চলচ্চিত্র তারকাদের নিয়ে এডিস মশা নিধন অভিযান চালিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। গত শুক্রবার সকালে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি) প্রাঙ্গণে তিনি ওই সচেতনতামূলক অভিযান চালান। তবে তার ওই অভিযান চালানো হয়েছে পরিষ্কার রাস্তায়, যেখানে না ছিল কোন ময়লা না কোন মশার আবাস। মন্ত্রীর ওইছবি গণমাধ্যম হয়ে সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে ডেঙ্গু বিষয়ে সরকারের পদক্ষেপ নিয়ে জনগণের ক্ষোভ ও উদ্বেগ বাড়িয়ে দিয়েছে।
ঢাকা সিটি উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম গতবছর (২০১৮ সাল) তার নির্বাচনের আগে ও ভালোবাসা দিবসে চলচ্চিত্র তারকাদের নিয়ে রাস্তা ঝাড়ু দিয়েছিলেন প্রচারণার অংশ হিসেবে। সেই পুরাতন ছবিও ভাইরাল হয়েছে এবং বর্তমানে সামাজিক মাধ্যমে অনেকে ওইছবিকে সাম্প্রতিক কোনো অভিযানের ছবি মনে করে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে মন্ত্রী ও মেয়রের আন্তরিকতা কতোটুকু, তা যদি বিবেচনার নাও রাখি তারপরেও বলতে হয় যে তাদের পদক্ষেপ জনগণের আস্থা-বিশ্বাস অর্জন করতে পারে নি।
আরেকটি বিষয় খেয়াল করার মতো, ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা। সরকারী হিসেব বলছে একটি, বেসরকারি হিসেব বলছে আরেকটি। এ পর্যন্ত কতজন মারা গেছেন, তার সঠিক হিসাব নেই বলেও জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। বিশ্বের কয়েকটি দেশের তুলনায় আমাদের দেশে মৃত্যুর সংখ্যা খুবই কম বলেও তিনি কিছুটা স্বস্তি দেয়ার চেষ্টা করেছেন, কিন্তু তা আসলে জনমনে ক্ষোভ আরো বাড়িয়েছে।
আর ডেঙ্গু জ্বরের বাহক এডিস মশার কামড় থেকে রক্ষা পেতে মসজিদের ইমামসহ সবাইকে লম্বা জামা-পায়জামা ও মোজা পরার পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। মসজিদের খতিব-ইমামদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় মেয়রের এই বক্তব্যও আলোচিত হচ্ছে ব্যাপকভাবে।
দুর্যোগকালীন পরিস্থিতিতে জনপ্রতিনিধিরা কী ধরণের কর্মসূচি নেবেন আর কী ধরণের প্রচারণা চালাবেন, তার একটি সমন্বিত ও সুচিন্তিত পরিকল্পনা থাকা উচিত বলে আমরা মনে করি। সারা বিশ্বজুড়ে ডেঙ্গু বহুযুগ আগে থেকে থাকলেও এতো প্রকোট আকারে বাংলাদেশে এই প্রথম। কাজেই ডেঙ্গু নিয়ে জনগণের মধ্যে যখন উদ্বেগ-আতঙ্ক রয়েছে ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে, তখন দৃশ্যমান কার্যক্রম জোরদার করা জরুরি বলে আমরা মনে করি। পাশ্ববর্তী দেশ ভারতের কলকাতা ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ব্যাপক সফল হয়েছে বলে গণমাধ্যমে প্রকাশ, কাজেই দরকার হলে কলকাতাসহ অন্যকোনো উদাহরণকে রোল মডেল ধরে দ্রুত অ্যাকশন প্ল্যান ঠিক করা দরকার। যে প্ল্যানে থাকতে পারে কীভাবে সরকার ও জনগণ একসঙ্গে কাজ করে নিয়ন্ত্রণে আনবে ডেঙ্গুর প্রকোপ। আমাদের আশাবাদ, সবার আন্তরিক প্রচেষ্টায় এই পরিস্থিতির দ্রুত পরিবর্তন হবে।