২০১১ সালে পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে ওসামা বিন লাদেনের ওপর মার্কিন সেনাবাহিনী হামলা চালানোর সময় সেই অভিযানে লাদেনের দুর্লভ কিছু তথ্য, চিঠি, ভিডিও চিত্র উদ্ধার করেছেন তারা। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার পরিচালকের অফিস থেকে এইসব তথ্য এখন অনলাইন ইমেজ হিসেবে প্রকাশ করা হয়েছে।
বুধবার গোয়েন্দা সংস্থার পরিচালকের অফিস থেকে বলা হয়েছে, ২০১৪ সালের আইনের দাবিতে লাদেনের মৃত্যুর ৪ বছর পরে সরকারি সংস্থা দ্বারা পর্যালোচনা করার পর এই সব তথ্য এখন জনগণের সামনে নিয়ে আসা হয়েছে।
অনুসন্ধানী সাংবাদিক সিমর হার্স,ওবামা প্রশাসন অ্যাবোটাবাদে পাওয়া লাদেনের দুর্লভ তথ্যগুলোর গুরুত্বকে ব্যাপকভাবে বিকৃত করেছেন বলে অভিযোগ করে একটি লেখা প্রকাশ করেন। এর ১ সপ্তাহের মধ্যেই এই তথ্যগুলো সবার সামনে নিয়ে আসা হয়। ওবামা প্রশাসন এই অভিযোগ অস্বীকার করেন।
কিছু বিস্ময়কর, চমকপ্রদ তথ্য ছাড়া ১০৩ টি চিঠি, কিছু ভিডিও চিত্র, রিপোর্টগুলোকে বুধবার জনগণের কাছে উপস্থাপন করায় সবাই বিখ্যাত এই সন্ত্রাসী গ্রুপের মিশন সম্পর্কে জানতে পারেন। যেখানে দেখা যায় লাদেনের প্রধান লক্ষ্য ছিল “আল্লাহর নামে আমেরিকান, ইউরোপিয়ান ও ইহুদীদের হত্যার পথ বের করতে হবে।”
এইসব তথ্যের মধ্যে আলকায়দায় সামিল হতে চায় এমন মানুষদের জন্য চাকরির আবেদন ফর্মও আছে যেখানে কোনো প্রার্থীকে তার গতানুগতিক পড়াশুনা ও সখের বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়নি। বরং কিছু শূন্যস্থান পূরণ ছিল। জরুরি প্রয়োজনে শহীদ হতে পারবে কিনা,আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণ ঘটাতে পারবে কিনা এই জাতীয় প্রশ্নের উত্তর দিয়ে জিহাদীদের আল কায়দা গ্রুপে সামিল করা হতো।
একটি ভিডিও চিত্রে সাবেক এই আল কায়দা নেতা তার অনুসারীদের বলেছেন, মার্কিনদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ছাড়া অন্য কোথাও মনোযোগ না দিতে। এমন আরেকটি ভিডিও চিত্রে দেখা যায় লাদেন তার একজন স্ত্রীকে কড়া ভাষায় জিজ্ঞেস করেছেন সে পরকালেও তার জীবন সঙ্গী হয়ে থাকতে চায় নাকি লাদেনের মৃত্যুর পর আবার বিয়ে করতে চায়। লাদেন তার সেই স্ত্রীকে তার ছেলেকে যুদ্ধ ক্ষেত্রে পাঠানোর কড়া নির্দেশ দেন।
লাদেনের দুর্লভ কিছু তথ্যের মধ্যে ২০০৭ সালের একটি চিঠি পাওয়া গেছে যা ‘দ্য জিহাদ এন্ড রিফর্ম ফ্রন্ট’ থেকে তাকে পাঠিয়েছিলো। তারা তাকে ইরাকে তখন আল কায়দা কর্তৃক চালানো সহিংসতা, ধংসযজ্ঞ অস্বীকার করতে বলেন। মুসলিম সহকর্মীদের ওপর হামলার জন্য আজকের ইসলামিক স্টেট গ্রুপকে সাবেক আল কায়দা নেতা নির্দেশ দিলেও তারা তখন তা মানেনি।
সেই বছরেরই তারিখ বিহীন আরেকটি চিঠিতে লাদেন আল কায়দার লক্ষ্য ইহুদীদের হত্যা করার অপারেশনের ব্যর্থতার কারণ উল্লেখ করেছেন। সেখানে লাদেন লিখেছিলেন, এই অপারেশনে আল্লাহ তাদের পাশে ছিলেন না। এছাড়াও অপর্যাপ্ত দক্ষ জিহাদী, দুর্বল যোগাযোগ ব্যবস্থা ও কঠোর নিরাপত্তা জন্য তারা ব্যর্থ হয়েছিলো। তাদের সন্ত্রাসী হামলা পরিকল্পনার মধ্যে ডেনমার্কে আমেরিকানদের ওপর হামলার একটি পরিকল্পনা ছিল। ৩ জন ইউরোপীয় নাগরিকদের অভিযানটি পরিচালনার কথা ছিলো। লাদেন তাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করতে পারেনি। লাদেনের ধারণা তারা ধরা পড়ে গিয়েছিল। লাদেনের আরেকটি রিপোর্টে দেখা যায় তারা বিভিন্ন হামলায় নতুন অস্ত্র ব্যবহারের পরিকল্পনা করেছিলেন। যেমন বাসার কাজে ব্যবহৃত ছুড়ি, গ্যাস বা গ্যাসোলিন। বিমান,ট্রেন বা গাড়িতে আত্মঘাতী হামলার পরিকল্পনাও করেছিলেন তারা।
উদ্ধারকৃত দুর্লভ তথ্যের মধ্যে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জরজ ডব্লিউ বুশকে লেখা একটি চিঠিও পাওয়া গেছে। যেখানে লাদেন বলেছিলেন, লাদেন এখনো ইরাক ও আফগানিস্তানে শান্তি অর্জন করতে পারেনি। আর ইরাকে মারণাস্ত্র আছে এই মিথ্যা অজুহাতে মার্কিনরা কেন ইরাকে অভিযান চালাচ্ছে তা লাদেন বুশের কাছে জানতে চেয়েছিলেন।
লাদেনের জন্য ছেলের শেষ চিঠি: লাদেনের মৃত্যুর ১ মাস আগে তার এক সাহায্যকারী মাহমুদ লাদেনের প্রিয় ছেলে হামযাকে তার কাছে আনার অনেক চেষ্টা করেছিলেন।চিঠিতে দেখা যায় লাদেনের ছেলে ইরানের একটি বাসায় গৃহবন্দী অবস্থায় ছিল।২০০৯ সালের জুলাইতে হামযা তার বাবাকে একটি চিঠিতে লেখেন অনেক ছোট বয়সে সে বাবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিলো। তার ১৩ বছর বয়স হয়ে গেছে কিন্তু সে বাবাকে দেখেনি। বাবা তাকে চিনতেও পারবেন না। চিঠিতে সে আরো দুঃখ করে বলেন মুজাহিদীরা যুদ্ধে চলে গেলেও সে যেতে পারেনি।
মার্কিন কর্তৃপক্ষ বলেন হামযা শেষ পর্যন্ত তার বাবার সঙ্গে দেখা করতে পেরেছিলেন কিনা তা তারা বলতে পারেন না। হামযা এখন কোথায় আছেন,আদৌ বেঁচে আছেন কিনা তাও তারা জানেনা। মার্কিন কর্তৃপক্ষের ধারণা লাদেনকে হত্যার সময় তার পরিবারের অনেক সদস্য থাকলেও হামযা সেখানে ছিলোনা।