কক্সবাজার শহরে কলাতলীর হোটেল-মোটেল জোনে আবাসিক হোটেলে অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া এক ছাত্রীকে দুইদিন জিন্মি রেখে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে।
এ ঘটনায় মামলা দায়েরের এক সপ্তাহ পরও কোন আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
কক্সবাজার সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. আব্দুল হালিম জানান, গত ১৮ ডিসেম্বর ভূক্তভোগী ছাত্রীর বাবা বাদী হয়ে পাঁচ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা ৪ জনসহ নয়জনকে আসামী করে মামলা করেছেন।
মামলার আসামীরা হল, কক্সবাজার শহরের উত্তর নুনিয়াছড়া এলাকার নজরুল ইসলামের ছেলে মো. আশিক (২৭) ও তার মা রাজিয়া বেগম (৫৫), বাবা নজরুল ইসলাম (৬০), ভাই মো. কামরুল (৩৪) এবং শহরের ঝাউতলা গাড়ীর মাঠ এলাকার মো. হায়দার ওরফে হায়দার মেম্বারের ছেলে রিয়াজ উদ্দিন (৪০)।
মামলার এজাহারে বাদীর অভিযোগ, গত ১৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় ওই স্কুলছাত্রী এক প্রতিবেশীর বাড়ীতে যাওয়ার সময় অভিযুক্ত মো. আশিক সহ ৩/৪ জন যুবক জোর করে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। পরে তাকে (ভুক্তভোগী ছাত্রী) শহরের হোটেল-মোটেল জোনের সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সামনে অবস্থিত মমস্ গেস্ট হাউজ নামের নিয়ে যায়। পরে ওই স্কুলছাত্রীকে হোটেলটিতে জিন্মি রেখে জোরপূর্বক একাধিকবার নির্যাতন করা হয়।
অভিযুক্ত যুবক আশিকের স্বজনদের দাবি, ওই স্কুলছাত্রীর সঙ্গে আশিকের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। আশিক পরিবার তাদের মধ্যে সামাজিকভাবে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু মেয়েটির পরিবার তাতে রাজি ছিল না। এখন ঘটনাকে ভিন্নখাতে ব্যবহার করছে।
ভুক্তভোগী ছাত্রীর অভিযোগ, গত কয়েক মাস ধরে ওই ছাত্রী স্কুলে ও প্রাইভেটে আসা-যাওয়ার পথে মো. আশিক প্রেম নিবেদনের পাশাপাশি কু-প্রস্তাব দিয়ে আসছিল। এতে মেয়েটি রাজি না হওয়ায় নানাভাবে অভিযুক্ত যুবকসহ তার বন্ধু ও সহযোগীরা মিলে উত্যক্ত করত। এ ব্যাপারটি সে তার বাবা-মাকে জানায়।
ভুক্তভোগী ছাত্রী বলে,”আমার বাবা-মা সংঘটিত অনৈতিক আচরণের ব্যাপারে আশিকের অভিভাবকদের অভিযোগ করেন। তার (আশিক) বাবা-মা অভিযোগের ব্যাপারে কোন ধরণের কর্ণপাত না করে উল্টো ইন্ধন দেয়। গত ১৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় পার্শ্ববতী এক প্রতিবেশীর বাড়িতে যাচ্ছিলাম। এসময় আশিকসহ আরো ৩/৪ জন যুবক আমাকে জোরপূর্বক গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। পরে তারা আমাকে নিয়ে শহরের হোটেল-মোটেল জোনের মমস্ গেস্ট হাউজ নামের এক আবাসিক হোটেলে উঠে। ”
“সেখানে (হোটেলে) দুইদিন ধরে জিন্মি রেখে আমাকে ইচ্ছের বিরুদ্ধে আশিক জোরপূর্বক একাধিকবার নির্যাতন করে। পরে গত ১৫ ডিসেম্বর রাত ৮ টায় সে (আশিক) হোটেলটি থেকে গাড়িতে তুলে তার বাড়ির সামনে নামিয়ে দিয়ে কৌশলে সটকে পড়ে। খবর পেয়ে সেখান থেকে আমার বাবা -মা উদ্ধার বাড়ি নিয়ে যায় ।”
মেয়েটির বাবা বলেন, গত ১৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় তার মেয়ে পাশের এক প্রতিবেশীর বাড়ীতে যাওয়ার জন্য বের হয়। দীর্ঘ সময় পরও ঘরে ফিরে না আসায় এলাকার নানা সম্ভাব্য নানা স্থানে খোঁজ নিয়েও পাননি। এরপর ওইদিন রাতে মেয়ের নিখোঁজের ব্যাপারে কক্সবাজার সদর থানায় লিখিতভাবে সাধারণ ডায়েরি করি। ঘটনার দুইদিন পর গত ১৫ ডিসেম্বর রাতে স্থানীয়রা আমার মেয়েকে অভিযুক্ত আশিকের বাড়ির সামনে দেখতে পেয়ে খরব দেয়। পরে তাকে সেখান থেকে উদ্ধার করে বাড়ী নিয়ে আসি।
মামলার বাদী অভিযোগ করেন, “আমার মেয়ের সন্ধান পাওয়ার পরপরই ঘটনার ব্যাপারে আশিকের বাবা-মাকে অভিযোগ করি। ঘটনায় তাদের ছেলে জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেন। তারা (আশিকের বাবা-মা) উল্টো আমাকে হুমকি দিয়ে বলেন, ঘটনার ব্যাপারে মামলা করলে বা আইনের আশ্রয় নিলে আমার মেয়েকে পুনরায় অপহরণ করে হত্যার পর লাশ গুম করে ফেলবে। এরপর কোন উপায় না দেখে আমার মেয়েকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি করি।
ভূক্তভোগী মেয়েটির বাবা বলেন, পরে গত ১৮ ডিসেম্বর এ ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত মো. আশিকসহ ৫ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত পরিচয়ের আরো ৪ জনে বিরুদ্ধে কক্সবাজার সদর থানায় এজাহার দায়ের করেন।
মামলার বাদী অভিযোগ করে বলেন, মামলা প্রত্যাহারের জন্য আসামিরা এখনো নানাভাবে হুমকি প্রদান করে যাচ্ছে। গত দুইদিন আগে অভিযুক্ত মো. কামরুল আমার ঘরে এসে হুমকি দিয়ে যায়। এসময় মামলা প্রত্যাহার না করলে পরিবারের সদস্যদের চোখ উপড়ে ফেলারও হুমকি দেয়। এ ব্যাপারে মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে অভিযোগ করা হয়েছে।
ঘটনার ব্যাপারে কথা বলতে মো. আশিকের মা ও মামলার ২ নম্বর আসামি রাজিয়া বেগমের মোবাইল ফোনে কল দেওয়া হলে রিসিভ করেন তার পুত্রবধূ শাহেনা আক্তার। তার দেবর আশিকের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সত্য নয় বলে দাবি করেন তিনি।
শাহেনা বলেন, তার দেবর আশিক ও স্কুলছাত্রীর মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে। মেয়েটিকে বউ করে আনতে তার (শাহেনা) রাজি রয়েছে। কিন্তু এতে মেয়ের পরিবার রাজি নয়।
এখন ওই ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রভাবিত করতে মেয়েটির পরিবার অপহরণ করে ধর্ষণ ঘটনার নাটক সাজাচ্ছে বলে দাবি করেন অভিযুক্ত আশিকের ভাবী।
ঘটনার সত্যতা জানতে যোগাযোগ করা হয় ঘটনাস্থল মমস্ গেস্ট হাউজের ব্যবস্থাপক মো. শাহীনের সঙ্গে।
শাহীন বলেন, গত ১৩ থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত অভিযুক্ত যুবক আশিক ও ওই স্কুলছাত্রীর নামের কেউ হোটেলে অবস্থান করেনি। তাছাড়া ওই নামের কাউকে তিনি চেনেন না।
তবে ওই তিনদিনের ( ১৩ থেকে ১৫ ডিসেম্বর ) হোটেলের সিটিটিভি’র ফুটেজ দেখার কথা বললে হোটেল ব্যবস্থাপক সেগুলো সংরক্ষিত নেই জানিয়েছেন।
মামলা নথিভূক্তের এক সপ্তাহ পরও কোন আসামি গ্রেপ্তার না হওয়ার বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তা ও কক্সবাজার সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. আব্দুল হালিম বলেন, মামলার তদন্তকাজ অব্যাহত রয়েছে। আসামিরা পলাতক থাকায় গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।
তবে আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশ অভিযান অব্যাহত রেখেছে বলে জানান মামলার এ তদন্ত কর্মকর্তা।