সম্প্রতি কক্সবাজার ভ্রমণ করে গেলেন বলিউড অভিনেত্রী প্রিয়াঙ্কা চোপড়া। চারদিনের সেই সফরে তিনি সময় কাটান রোহিঙ্গা শিশু ও রোহিঙ্গা নারীদের সঙ্গে। সেটার প্রতিফলন দেখা যায় তার ফেসবুকেও। সেখানেও দেখা গেলে তার রোহিঙ্গা ক্যাম্প ভ্রমণের চিত্র।
বিগত কয়েকদিনেই রোহিঙ্গাদের নিয়ে বেশ কিছু অভিজ্ঞতা ফেসবুক বন্ধুদের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিয়েছেন। দেখে নিন তার বলা সেরা দশ অভিজ্ঞতার কথা।
তাদের কষ্ট আমাকে বুঝতে শিখিয়েছে
কক্সবাজার থেকেই আবার লস অ্যাঞ্জেলেসে ফেরত যান বলিউড অভিনেত্রী। পরে এক ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেছেন, ওখান থেকে ফিরে বার বার একটা কথাই মনে হচ্ছে কতটা সুবিধা আমি পেয়েছি। যারা আমার জীবন সহজ করতে যারা যারা সহায়তা করেছে তাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানায়। ইউনিসেফের মাঠ পরিদর্শনের অংশ হিসেবে আমি বাংলাদেশের রোহিঙ্গা রিফিউজি ক্যাম্পে গেছিলাম। সেখানে দেখেছি তাদের টিকে থাকার অপরিসীম শক্তি। টিকে থাকার এই যুদ্ধটা খুবই প্রাচীন। সেটা দেখে আমি বিনম্র।
ছোট্ট শিশুদের ভালোবাসার বন্ধনে
বালুখালি ক্যাম্পের ইউনিসেফ লার্নিং সেন্টারে পৌঁছাতেই একদল ছোট ছোট শিশু তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। এই অভিজ্ঞতাও ফেসবুক বন্ধুদের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নেন প্রিয়াঙ্কা। লিখেন, ওদের সঙ্গে কয়েক ঘণ্টা হাসতে হাসতে আর শিখতে শিখতে কাটিয়েছি। সময়টা আমাদের ভুলিয়ে দেয় আমরা কোথায় আছি, আবার যেন শিশু হয়ে গেছিলাম ওদের সঙ্গে। ওদেরই কেউ কেউ বড় হয়ে সাংবাদিক, ডাক্তার বা স্কুলি শিক্ষক বা মিলিটারি হবে।
শহীদার সঙ্গে প্রিয়াঙ্কা
আট মাস বয়সী ছোট্ট শহীদার কথাও বলেন প্রিয়াঙ্কা। তার সংক্রামক হাসিতে আক্রান্ত হন তিনি নিজেও। কয়েক মাস আগে তার ১৯ বছর বয়সী মা ১৫ দিন হেঁটে এসে পৌঁছেছে এই ক্যাম্পে। তখন সে ৬ মাসের গর্ভবতী ছিলো। গত আট মাসে এখানে জন্ম নেয়া ৬০ হাজার শিশু ও তাদের মায়েদের পুষ্টি নিয়ে কাজ করছে জামতলী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পুষ্টি কেন্দ্র। সেখানে শহীদার সঙ্গে খেলায় মেতে উঠেন তিনি। নিজ হাতে তাকে খাইয়েও দেন তিনি।
জামতলী ক্যাম্পে নারীবান্ধব কোণ
অতিরিক্ত ভীড় আর উচ্চশব্দের এই জায়গাতে গিয়েও কিছু ভিন্নরকম শান্ত পরিবেশ বোধ করেন এই বলিউড অভিনেত্রী। রোহিঙ্গা নারীরাও এই জায়গাটিকে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডার জায়গা বা কোনো পরামর্শ পাওয়ার, সুস্থতা সম্পর্কে জানার এবং কোনো দক্ষতা বৃদ্ধির যেমন ছবি আঁকা বা গান শেখার জায়গা হিসেবে মনে করে। সেখানে কিছু রোহিঙ্গা নারীর ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা শোনেন তিনি। বুঝতে পারেন এই জায়গাটাকেই তারা তাদের নিরাপদ স্বর্গ হিসেবে মনে করছে। প্রিয়াঙ্কা উপলব্ধি করেন, তারা পড়াশোনা করতে চায়। কারণ তারা যদি পড়াশোনা করে তাহলে পরিবারের জন্য প্রোটিন কিনতে পারবে এবং পরিষ্কার পানি পেতে পারবে। এবং সেগুলো খুবই মৌলিক চাহিদা।
মানসুর আলির কথা
১২ বছর বয়সী মানসুর আলীর কথাও ফেসবুক বন্ধুদের বলেন প্রিয়াঙ্কা। বালুখালি ক্যাম্পের এই ছেলেটি শুরুতে শুধু রক্তের দাগ আর সহিংসতার ছবিই আঁকতো, অথবা আঁকতো ফুটবল খেলার সময়ে তার ও বন্ধুদের উপরে হেলিকপ্টার থেকে আক্রমণের চিত্র। এখন তার ছবিতে ফুটে ওঠে আশার ছবি। সেই মানসুরের সঙ্গেও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কিছু সময় কাটান প্রিয়াঙ্কা।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রিয়াঙ্কার প্রথম দিন
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গিয়ে প্রথম দিনেই রোহিঙ্গা শিশুদের বিধ্বস্ত অবস্থা দেখেন প্রিয়াঙ্কা। তিনি উপলব্ধি করেন, পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শিশুরা মানসিকভাবে ও শারিরীকভাবে খুবই বিধ্বস্ত। আর এই ক্ষত তাদের সারাজীবন বয়ে বেড়াতে হবে। তারা খাবার ও পানি ছাড়াই কাটিয়েছে দিন। কখনো কখনো রাত কাটিয়েছে খোলা আকাশের নিচে মাঠে। কোনো ধরনের সাহায্য ছাড়াই। পায়ে হেঁটে পাড়ি দিয়েছে অনেকটা পথ। সেই তালিকায় ছিলো অনেক নারী, বয়স্ক মানুষ, গর্ভবতীরাও। বাংলাদেশে এসে তাদের কষ্ট কিছুটা কমেছে।
গত ২১ মে ইউনিসেফের হয়ে বাংলাদেশে আসের বলিউড অভিনেত্রী প্রিয়াঙ্কা চোপড়া। ফিরে যান ২৪শে মে।