বাংলা চলচ্চিত্রের জীবন্ত কিংবদন্তী অভিনেত্রী ববিতার ৬৮তম জন্মদিন (শুক্রবার)। তিন শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও সুনাম অর্জন করেন তিনি। দেশ বরেণ্য এ অভিনেত্রীর জন্মদিন উপলক্ষে ঢাকাই চলচ্চিত্রের শীর্ষ নায়ক ও প্রযোজক শাকিব খান আবেগতাড়িত হয়ে নিজের ফ্যানপেজ, ইনস্টাগ্রাম ও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের পেজে ববিতাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
শাকিবের ওই লেখনীতে স্পষ্ট ফুটে উঠেছে ববিতার প্রতি তার শ্রদ্ধা অগাধ শ্রদ্ধা। পাশাপাশি কিংবদন্তী এই অভিনেত্রীকে নিয়ে আছে খানিকটা আফোসোস ও। তবে ববিতার সংস্পর্শ অভিনয় করতে পেরে শাকিব যে নিজেকে অনেকটাই সৌভাগ্যবান মনে করেন তাও স্পষ্ট বোঝা গেল লম্বা স্ট্যাটাসে।
ববিতার জন্মদিন নিয়ে শাকিবের সেই শুভেচ্ছা বার্তার শেষ দিকে জনপ্রিয় এ নায়ক উল্লেখ করেন, ষাট, সত্তর, আশির দশকের সিনেমার অভিনেতা অভিনেত্রীদের ঘিরে পাশের দেশে কতো কতো সিনেমা নির্মিত হচ্ছে; অথচ ববিতা ম্যাডামদের মতো গুণী অভিনয়শিল্পীদের আমরা পরবর্তীতে আর ব্যবহারই করতে পারলাম না! তাদের জন্য যুঁতসই গল্প-চরিত্র নির্মাণ করতে পারলাম না!
অনেকটা আক্ষেপ জানিয়েই আশাবাদী শাকিব লেখেন, হয়তো এসব আফসোসও একদিন ঘুচবে। অন্তত ববিতা ম্যাডামের জন্মদিনে এমন প্রত্যাশাই জানিয়ে রাখলাম।
ববিতাকে নিয়ে জন্মদিনের দেয়া পোস্টে শাকিব খান শুরুতে উল্লেখ করেন, যে কোনো পেশাতেই চড়াই উৎরাই থাকে। কিন্তু পরামর্শ দেয়ার সঠিক মানুষটি পেলে চড়াই উৎরাই মোকাবিলা করা যে কারো জন্য সহজ হয়ে যায়। অভিনয় পেশার শুরু থেকে আমি তেমন কিছু গুরুজন পেয়েছি, যারা আমাকে সবসময় সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পরামর্শ দিয়ে গেছেন। অভিনয় শূন্য থেকে শুরু করেছিলাম; কিন্তু তাদের স্নেহ-মমতা আর আশীর্বাদের শীতল পরশ সঙ্গে ছিল বলেই আমি আজকে সবার কাছে শাকিব খান।
দীর্ঘ ক্যারিয়ারে পথচলায় নানা বাঁধা বিপত্তি টপকে আজকে শীর্ষ অবস্থানের পেছনে পূর্বসুরীদের দিক নির্দেশনার প্রসঙ্গ টেনে শাকিব বলেন, অভিনয়ে আসার পর যে কজন অভিভাবক পেয়েছি, তাদের অন্যতম ববিতা ম্যাডাম। তাঁর মতো এমন অভিজ্ঞ, দক্ষ অভিনয় শিল্পী মাথার উপর ছায়া হয়ে থাকলে সব কিছুই সহজ হয়ে যায়। অনস্ক্রিনে অসংখ্যবার দর্শক তাকে আমার মায়ের ভূমিকায় দেখেছেন, অথচ অফস্ক্রিনেও তিনি আমার কাছে তেমন একজন মমতাময়ী মা।
শাকিব খান আরও বলেন, দেশের সিনেমাপ্রেমী মানুষের কাছে তো বটেই, বিশ্ব সিনেমার ইতিহাসেও যার নাম ডাক তিনি আমাদের ববিতা ম্যাডাম। কমার্শিয়াল (বাণিজ্যিক) সিনেমার পাশাপাশি ভিন্নধারার সিনেমাতেও তিনি ছিলেন স্বতঃস্ফূর্ত। তাঁর অভিনয় দেখে মুগ্ধ হননি এমন প্রজন্ম খুঁজে পাওয়া যাবে না।
যোগ করে শাকিব লেখেন, সেই সত্তরের দশকেই ববিতা ম্যাডাম বিশ্বের বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবে ঘুরেছেন। বাংলা সিনেমার প্রতিনিধিত্ব করেছেন। সেই সময়ে দেশের সব গুণী নির্মাতাদেরও পছন্দের তালিকায় ছিলেন আমাদের ববিতা ম্যাডাম। কাজ করেছেন সত্যজিৎ রায়ের মতো পৃথিবীখ্যাত নির্মাতার সিনেমাতেও।
শাকিব তার স্ট্যাটাসে আরও বলেন, বহুদিন তিনি (ববিতা)/সিনেমা থেকে দূরে। তাঁর সাথে আমার প্রায়ই কথা হয়। বর্তমান সিনেমার খোঁজ খবর নেন। আগের মতোই মমতাময়ী মায়ের কণ্ঠে সঠিক দিকনির্দেশনা দেন। তাঁর মতো গুণী অভিনয়শিল্পীর সাথে কথা বলতে বলতে মাঝেমধ্যে নিজেদের ব্যর্থতার কথাগুলোও স্মরণ করি।
এদিকে, জন্মদিন উপলক্ষে আগের দিন খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এবারের ৬৮ তম জন্মদিনটি কানাডায় একমাত্র ছেলে অনিকের সঙ্গে কাটাচ্ছেন ববিতা। কোভিডের কারণে গত দুই বছর ঢাকায় গুলশানের বাসাতে ছিলেন দেশ বরেণ্য এ অভেনেত্রী। অনেক চেষ্টার পর গত সপ্তাহে কানাডায় গিয়েছেন। তাই এবারের জন্মদিন ছেলের সঙ্গেই কাটাচ্ছেন ববিতা।