের মানুষ ছবিটি দেখে প্রশংসা করেছেন। কিন্তু বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের কাছে ছবিটি পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব নেয়ায় ইমপ্রেস টেলিফিল্মকে অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা।
ছবির গল্প নিয়েও কথা বলেন জয়া। বললেন, এটি একটি মুভমেন্ট। লড়াই করে বেঁচে যাওয়ার গল্প ‘কণ্ঠ’। সৃষ্টিকর্তা যেকোনো সময় মানুষের হাত নিয়ে নিতে পারেন, চোখ নিয়ে নিতে পারেন-এরকম করে শরীরের নানা অঙ্গ প্রত্যঙ্গ নিয়ে নিতে পারেন তিনি। কিন্তু জীবনী শক্তি নিতে পারেন না। যারা হতাশায় ভুগছেন, কিংবা যারা বলছেন জীবনের সবকিছু শেষ, বেঁচে থেকে কিছু করতে পারছি না কিংবা পৃথিবীকে দেয়ার মতো কিছু নাই, দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে যাদের, এরকম ভাবনার মানুষদের জীবনের প্রতি অনুপ্রাণিত করবে ‘কণ্ঠ’।
ছবিটি করতে গিয়ে নিজের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে ‘দেবী’ খ্যাত এই অভিনেত্রী বলেন: এই ছবিটি করতে গিয়ে আমি এমন কিছু মানুষের সাথে সাক্ষাৎ করেছি, ক্যানসার আক্রান্ত অনেক মানুষের সাথে কথা বলেছি। তাদের কাছ থেকে এতো জীবনীশক্তি পেয়েছি, তখন আমার মনে হয়েছে আমরা যে বেঁচে আছি, এটাইতো সবচেয়ে বড় ঘটনা! পরিবারের সবচেয়ে ছোট সদস্য থেকে শুরু করে সবচেয়ে বয়োজৈষ্ঠ্য ব্যক্তিটিকেও ‘কণ্ঠ’ ছবিটি আকর্ষণ করবে। সবারই দেখা উচিত।
চলতি বছরের মে মাসে ভারতে মুক্তি পেয়েছিলো শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ও নন্দিতা রায়ের আলোচিত ছবি ‘কণ্ঠ’। মুক্তির এগারো দিনেই ছবিটি আয় করে ২ কোটি রুপির বেশি। পশ্চিম বঙ্গে এখনো একাধিক প্রেক্ষাগৃহে চলছে ছবিটি। শুধু তাই নয়, মালায়ালাম ভাষাতেও রিমেক হচ্ছে ‘কণ্ঠ’।
একজন বাচিক শিল্পীর (রেডিও জোকি) দুরারোগ্য ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে কণ্ঠ হারানোর এক মর্মস্পর্শী গল্প আর সেই কণ্ঠ ফিরে পাওয়ার লড়াই নিয়ে তৈরি হয়েছে ছবিটি। ছবিতে জয়া আহসান ও পাওলি ছাড়াও অভিনয় করেছিলেন শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, কনীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, চিত্রা সেন, বিপ্লব দাশগুপ্ত প্রমুখ।
ছবি: জাকির সবুজ