কয়েকদিন ধরে পেঁয়াজের অস্বাভাবিক দামের কারণে সাধারণ মানুষের যখন নাভিশ্বাস উঠে গেছে, তখন আবার বাড়তে শুরু করেছে চালের দাম। দুই দিনের ব্যবধানে দেশের বড় বড় চালের মোকামে বস্তা প্রতি আড়াইশ থেকে তিনশ টাকা বেড়ে গেছে। এর মধ্যেই সোমবার থেকে সারাদেশে লবণের দাম নিয়ে শুরু হয়েছে নৈরাজ্য।
তারই রেশ ধরে মঙ্গলবার দিনভর লবণ নিয়ে নানান গুজব রটতে থাকে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আর মোবাইল ফোনে লবণের খবর নিতে থাকে শঙ্কিত মানুষ। অজানা উৎস থেকে তারা জানতে পারেন লবণের দাম ১শ’ থেকে দেড়শ টাকা হয়ে যাবে। এরই প্রভাব পড়ে বাজারে। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশেই লবণ কেনার হিড়িক পড়ে যায়।
আর এই সুযোগে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী কয়েক গুণ বেশি দামে লবণ বিক্রি শুরু করেন। প্রতি কেজি লবণ যেখানে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা; গুজবের কারণে তা ১শ’ টাকা ছাড়িয়ে যায়। আরও বেড়ে যেতে পারে- এমন আশঙ্কায় অনেকেই চাহিদার তুলনায় বেশি বেশি লবণ কিনে মজুদ শুরু করে।
যদিও সরকার বলছে, এখন লবণের মওসুম, দেশে লবণের কোনো ঘাটতি নেই। বেশি মুনাফা লাভের আশায় একটি স্বার্থান্বেষী মহল লবণের দাম অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। এক বিবৃতিতে শিল্প মন্ত্রণালয় বিষয়টিকে গুজব উল্লেখ করে এ ধরনের গুজবে বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। আর দেশে বর্তমানে সাড়ে ৬ লাখ মেট্রিক টনের বেশি ভোজ্য লবণ মজুদ রয়েছে। প্রতি মাসে এর চাহিদা প্রায় ১ লাখ মেট্রিক টন।
তার মানে দেশে লবণের অভাব নেই। সরকারের তথ্য সঠিক ধরলে এই মুহূর্তে দেশে অন্তত ৬ মাস খাওয়ার মতো লবণ মজুদ আছে। তাহলে দাম কেন বাড়বে? আবার এখন নতুন ধান উঠছে। স্বাভাবিকভাবেই চালের দাম কম থাকার কথা। কিন্তু আমরা দেখলাম সেই চালের দামও বেড়ে গেলো। একইভাবে শীতের শুরুতে যখন সবজির পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকার কথা, তখনই সেই সবজির দাম আকাশ ছোঁয়া হয়ে গেছে।
এর কারণ কি? এটা কি সুদূরপ্রসারী কোনো পরিকল্পনার অংশ? জনগণকে জিম্মি করে স্বার্থ হাসিল করতে চায় পর্দার আড়ালে থাকো কোনো বিশেষ মহল? আমরা নিশ্চিত করেই বলতে পারি, এটা শুধু বাজারের চাহিদা আর যোগানের হিসাবের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। এর পেছনে আছে অন্য অঙ্ক, অন্য হিসাব।
আমরা মনে করি, এই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির পেছনে যারা জড়িত; তাদের খুঁজে বের করে শাস্তি দিতে হবে। কোনোভাবেই তা হালকা করে দেখা ঠিক হবে না। সরকারের কঠোর পদক্ষেপই পারে জনগণকে স্বস্তি দিতে।