মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ওসি (বরখাস্ত) প্রদীপ কুমার দাশকে বিপিএম পিপিএম পদক দেয়ার কারণে পদকের সম্মান ভূলণ্ঠিত হয়েছে বলে মনে করছেন আদালত।
দেশের আলোচিত সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার রায় ঘোষণার ৭ দিন পর সোমবার মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হয়েছে। ২৮৮ পৃষ্ঠার রায়ে ওসি প্রদীপের নানা বিষয় তুলে ধরার পাশাপাশি আদালত ওই মন্তব্য করেছেন।
কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি এডভোকেট ফরিদুল আলম বলেন, ওসি প্রদীপের মতো একজন বির্তকিত পুলিশ অফিসার এতো অপর্কম করার পরও বিপিএম, পিপিএম পদকে ভূষিত করা পুলিশ বাহিনীর জন্য লজ্জার বলে মনে করেন আদালত।
গত ৩১ জানুয়ারি সেনাবাহিনীর (অব.) মেজর সিনহা হত্যার রায়ে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাইল বলেন, ওসি প্রদীপের অতীত রেকর্ড খারাপ হওয়া সত্ত্বেও তাকে একাধিকবার বিপিএম, পিপিএম পদকে ভূষিত করায় ওই পদকের মর্যাদাকে ভূলুণ্ঠিত করা হয়েছে।
রায়ে আরও উল্লেখ করা হয়, আসামি প্রদীপ কুমার দাশ বিচার বহির্ভূতভাবে হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়াদের ডাকাত, মাদক ব্যবসায়ী, মানবপাচারকারী হিসেবে অপরাধী সাব্যস্ত করে হত্যা করে ক্রসফায়ারের নাটক সাজিয়েছেন। প্রায় প্রত্যেক হত্যাকাণ্ডের শিকার ভুক্তভোগী বা ভুক্তভোগীদের নিকটাত্মীয়,পাড়া-প্রতিবেশীসহ ৩০-৪০ জনকে আসামি করে একটি হত্যা, একটি মাদক এবং একটি অস্ত্র মামলা করতেন।
উল্লেখ্য মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান ওসি প্রদীপ কুমার দাশের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ২০৫তম শিকার।
রায়ে বলা হয়েছে, এই প্রসঙ্গে রাষ্ট্রপক্ষ যুক্তিতর্ক শুনানিকালে ১০৪ জন ভিকটিমের সুনির্দিষ্ট নাম-ঠিকানা দাখিল করেন, যারা ওসি প্রদীপ কুমার দাশের ক্রসফায়ার বা বন্দুকযুদ্ধের শিকার। সময় স্বল্পতার কারণে অবশিষ্টদের সুনির্দিষ্ট নাম-ঠিকানা উপস্থাপন করা যায়নি।
এতে দেখা যায়, ওসি প্রদীপ কুমার দাশ বহুদিন ধরে পরিকল্পিত, ষড়যন্ত্রমূলক ও উদ্দেশ্যমূলকভাবে সাজানো ঘটনার অবতারণা করে, যখন যাকে ইচ্ছা খুন করার মানসিকতা ও প্রবণতা লালন করে আসছিলেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী উল্লেখ করেছেন, আসামি ওসি প্রদীপ কুমার দাশ মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলায় আটক না থাকলে এতদিনে তিনি ও তার অনুচরদের হাতে আরও বহুলোক বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হতেন। এই আসামি প্রদীপ এমনই এক প্রদীপ, যার নিচে শুধুই অন্ধকার।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ওসি প্রদীপ বিপিএম, পিপিএম পাওয়ার জন্য আবেদনের ক্ষেত্রে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মানুষ হত্যাকে মাদক নির্মূলে সফলতা হিসেবে উল্লেখ করে নিহতের সবাইকে মাদককারবারি হিসেবে দাবি করেছিল।
এ প্রসঙ্গে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ও পিপি অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম বলেন, আশাকরি ভবিষ্যতে এমন বিতর্কিত কেউ আর পদকের জন্য ভূষিত হবে না।
২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর পুলিশ চেকপোস্ট পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান।
গত ৩১ জানুয়ারি আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণা করে আদালত। রায়ে ওসি (বরখাস্ত) প্রদীপ কুমার দাশ ও পরিদর্শক মো. লিয়াকত আলীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি আরও ছয় আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও রায়ে বেকসুর খালাস দেয়া হয় সাতজন পুলিশ সদস্যকে।