জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’র মঞ্চে গান গেয়ে সারাদেশে ব্যাপক পরিচিতি পান আকবর। রিক্সাচালক থেকে আকবর গায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠা পান। বর্তমানে ভালো নেই সেই গায়ক।
তিনি গুরুতর অসুস্থ। গত ১০ দিন ধরে বিছানায় পড়ে কোকড়াচ্ছেন। ঠিকমত কথাও বলতে পারছেন না। একটু আধটু বললেও তার মুখ দিয়ে কথা বেরোচ্ছে জড়িয়ে জড়িয়ে।
আকবরের স্ত্রী কানিজ ফাতিমা সীমা চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, গত একমাস থেকে অসুস্থ আকবর। তবে গত শনিবার থেকে আকবরের কোমর থেকে দুই পা পুরোপুরি অবশ। নড়াচড়া করতে পারছে না। বিছানায় পড়ে আছে। শরীরে পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম পুরোপুরি শূন্য হয়ে গেছে। কিডনিতে সমস্যা রয়েছে।
২০১৭ সালে একই সমস্যায় ভুগেছিলেন গায়ক আকবর। সেবার হানিফ সংকেত নিজ উদ্যোগে ভারতে পাঠিয়ে আকবরের উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। তারপর তিনি সুস্থ হয়ে টুকটাক গান করতেন। তবে মাঝেমধ্যে ঢাকার পিজি হাসপাতালে কিডনি বিশেষজ্ঞ রফিকুল আলমের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নিতেন। এখানেও সাহায্য করতেন হানিফ সংকেত। সম্প্রতি আকবরের অসুস্থতার বিষয়ও অবগত হয়েছেন হানিফ সংকেত। সীমা বলেন, স্যার আমাদের জন্য অনেককিছু করেছেন। আর কত দেবেন!
আকবরের অসুস্থতার ব্যয়ভার বহন করতে জমিজমা যা কিনেছিলেন সবই বিক্রি করে ফেলেছেন। এখন আর্থিক সংকটে ভুগছে তার পরিবার।
এই গায়কের স্ত্রী সীমা বলেন, মিরপুরে ১৩ নম্বরে থাকি। আমাদের একমাত্র মেয়ে আফিয়া আক্তার অথৈ এখানকার একটি স্কুলে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ছে। তার লেখা পড়ার খরচ, সাংসারিক খরচ, আকবরের চিকিৎসার জন্য মোটা অংকের টাকা সবমিলিয়ে আর পারছি না। একমাস ধরে সে অসুস্থ। কয়েকটি শো ছিল। সেগুলো বাতিল করা হয়েছে। খুব কষ্টে দিন পার করছি।
মুঠোফোনে আকবরের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলেও তিনি কেঁদে ফেলেন। এরপর বলেন, আমি আবার সুস্থ হয়ে কাজে ফিরতে চাই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। একজন শিল্পী হিসেবে আমি তার আছে সহায়তা চাই। জীবনে অনেক পরিশ্রম করে আজকে আমি এ অবস্থানে এসেছি। প্রধানমন্ত্রী যদি তার মমতা ও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতেন তবে আমি ও আমার পরিবার চির ঋণী হতাম।
যশোর শহরের অলিগলিতে রিকশা চালাতেন আকবর। খুলনার পাইকগাছায় জন্ম হলেও আকবরের বেড়ে ওঠা যশোরেই। সেখানে টুকটাক গান করতেন। তবে গান নিয়ে ছোটবেলা থেকে হাতেখড়ি ছিল না। আকবরের ভরাট কণ্ঠের গানের কদর ছিল যশোর শহরে। সে কারণে স্টেজ শো হলে ডাক পেতেন। ২০০৩ সালে যশোর এম এম কলেজের একটি অনুষ্ঠানে গান গেয়েছিলেন আকবর। সেবার বাগেরহাটের এক ভদ্রলোক আকবরের গান শুনে মুগ্ধ হয়েছিলেন।
তারপর তিনি জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’তে চিঠি লেখেন আকবরকে নিয়ে। এরপর ইত্যাদির টিম আকবরের সঙ্গে যোগাযোগ করে। ওই বছরই ইত্যাদিতে ‘একদিন পাখি উড়ে যাবে যে আকাশে, ফিরবে না সেতো আর কারও আকাশে’- কিশোর কুমারের এ গানটি গেয়ে রাতারাতি পরিচিতি পেয়ে যান আকবর। এরপর আকবরকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। তিনি গায়ক পরিচয়ে পরিচিতি পান। পরে আকবরের ‘তোমার হাত পাখার বাতাসে’ গানটি তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিল।