সাউথ আফ্রিকা এবং আরও কয়েকটি দেশে পাওয়া করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রনের সংক্রমণে পুরো বিশ্বই চিন্তিত। এর হাত থেকে বাঁচতে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো এরই মধ্যে নতুন করে লকডাউন, বিদেশীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ, বিমান যোগাযোগ বন্ধ-সহ নানান পদক্ষেপ নিয়েছে। এমন কি বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতও ওমিক্রন ঠেকানোর পাশাপাশি তা মোকাবিলার প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছে।
সর্বশেষ পদক্ষেপ হিসেবে বাংলাদেশ-সহ ১২টি দেশকে অন্তর্ভুক্ত করে উচ্চ ঝুঁকির একটি তালিকা তৈরি করেছে ভারত। এসব দেশ থেকে ভারতে যাওয়া নাগরিকদের বিমানবন্দরেই আরটি-পিসিআর পরীক্ষা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর মানে হলো বাংলাদেশও ওমিক্রন সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকিতে আছে।
নতুন পাওয়া করোনাভাইরাসের এই ধরন ডেলটার চেয়েও বেশি সংক্রামক বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং বহু স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ মত প্রকাশ করেছেন। এমনকি এই ভাইরাস দ্রুত ছড়িয়েও পড়তে পারে- সেই আশঙ্কা করা হচ্ছে। আরও শঙ্কার কথা; ভাইরাস বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ বলছেন, ওমিক্রনের বিরুদ্ধে করোনা প্রতিরোধে তৈরি ভ্যাকসিন কাজে নাও লাগতে পারে!
সবকিছু মিলিয়ে আরেকটি বড় বিপদের মুখেমুখি দাঁড়িয়ে আছে পুরো বিশ্ব। এমন পরিস্থিতিতে আমরা কি করছি? ওমিক্রনের বিরুদ্ধে আমাদের প্রস্তুতিই বা কি? যদিও এরই মধ্যে আমরা জেনেছি, ওমিক্রন নিয়ে বাড়তি সতর্ক সরকার। তারই অংশ হিসেবে রোববার থেকে সারাদেশে ১৫ দফা নির্দেশনা জারি করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। বিশেষ করে সব ধরনের সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় জনসমাগম নিরুৎসাহিত করতে বলা হয়েছে। আর জোর দেওয়া হয়েছে সঠিকভাবে নাক-মুখ ঢেকে মাস্ক পরাসহ কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে। এমনকি সিনেমা হল, থিয়েটার, রেস্তোরাঁ এবং অন্যান্য বিনোদন কেন্দ্রে ধারণক্ষমতার অর্ধেক আসন ফাঁকা রেখে চালু রাখতে।
সবচেয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে- এরই মধ্যে কেউ আক্রান্ত দেশগুলো থেকে বাংলাদেশে ভ্রমণকারীদের নিয়ে। তাদেরকে বাধ্যতামূলক ১৪ দিন কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতেই হবে। কিন্তু আদৌ কি তা হচ্ছে? আমরা জানি, করোনাভাইরাসের প্রকোপ কমে যাওয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ক্ষেত্রে উদাসিনতা দেখা যাচ্ছে। অনেকের কাছে করোনাভাইরাস ‘কিছুই না’ এমন তুচ্ছ বিষয়ে পরিণত হয়েছে। শুধু তাই নয়, তারা নিজেরা তো স্বাস্থবিধি মানেনই না, অন্যরা যাতে না মানেন; তাতে প্ররোচনা দেন।
আসলে জাতি হিসেবে আমরা অনেক কিছুই দ্রুত ভুলে যাই। যেমন ভুলে গেছি করোনার ডেল্টা ধরনে সবকিছু থমকে যাওয়ার কথা। একটু শ্বাস নেওয়ার জন্য অক্সিজনের সংকটের কথা কিংবা একটা শয্যার জন্য হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে ছুটে তা না পেয়ে তীব্র আর্তনাদের কথা। অথচ মাত্র কয়েক মাস! এই তো ২৮ জুলাইতে দেশে একদিনে সর্বোচ্চ শনাক্ত ১৬ হাজার ২৩০ হতে দেখেছি। দিনে সর্বোচ্চ (২৬৪ জন) মৃত্যু দেখেছি দুইবার ৫ ও ১০ আগস্ট। এরই মধ্যে শুধু সরকারি হিসাবেই করোনাভাইরাসে মোট আক্রান্ত ১৫ লাখ ৭৫ হাজারেরও বেশি। মৃত্যু ২৭ হাজার ৯৭৮ জন। যদিও সরকারি হিসাবে এই সংখ্যা আরও বেশি বলে ধারণা করা হয়।
এমন পরিস্থিতিতে আমাদের দেশে যদি ওমিক্রনের সংক্রমণ ধরা পড়ে, তাহলে নিশ্চিত করেই বলা যায়; তাতে ভয়ংকর বিপদে পড়তে হবে পুরো দেশ ও জাতিকে। তাই শুধু নির্দেশনা দিয়ে নয়, বরং এসব মানতে বাধ্য করতে হবে মানুষকে।