কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে বেড়াতে আসা পর্যটকদের বিনোদন দেয়া ঘোড়া গুলোর চরম দুঃসময় যাচ্ছে। এতে বিপাকে ঘোড়া মালিকরা। লকডাউন, খাদ্য সংকট আর ঘোড়ার মৃত্যু নিয়ে শুরু হয়েছে তোলপাড়। গঠন করা হয়েছে তদন্ত কমিটি, সচিবসহ ১৩ জনকে দেয়া হয়েছে লিগ্যাল নোটিশ।
রোববার হাইকোটে মামলা করবে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)। পর্যাপ্ত খাবার যোগান দিতে না পারা ও নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে চলতি বছরে মারা গেছে ৬টি ঘোড়া।
প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তার মতে এত ঘোড়ার মৃত্যু হয়নি। তদন্ত কমিটির রির্পোটে সব বেরিয়ে আসবে। সদর উপজেলা প্রশাসন থেকে এসব ঘোড়াকে ২ দফায় খাদ্য দেয়া হয়েছে।
কক্সবাজার ঘোড়া মালিক সমিতির সভাপতি আহসান উদ্দিন নিশান জানিয়েছেন, লকডাউনে ঘোড়া মালিকরা খুবই বেকায়দায় রয়েছে। ঘোড়াগুলোকে দৈনিক প্রয়োজনীয় খাবার যোগান দিতে না পেরে এবং নানা কারণে চলতি বছরে ৬টি ঘোড়া মারা গেছে। এরমধ্যে কক্সবাজার শহরের সমিতিপাড়া এলাকার আমির হোসেনের ১টি, মোহাম্মদ আলমের ১টি ও আকতার হোসেনের ১টি খাবারের অভাবে মারা গেছে। এছাড়াও শহরের পেশকারপাড়া এলাকার মোহাম্মদ কাদেরের ২টি ঘোড়া অসুস্থ হয়ে এবং রুবেলের ১টি ঘোড়া জেলগেট এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে।
আহসান উদ্দিন নিশানের ভাষ্যমতে, প্রতিটি ঘোড়ার মুল্য ৪৫ থেকে ৭০ হাজার টাকা। মারা যাওয়ার পেছনে ঘোড়া খাদ্য সংকটসহ নানা কারণ রয়েছে। এই খাদ্য সংকটে পড়ে কিছু কিছু মালিক ঘোড়া শহরে ছেড়ে দিয়েছে। যার কারণে নানা কারণে এসব ঘোড়ার মৃত্যু হয়েছে।
কক্সবাজার জেলা প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডা: অসীম বরণ সেন জানান, খাদ্য সংকটে পড়ে ঘোড়া মারা যাওয়ার বিষয়টি সত্য নয়। এত ঘোড়া কোনভাবেই মারা যেতে পারে না। এরপরও পর প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছে। উক্ত কমিটি আগামী ২/৩ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দেবে। তখন সব কিছু জানা যাবে।
এ ঘটনায় সুস্থ ও মৃত ঘোড়াগুলোকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ ১৩জনকে লিগ্যাল নোটিশ দিয়েছেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)।
এদিকে, খাদ্য সংকটে ঘোড়ার মৃত্যুর ঘটনায় বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) ১৩জনে বিরুদ্ধে লিগ্যাল নোটিশ দিয়েছেন। বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্ট ও বেলার নিযুক্ত আইনজীবী সাঈদ আহমেদ কবীর স্বাক্ষরিত উক্ত লিগ্যাল নোটিশে মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ ভেটেরিনারি কাউন্সিলের সভাপতি, কক্সবাজার জেলা প্রশাসক, কক্সবাজার পুলিশ সুপার, কক্সবাজার পৌর মেয়র, কক্সবাজার জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা, কক্সবাজার সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা, কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ও কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রয়েছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা),এর প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন,এ বিষয়ে আগামী রবিবার হাইকোটে মামলা করা হবে। এখন মামলার জন্য সব কিছু চুড়ান্ত।
কক্সবাজার সৈকতের ঘোড়াগুলোর খাদ্য সংকটের খবরে একটি ব্যবসায়িক কোম্পানি এক মাসের খাদ্য সহায়তা দিতে এগিয়ে এসেছে।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আমিন আল পারভেজ বলেন, করোনায় লকডাউনে অসহায় মানুষের খাদ্য সহায়তার পাশাপাশি কক্সবাজার সৈকতের ঘোড়াগুলোর জন্য মালিকদের পশুখাদ্য হিসাবে ভূষির বস্তা বিতরণ করা হয়েছে দুই দফায়। সবমিলে বিষয়টি গুরুত্বসহকারে নিয়েছে প্রশাসন।