কক্সবাজারের খুরুশকুলে জলবায়ু উদ্বাস্তু ও বিমানবন্দর সম্প্রসারণের ফলে গৃহহীন হওয়া ৩ হাজার ৮০৮টি পরিবারের পুনর্বাসনে ১১৯টি ৫ তলা ভবন নির্মাণ করবে সরকার। এতে ব্যয় হবে ১ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা।
প্রধানমন্ত্রী ও একনেকের চেয়ারপারসন শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মঙ্গলবার গণভবনের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে শেরে বাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় এই প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
একনেক সভা শেষে সাংবাদিকদের সামনে বিস্তারিত তুলে ধরেন পরিকল্পনা কমিশন বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. আসাদুল ইসলাম এবং পরিকল্পনা কমিশনের অন্যান্য সদস্যরা।
কক্সবাজারের খুরুশকুলের প্রকল্পটি ছাড়াও আরও ৬টি প্রকল্পেরও অনুমোদন দেয়া হয়ে একনেক সভায়। যার মধ্যে দুটি ছিল সংশোধিত।
এই ৭টি প্রকল্পে মোট ব্যয় হবে ১০ হাজার ৭০২ কোটি ২৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ৬ হাজার ৪৫৯ কোটি ২৭ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক উৎস হতে প্রাপ্ত ঋণ ৪ হাজার ২৪২ কোটি ৯৬ লাখ টাকা।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব অনুয়ায়ী, কক্সবাজারের খুরুশকুলে ১১৯টি ৫ তলা ভবন নির্মাণ ছাড়াও প্রায় ২৩ কিলোমিটার আভ্যন্তরীণ ও সংযোগ সড়ক, ৩৮ কিলোমিটার ড্রেন, ২৮টি বিশেষ পাম্প, ৮ কিলোমিটার পানির লাইন, ১৪টি ওভারগ্রাউন্ড ওয়াটার রিজার্ভার, ৪টি সাইক্লোন সেন্টার, সোলার প্যানেলসহ আরও বেশ কিছু অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে।
গৃহহীন পরিবারগুলোর জন্য আধুনিক সুযোগ-সুবিধায় থাকাসহ তাদের জীবিকা নির্বাহের উদ্যোগও প্রকল্পের আওতায় নেয়া হবে বলে প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
চলতি বছরের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়।
অনুমোদিত অন্যান্য প্রকল্পগুলোর মধ্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ‘প্রাণিপুষ্টির উন্নয়নে উন্নত জাতের ঘাস চাষ সম্প্রসারণ ও লাগসই প্রযুক্তি হস্তান্তর’ প্রকল্প রয়েছে। এতে খরচ হবে ১১৬ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। চলতি বছরের এপ্রিল থেকে ২০২৪ সালের মার্চের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের ‘ওয়েস্টার্ন ইকোনোমিক করিডোর অ্যান্ড রিজিওনাল অ্যানহ্যান্সম্যান্ট প্রোগ্রাম (ডব্লিউইসিএআরই) ফেজ-১: রুরাল কানেকটিভিটি, মার্কেট অ্যান্ড লজিসটিক ইনফ্রাসট্রাকচার ইমপ্রোভমেন্ট প্রজেক্ট (আরসিএমএলআইআইপি)’ প্রকল্পে খরচ হবে ২ হাজার ১৮০ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। তার মধ্যে ৬৪৩ কোটি ৬৮ লাখ দেবে সরকার এবং বিশ্বব্যাংক ঋণ দেবে ১ হাজার ৫৩৭ কোটি টাকা। চলতি বছরের অক্টোবর থেকে ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের ‘উইকেয়ার ফেজ-১: ঝিনাইদহ-যশোর মহাসড়ক (এন-৭) উন্নয়ন’ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৪ হাজার ১৮৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকার দেবে ১ হাজার ৪৮২ কোটি ৫ লাখ এবং বিশ্বব্যাংক ঋণ দেবে ২ হাজার ৭০৫ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। চলতি বছরের অক্টোবর থেকে ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের ‘পায়রা বন্দরের কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো/সুবিধাদির উন্নয়ন (২য় সংশোধিত)’ প্রকল্পের দ্বিতীয় সংশোধন আনা হয়েছে। প্রকল্পটির মূল খরচ ছিল ১ হাজার ১২৮ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। প্রথম সংশোধনে তা বাড়িয়ে করা হয় ৩ হাজার ৩৫০ কোটি ৫১ লাখ এবং আজ দ্বিতীয় সংশোধনীতে তা আরও বাড়িয়ে করা হলো ৪ হাজার ৩৭৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। ২০১৫ সালের জুলাইয়ে শুরু হওয়া প্রকল্পটি ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত সময় বাড়ানো হলো।
বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের ‘শেখ হাসিনা তাঁতপল্লী স্থাপন-১ম পর্যায় (১ম সংশোধিত)’ প্রকল্পের প্রথম সংশোধন আনা হয়েছে। এতে খরচ বেড়েছে ৫৪ কোটি ১৫ লাখ টাকা। প্রকল্পটির মূল খরচ ছিল ২৫৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা। প্রথম সংশোধনে তা বাড়িয়ে করা হলো ৩০৭ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। ২০১৮ সালের জুলাইয়ে শুরু হওয়া প্রকল্পটির মেয়াদ বাড়িয়ে করা হলো ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত।
সর্বশেষ নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের ‘আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহ্যান্সিং একসেস টু সার্ভিসেস (আইডিইএ) (২য় পর্যায়)’ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১ হাজার ৮০৫ কোটি ৯ লাখ টাকা। চলতি বছরের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।