বিজয়ের এই মাসে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করে ও ইউনাইটেড ন্যাশনস সেন্ট্রাল ইমার্জেন্সি রেসপন্স ফান্ড (ইউএনসিইআরএফ)-এর সহযোগিতায় কক্সবাজারের মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য একটি স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র স্থাপন করল আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম)। গত ১ ডিসেম্বর পালিত হয়েছিল জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা দিবস।
আজ সোমবার কক্সবাজারে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রটি শহরের মোটেল রোডে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কার্যালয়ের নিচতলায় স্থাপন করা হয়েছে। জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ এই স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রটির জন্য এই জায়গা বরাদ্দ দিয়েছে যেখানে আইওএমের স্বাস্থ্য এবং ট্রানজিশন এন্ড রিকভারি ডিভিশন যৌথভাবে বরাদ্দকৃত জায়গাটিকে স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রে রূপান্তর করেছে।
১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে আনুমানিক ত্রিশ লক্ষ লোকের আত্মত্যাগের মাধ্যমে পাকিস্তান থেকে স্বাধীনতা অর্জন করে বাংলাদেশ। এখনো বেঁচে থাকা মুক্তিযোদ্ধারা প্রায়ই বার্ধক্যজনিত রোগ এবং জটিলতায় ভুগছেন। তাই তাদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার পাশাপাশি যথাযথ স্বাস্থ্যসেবার সুবিধার দরকার। কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের হিসেব মতে কক্সবাজারে ৩৬৫ মুক্তিযোদ্ধা যাদের অধিকাংশেরই বয়স ৬৫ বছরর বেশি।
কক্সবাজারে আইওএমের স্বাস্থ্য বিভাগ উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলার স্থানীয় জনগোষ্ঠী এবং রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জরুরী ও প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করছে। বাংলাদেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দীর্ঘদিনের সহযোগী সংস্থা আইওএম চাহিদাসম্পন্ন জনগোষ্ঠীদের কাছে পৌঁছাতে জাতীয় স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে অপরিহার্য বলে মনে করে।
স্বাস্থ্য সুবিধা উদ্বোধনকালে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন বলেন, এই ক্লিনিকটি প্রবীণ মুক্তিযোদ্ধাদের অবিলম্বে চিকিৎসা সহায়তা দিবে। বিভিন্ন উদ্যোগে আইওএম কক্সবাজারে জেলা প্রশাসনকে সহায়তা করে আসছে। তবে এই উদ্যোগটি বিশেষভাবে প্রশংসনীয় কারণ এটি আমাদের জাতীয় বীরদের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় চাহিদাটির জন্য সুব্যবস্থা করবে।
সদ্য চালু হওয়া এই স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রটিতে যে সেবাগুলো পাওয়া যায় সেগুলোর মধ্যে রয়েছে স্বাস্থ্য পরীক্ষা, সাধারণ রোগের জন্য নিরাময়মূলক চিকিৎসা পরামর্শ, বিনামূল্যে প্রয়োজনীয় ওষুধ, কক্সবাজার সদর হাসপাতালে রোগ নির্ণয় পরীক্ষা (আইওএমের স্বাস্থ্য রেফারেল দলের সহায়তায়) এবং জীবনধারা ও স্বাস্থ্য শিক্ষামূলক পরিষেবা।
প্রবীণ মুক্তিযোদ্ধাগণ এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা এই স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রটিতে সপ্তাহে দু’দিন (শনি ও সোমবার) স্বাস্থ্য পরামর্শ ও সেবা পাবেন যদিও প্রয়োজনের উপর নির্ভর করে পরবর্তীকালে এই সময় বাড়ানো হতে পারে। জেলা প্রশাসন কর্তৃপক্ষ প্রাপ্য উপকারভোগীদের শনাক্ত এবং যাচাই করবে যা পরে আইওএম তালিকাভুক্ত করবে। ডাটা গোপনীয়তার নির্দেশিকাগুলি অনুসরণ করে যোগ্য সুবিধাভোগীরা আইওএমের স্বাস্থ্য বিভাগ দ্বারা পরিচালিত একটি কেন্দ্রীয় ডাটাবেসে নিবন্ধিত হবেন এবং তাদেরকে একটি আইডি প্রদান করা হবে যার সাহায্যে তারা বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবাগুলো নিতে পারবেন।
কক্সবাজারে আইওএম-বাংলাদেশ মিশনের উপ-প্রধান ম্যানুয়েল পেরেইরা বলেন, আইওএম এই নতুন ক্লিনিকের মাধ্যমে কক্সবাজারের প্রবীণ মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সহযোগিতা করতে পেরে সন্তুষ্ট। প্রবীণরা যাতে তাদের বয়স বাড়ার পাশাপাশি সম্মানের সাথে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা এবং চিকিৎসার সবধরনের অভিগম্যতা পান তা নিশ্চিত করা জরুরি।