প্রগতিশীল লেখক ও শিক্ষাবিদ ড. জাফর ইকবালের উপর ধারালো অস্ত্র দিয়ে হামলা চালালো জনৈক যুবক। যদিও দেশের ক্ষমতায় এখন মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষীয় রাজনৈতিক জোট। ক্ষমতার মূল কেন্দ্রে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগ।
ড. জাফর ইকবাল মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সোচ্চার কন্ঠ। তিনি দেশ ও জাতির প্রয়োজনে স্বাধীনতা বিরোধী ও সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে বিভিন্ন মঞ্চে বক্তৃতা বিবৃতি দিয়েছেন। সংবাদপত্রে লেখালেখি করেছেন। অতীতেও আরও অনেককেই এরকম হামলার শিকার হতে হয়েছে। অাক্রান্ত হয়েছেন কবি শামসুর রাহমান, কবি হুমায়ুন আজাদ, ড. অভিজিৎ রায় ও অনন্ত বিজয় দাশসহ আরো অনেক নাম সেই তালিকায়।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসেই হামলার শিকার হন তিনি। অথচ এই বিশ্ববিদ্যালয়েরই শিক্ষক তিনি। ক্যাম্পাসের মুক্তমঞ্চে ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ফেস্টিভ্যাল এ প্রধান অতিথি ছিলেন এ দেশবরেণ্য শিক্ষক।
কিন্তু কে এই যুবক? কারা তাকে পাঠালো? এই যুবকের কাছে জাফর ইকবালকে কিভাবে উপস্থাপন করেছে নেপথ্যের উস্কানিদাতারা? এগুলো খুঁজে বের করতে হবে। হামলাকারী যুবকটিকে নিরাপদ হেফাজতে ও সুস্থ রাখতে হবে। এখন নেপথ্য উস্কানিদাতারাই নিজেদের রক্ষা করতে এই যুবকটির মৃত্যু কামনা করবে। এর পেছনে হয়তো বড় ধরণের অসৎ উদ্দেশ্য এবং পরিকল্পনা রয়েছে। তাই তাকে গণধোলাই কিংবা পুলিশী ধোলাই নয়, চাই তার সুস্থ ও নিরাপদ অবস্থান। যারা তার মগজ ধোলাই করে জাফর ইকবালকে খুন করতে উদ্বুদ্ধ করেছে এখন আর তারা তার বন্ধু নয়। এখন এই যুবকটিকে মারপিট উস্কানিদাতাদের সহায়কই হবে।
ড. জাফর ইকবাল মৌলবাদ, সাম্প্রদায়িক শক্তির রোষানলে অনেক আগে হতেই। তিনি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবীতে গড়ে ওঠা গণজাগরণ মঞ্চেও সক্রিয় ছিলেন। এর জন্য সরকার দলীয় অনুপ্রবেশকারী অথবা অনুপ্রবেশকারী সমর্থকদেরও রোষানলের শিকার হন। তাদের তরফ থেকেও তিনি হুমকি পেয়েছেন বহুবার।
জামায়াত-বিএনপি এখন আর নাশকতার শক্তি তেমন একটা রাখেনা। তারা ভোল পাল্টে ১৪ দলের প্রধান শরীক আওয়ামী লীগে যোগ দিচ্ছে। কারণ এ দলটিই জোটের ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু। জোটের অন্য শরীকে যোগ দেয়ায় তাদের মোটেও কোনো আগ্রহ নেই। বরং তারা তৎপর রয়েছে আওয়ামী লীগের সাথে তাদের দূরত্ব সৃষ্টির। কারণ তাদের উদ্দেশ্য রাজনৈতিকভাবে আওয়ামী লীগকে দুর্বল করা।
জাফর ইকবালের উপর হামলার নায়ক মোটেও এই গ্রেফতারকৃত আহত যুবকটি নয়। কারণ গাছ কাটে কুড়াল কিন্তু দায়ী কুড়াল নয়, কুড়ালের মালিক। এক্ষেত্রে কুড়ালের কোনো দায় থাকে না। কেউ যদি চুরি করে গাছ কাটে ও গাছের গোড়ায় কুড়ালটি পাওয়া যায়। তখন কেউ কুড়ালটিকে মারপিট করবে না। খুব যত্নসহকারে এটিকে রেখে দেবে যেমন ভাবে পাওয়া গেছে তেমন ভাবেই। এই যুবকটিও ঠিক কুড়ালের মতোই। তাকে আলামত হিসেবে সংরক্ষিত রেখে খুঁজতে হবে কুড়ালের মালিককে।
কে বা কারা এই কাঠুরিয়া গোষ্ঠী? এটাকে পেলেই দৃশ্যমান হবে ষড়যন্ত্রের আঁতুর ঘর। এই হামলা কেবলই ব্যক্তি জাফর ইকবালের উপর হামলা নয়। এই হামলা মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ শক্তির হৃৎপিণ্ডের উপর। আজকের বাংলাদেশের এই ধারার রাজনীতির সকল দলের সোচ্চার দাবি হোক এর নাটের গুরুদের খুঁজে বের করা। আর এ কাজ করতে হলেই যুবকটিকে সুস্থ ও নিরাপদ হেফাজতে রাখতে হবে।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)