এসএসসির ফলাফল প্রকাশকে কেন্দ্র করে অন্যান্য দিনের তুলনায় সারাদেশে মিষ্টি বিক্রি বেড়েছে। সকালে ফল প্রকাশের পরপরই রাজধানীর মিষ্টির দোকানগুলোতে অভিভাবকদের যে ভিড় জমতে থাকে তা রাতেও দেখা গেছে। আত্মীয়-স্বজনদের আনন্দের খবর দেয়ার পাশাপাশি মিষ্টি মুখ করানোর যে রেওয়াজ চলে আসছে বহু বছর ধরে, এবছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি।
বৃহস্পতিবার এসএসসির ফলাফল প্রকাশের পরে এই দিনে সারাদেশে মিষ্টি বিক্রি হয়েছে প্রায় ৫০০ কোটি টাকার বেশি। মিষ্টি ব্যবসায়ীদের সূত্রে এ আনুমানিক তথ্য জানা গেছে।
রাজধানীর ফার্মগেটের একজন মিষ্টি ব্যবসায়ী চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, আজ আবাসিক এলাকার দোকানগুলোতে মিষ্টি বেশি বিক্রি হয়েছে। আমার এখানে প্রতিদিন সাধারনত ৩০ থেকে ৪০ কেজি বিক্রি হয়, আজ সে তুলনামূলক বেশি বিক্রি হয়েছে।
সারাদেশে কতগুলো মিষ্টি দোকান রয়েছে কিংবা বিশেষ দিনগুলোতে কী পরিমান মিষ্টি বিক্রি হয়, এর কোনো সঠিক তথ্য নাই বাংলাদেশ মিষ্টি উৎপাদনকারী সংগঠন সুইটস ম্যানুফেকচার্স অ্যাসোসিয়েশনের কাছে। তবে সংঠনটির কয়েকজন নেতার তথ্যমতে, ঢাকায় সাধারণত প্রতিদিন স্থানভেদে ২০ থেকে ১০০ কেজি পর্যন্ত মিষ্টি বিক্রি হয়। গড়ে বিক্রি হয় ৫০ থেকে ৬০ কেজি। তবে এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলের দিন তা ৬ থেকে ৮ গুণ বেড়ে হয় প্রায় ৩০০ থেকে ৪০০ কেজি।
অন্যান্য সময়ের তুলনায় এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের দিন মিষ্টি বেশি বিক্রি হয়। আর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ হয় এইচএসসির ফলাফল প্রকাশ ও নববর্ষের দিনে।
যোগাযোগ করা হলে সংগঠনটির সভাপতি মোহাম্মদ আলী চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, সারা বাংলাদেশে কী পরিমান মিষ্টি বিক্রি হয়, তার তথ্য আমাদের কাছে নাই। তবে ঢাকা মহানগরে প্রায় ৫০০ আর সারাদেশে ১ লাখ দোকান থাকতে পারে। সে হিসেবে সারাদেশে গড়ে ৫০ লাখ মণ মিষ্টি বিক্রি হয়েছে বলা যেতে পারে।
তিনি আরও বলেন, অন্যান্য দিনের তুলনায় ফলাফলের দিন বিক্রি প্রায় ৬ থেকে ৭ গুণ বেড়ে যায়। তবে ঢাকার বাইরের দোকানগুলোতে মিষ্টি বিক্রি হয় তুলনামূলক কম।
সংগঠনের সাথে যুক্ত থাকা ময়মনসিংহের একজন মিষ্টি ব্যবসায়ী বলেন, বিশেষ দিনগুলোতে দেড়শ থেকে দুইশ কেজি বিক্রি হয়।
তবে এবার চরম গ্যাস সংকটের কারনে মিষ্টি উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে বলে জানান কয়েকজন মিষ্টি ব্যবসায়ীরা। মুসলিম সুইটস অ্যান্ড বেকারীর মালিক মো. মিজানুর রহমান চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, বিভিন্ন জায়গায় গ্যাস সংকটের কারনে এ বছর পর্যাপ্ত পরিমানে মিষ্টি উৎপাদন করা সম্ভব হয়নি।
সংগঠনের আনুমানিক তথ্যমতে, গড়ে প্রতি দোকানে এই দিনে মিষ্টি বিক্রি হয় ২০০ থেকে ৩০০ কেজি। দামের দিক থেকে ২০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত বিভিন্ন দামের মিষ্টি পাওয়া যায়। তবে পরীক্ষার ফলাফলকে কেন্দ্র করে সাধারণত ২০০ টাকা দামের মিষ্টি বেশি বিক্রি হয় বলে জানান মিষ্টি ব্যবসায়ীরা।
সংগঠনটির এই আনুমানিক তথ্যের ওপরে হিসেব করলে দেখা যায়, গড়ে প্রতি কেজি মিষ্টির দাম ২৫০ টাকা হিসেবে প্রতি দোকানে ২০০ কেজি বিক্রি হলে দেশের ১ লাখ দোকানে মোট বিক্রির পরিমাণ দাঁড়ায় ৫০০ কোটি টাকা। যা শুধু এসএসসির ফলাফল প্রকাশকে কেন্দ্র করে বিক্রি হয়। তবে টাকার অঙ্কে এই পরিমান আরো বেশি হতে পারে বলে ধারণা ব্যবসায়ীদের। কারণ ফলাফল প্রকাশের পরের দুই-তিন দিনও প্রচুর বেচাবিক্রি হয়।