রাজধানীর কোন কোন এলাকায় ওয়াসার পানি দূষিত ও অনিরাপদ, তা পরীক্ষা করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল না করায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট।
সেই সঙ্গে ঢাকা ওয়াসার পানি পরীক্ষায় কত টাকা খরচ হবে, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কাছে তা জানতে চাওয়া হয়েছে।
আগামী বুধবারের মধ্যে এই তথ্য আদালতে দাখিল করার নির্দেশ দিয়ে বুধবার এ বিষয়ে পরবর্তী আদেশের জন্য দিন ধার্য করেছেন হাইকোর্ট।
সোমবার বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদেশের আগে আদালত বলেন, ঢাকা ওয়াসার ১১টি পানির জোন রয়েছে। প্রত্যেকটি থেকে ২ বোতল পানি নিয়েই তো পরীক্ষা করা যায়। কিন্তু তারা (স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়) তা করছে না। তারা বলছে, পানি পরীক্ষার জন্য প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। কিন্তু কত টাকা লাগবে তাও বলছে না। তারা হাইকোর্টকে কি হাইকোর্ট দেখাচ্ছে?
এসময় আদালতে ছিলেন রিট আবেদনকারী আইনজীবী মো. তানভীর আহমেদ। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু।
আদালতে রিট আবেদনকারী আইনজীবী জানান, ঢাকার ১৬টি এলাকার পানি ব্যবহারের অনুপযোগী। এসব এলাকা হলো-জুরাইন, দনিয়া, শ্যামপুর, উত্তরা সেক্টর ৪, মিরপুর, পল্লবী, লালবাগ, রাজার দেউড়ি, মালিবাগ, বনশ্রী, মাদারটেক, গোড়ান, রায়সাহেব বাজার, মোহাম্মদপুরের বশিলা, কাজিপাড়া ও সদরঘাট।
এর আগে গত বছর ৬ নভেম্বর হাইকোর্টের দেওয়া এক আদেশে ঢাকা ওয়াসার পানি পরীক্ষার জন্য চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) এবং আইসিডিডিআরবি’র প্রতিনিধির সমন্বয়ে এ কমিটি গঠন করা হয়।
এরপর কমিটির সদস্যদের নামের তালিকা গত ১৮ এপ্রিল অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ে পাঠায় মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-সচিব মোহাম্মাদ সাঈদ-উদ-রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বলা হয়, ‘নমুনা সংগ্রহ করে তার নির্দিষ্ট পরীক্ষার পর বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদন তৈরি করতে একটি তহবিলের পাশাপাশি ল্যাবরেটরিসহ ঢাকা ওয়াসার সামগ্রিক প্রচেষ্টা দরকার। এসব কাজের জন্য যদি তহবিল গঠন করা হয় এবং বিরতিহীনভাবে ওয়াসার তিনটি ল্যাবরেটরিতে একযোগেও যদি কাজ করে প্রতিবেদন তৈরি করে তাতেও কমপক্ষে চার মাস সময় প্রয়োজন।’
সোমবার স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-সচিবের সেই চিঠি উপস্থাপন করে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আদালতকে জানান, কমিটি প্রতিবেদন দিতে একটি কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করেছে। তা আদালতে উপস্থাপনের জন্য সময় দরকার।
এর আগে বাংলাদেশের পানি সরবরাহ, পয়োনিষ্কাশন, স্বাস্থ্যবিধি ও দরিদ্রতা নিয়ে সম্প্রতি বিশ্বব্যাংক একটি প্রতিবেদন দেয়। গত ১১ অক্টোবর রাজধানীর একটি হোটেলে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। সেখানে বাংলাদেশ নিয়ে তৈরি করা প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘দেশের প্রায় সাড়ে সাত কোটি মানুষ অপরিচ্ছন্ন এবং অনিরাপদ উৎসের পানি পান করছে। পানির নিরাপদ উৎসগুলোর ৪১ শতাংশ ক্ষতিকারক ই-কোলাই ব্যাকটেরিয়াযুক্ত এবং ১৩ শতাংশে রয়েছে আর্সেনিক।
এ প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, পাইপলাইনের পানির ৮২ শতাংশেই রয়েছে ই-কোলাই। ৩৮ শতাংশ টিউবওয়েলের পানিতে এই ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া পাওয়া গেছে। পাকস্থলী ও অন্ত্রের প্রদাহের জন্য ই-কোলাই ব্যাকটেরিয়াকে দায়ী করা হয়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিম্নমানের পানি এবং পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা দেশের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে। এরপর পানি পরিক্ষাসহ এবিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. তানভীর আহমেদের একটি রিট করেন।
সে রিটের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট ঢাকা মহানগর এলাকায় সরবরাহ করা ওয়াসার পানিতে ই-কোলাই ব্যাকটেরিয়া আছে কিনা তা পরীক্ষার নির্দেশ দেন। এবং পানি পরীক্ষা করে দুই মাসের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল নির্দেশ দেওয়া হয়।