হারানোর আছে সামান্যই। তবে পাওয়ার আছে অনেক। সেজন্য সামনে কঠিন এক চ্যালেঞ্জ। হায়দ্রাবাদে ড্র করতে হলেও বাংলাদেশকে গড়তে হবে ইতিহাস। ৭ উইকেট নিয়ে পাড়ি দিতে হবে দুর্গম পথ। কোহলিদের বোলিং আক্রমণের সামনে বুক চিতিয়ে লড়ার দায়িত্বটা এখন সাকিব-মুশফিক-রিয়াদদের। সেজন্য পঞ্চম দিনে সম্ভাব্য ৯০ ওভারের চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে।
চতুর্থ দিন শেষ সেশনের ৩৫ ওভার ব্যাট করেছে বাংলাদেশ। রবিচন্দ্রন অশ্বিন ও রবীন্দ্র জাদেজারা এর মাঝেই বোলিংয়ে বিষ ছড়িয়েছেন। পঞ্চম দিনে সংগ্রামের পথটা কতটা কঠিন হবে তার মহড়া হয়ে গেছে শেষ বিকেলে। এক সেশনেই টপঅর্ডারের তিন ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে চাপে পড়েছে মুশফিকের দল। স্কোরবোর্ডে ১০৩ রান। জয় থেকে ৩৫৬ রান দূরে। ড্রয়ের জন্য লড়তে হবে পুরো একটি দিন।
শেষ বিকেলে মাত্র ১৪ বলের মধ্যে সৌম্য ও মুমিনুলের উইকেট না হারালে জয় কিংবা ড্রয়ের আশা আরো উজ্জ্বলই হতো। তবে সম্ভাবনা পুরোপুরি মিইয়ে যায়নি। কেননা সাকিব-মুশফিক-রিয়াদদের মত অভিজ্ঞরা যে আছেন, প্রথম ইনিংসে ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটি তুলে নেওয়া মিরাজও ভরসার কাতারে। সাম্প্রতিক সময়ে টেস্টে প্রতিরোধের কিছু গল্পই তাতে রসদ যোগাচ্ছে।
সে পথে অতীত ইতিহাস ও সমীকরণের বেড়া ডিঙিয়ে এগোতে হবে টাইগারদের। আপাতভাবে ‘অসাধ্য সাধন’ মনে হলেও ক্রিকেট যে গৌরবময় অনিশ্চয়তার! তাতে প্রায় দেড় যুগ ভারতের মাটিতে ডাক না পাওয়ার বঞ্চনার জবাব তো দিতেই চাইবে টাইগাররা! ইতিহাস ও সমীকরণও তাই মিছে হয়ে যেতে পারে হায়দরাবাদে।
পরিসংখ্যান বলছে, ভারতের মাটিতে চতুর্থ ইনিংসে সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়ের ইনিংসটি ৩৮৭ রানের। চেন্নাইতে ২০০৮ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ভারত নিজেরাই ঘরের মাঠে রান তাড়ার এই রেকর্ডটি গড়েছিল। যেখানে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ইনিংসটিই ৪০০ রানের। নিজেদের অভিষেক টেস্টের প্রথম ইনিংসে সংগ্রহটি গড়েছিল বাংলাদেশ। দেড় যুগ পেরিয়ে অনেক পরিণত বাংলাদেশ আবারো বড় একটি ইনিংসের স্বপ্ন বুনতেই পারে।
বাংলাদেশ অনুপ্রেরণা নিতে পারে ২০১৫ সালের দক্ষিণ আফ্রিকা-ভারতের দিল্লি টেস্ট থেকেও। প্রথম ইনিংসে ভারতের করা ৩৩৪ রানের জবাবে প্রোটিয়ারা অলআউট হয়েছিল ১২১ রানে। পরে ভারত দ্বিতীয় ইনিংসে ২৬৭ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করে। তাতে ৪৮১ রানের লক্ষ্য দাঁড়ায় দক্ষিণ আফ্রিকার সামনে। হাতে ছিল পাঁচ সেশন। ম্যাচটি এবি ডি ভিলিয়ার্সদের জেতা হয়নি। তবে শেষ দিনের শেষ সেশন পর্যন্ত লড়াইয়ের অনন্য এক দৃষ্টান্ত গড়েছিলেন তারা।
ডি ভিলিয়ার্স দ্বিতীয় ইনিংসে ৩৫৪ মিনিট ব্যাট করে ২৯৭ বল খেলে ৪৩ রান করেছিলেন। হাশিম আমলা ২৮৯ মিনিট ব্যাট করে ২৪৪ বলে করেছিলেন ২৫ রান। টেম্বা বাভুমা ১১৭ বলে ৩৪ ও ফ্যাফ ডু প্লেসিস ৯৭ বলে ১০ রান করেছিলেন। নিজেদের সহজাত খেলাটাকে সময়ের দাবির সঙ্গে মিলিয়ে নেওয়ার এই দৃষ্টান্ত থেকে রসদ নিতে পারেন সাকিব-মুশফিকরা। এমন ধৈর্যশীলতা দেখাতে পারলেই রচিত হবে ইতিহাস। দেওয়া যাবে বঞ্চনার জবাব।
আরো একটি ইতিহাস প্রেরণা হতে পারে মুশফিকদের। ভারতে সফর করা দলগুলোর মধ্যে চতুর্থ ইনিংসে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ব্যাট করেছিল যারা, সেসব ম্যাচের সাতটির পাঁচটিই ড্রয়ে শেষ হয়েছিল। তাতে ষষ্ঠ দল হিসেবে নাম যুক্ত করার সুযোগ থাকছে বাংলাদেশেরও। কেননা চতুর্থ ইনিংসে টাইগাররা তো অতীতে ১৪২ ওভারও ব্যাট করেছে। সেটি ২০০৫ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ঢাকা টেস্টে। চতুর্থ ইনিংসে আরো দুবার একশর ওপর ওভারে ব্যাট করেছে বাংলাদেশ। দুটোই দেশের মাটিতে। শ্রীলঙ্কা ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। যার একটি গত বছরের ডিসেম্বরে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টে। সেই ম্যাচে চতুর্থ ইনিংসে ৮১.৩ ওভার ব্যাট করেছিল টাইগাররা। এবার আরো ৯০ ওভারের পরীক্ষা।
চতুর্থ ইনিংসে বড় ইনিংস খেলারও অভিজ্ঞতা আছে বাংলাদেশের। সবচেয়ে বড় সংগ্রহটি ৪১৩ রানের। ২০০৮ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ঢাকা টেস্টে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে চট্টগ্রামে ৩৩১ রানের আরেকটি ইনিংস আছে টাইগারদের। তবে চতুর্থ ইনিংসে ভারতের বিপক্ষেও তিনশ পেরোনো একটি ইনিংস আছে বাংলাদেশে। ২০১০ সালে চট্টগ্রাম টেস্টে ৭৫.২ ওভার ব্যাট করে ৩০১ রান করেও অবশ্য ম্যাচ বাঁচানো সম্ভব হয়নি।
সব মিলিয়ে আশা কিংবা নিরাশা থাকবে। সাদা চোখে মুদ্রার দুটি পিঠই যেমন থাকে। কিন্তু থার্ড ডাইমেনশন মেপে বললে আশা-নিরাশার মাঝে একটি পিঠ খুঁজে নেওয়া যায়। সেটি দোলাচল! যে দোলাচলকে স্থিরতায় টেনে নেওয়ার সক্ষমতা আছে সাকিব-মুশফিকদের। টেস্টের এক নম্বর দলের বিপক্ষে এখন সেটি কেবল মাঠের পারফরম্যান্সে অনূদিত করার চ্যালেঞ্জ।