অল্প পুঁজি নিয়ে বোলিং করতে নেমে শুরুতেই শ্রীলঙ্কার দুই উইকেট তুলে নেয় বাংলাদেশ। পঞ্চাশের আগে হারায় তিন উইকেট। নাটকীয় কিছুর আশায় থাকা সাকিব আল হাসানের দলকে হতাশ হতে হয়েছে সামারাবিক্রমা ও চারিথ আশালঙ্কার প্রতিরোধের কাছে। এশিয়া কাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ৫ উইকেটের জয় তুলে বাংলাদেশের পরের রাউন্ডে খেলা অনিশ্চিত করে দিল।
শ্রীলঙ্কার পাল্লেকেলে ছেড়ে শুক্রবার বাংলাদেশ দলকে ছুটে যেতে হবে পাকিস্তানে। লাহোরে ৩ সেপ্টেম্বর আফগানিস্তানকে হারাতে না পারলে ‘সুপার ফোর’রাউন্ডে খেলা হবে না সাকিব আল হাসানের দলকে।
বৃহস্পতিবার দিবারাত্রির ম্যাচে টসে জিতে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশ ৪২.৪ ওভারে মাত্র ১৬৪ রানে গুটিয়ে যায়। জবাবে শ্রীলঙ্কা ৩৯ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছে যায়।
ওয়ানডে সংস্করণে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা কাছাকাছি শক্তির দল। এশিয়া কাপের মঞ্চে রোমাঞ্চকর লড়াইয়ের আভাস ছিল। তবে ড্রাইভারের ভূমিকায় থেকে নাজমুল হোসেন শান্ত যে পথ দেখিয়েছেন, তা অনসুরণ করতে পারেননি আর কেউ। বাকি ব্যাটাররা প্যাসেঞ্জার হয়ে ছিলেন।
নাজমুল হোসেন শান্ত যতক্ষণ ক্রিজে ছিলেন, ছিল মাঝারি সংগ্রহের আশা। বাঁহাতি টপঅর্ডার ব্যাটার ব্যক্তিগত ৮৯ রানে ফেরার পর টেলএন্ডারদের মাঝে দেখা গেল ফেরার তাড়া।
টস জিতে সাকিব আল হাসান ব্যাটিং বেছে নেন। মনে হয়েছিল বড় রানের সুবাস হয়ত পেয়েছেন। কিন্তু ব্যাটিংয়ে নামার পর বোঝা যায় পাল্লেকেলের উইকেটে কাজটা অত সহজ নয়। ব্যাটিং ব্যর্থতায় দেড়শ পেরিয়ে থেমে যায় টিম টাইগার্স। ৪৪ বল আগেই অলআউট। স্বাগতিকদের সামনে ১৬৫ রানে সহজ লক্ষ্য।
ওয়ানডে ক্যারিয়ারে প্রথম সেঞ্চুরি পেতে নাজমুল হোসেন শান্তর লেগেছিল ২১ ইনিংস। চার ইনিংস পরই বাঁহাতি টপঅর্ডার পেতে পারতেন দ্বিতীয় শতক। নার্ভাস নাইনটিজে প্রবেশের আগেই ১২২ বলে ৭টি চারে ৮৯ রান করে বোল্ড হন থিকসানার বলে।
মাত্র ১ রানে থেমে যেতে পারত শান্তর ইনিংস। লঙ্কান অধিনায়ক দাসুন শানাকা মিডঅনে ক্যাচ ছাড়েন এ বাঁহাতির। সুযোগটা আরেকটু কাজে লাগিয়ে নিজে সেঞ্চুরি পেতে পারতেন আর বাংলাদেশকে এনে দিতে পারতেন মাঝারি পুঁজি।
বাংলাদেশের শুরুটাও হয় শেষের মতোই নড়বড়ে। ৩৬ রানে ৩ টপঅর্ডার ব্যাটারকে হারায় বাংলাদেশ। পরে শান্তর ব্যাটে প্রতিরোধের পথ খোঁজে দল। দলের শতরানের আগে অবশ্য হারাতে হয় দারুণ খেলতে থাকা তাওহিদ হৃদয়কেও।
সাকিব ফেরার পর ৬৯ রানের জুটি গড়ে কিছুটা চাপমুক্ত করেন শান্ত ও হৃদয়। ২৩.৪ ওভারে শানাকার বলে চার হাঁকিয়ে ফিফটি তুলে নেন শান্ত। পরের বলে সিঙ্গেল নিয়ে হৃদয়কে স্ট্রাইক দেন। স্ট্রাইকে গিয়ে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েন হৃদয়। আম্পায়ার আউট না দিলে রিভিউ নিয়ে উইকেট আদায় করে নেয় লঙ্কান বাহিনী। হৃদয় ফিরেছেন ৪১ বলে ২০ রানে।
অনভিজ্ঞ দুই ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম ও নাঈম শেখ জুটি বাধেন শুরুতে। লিটন দাস ছিটকে যাওয়ায় অভিষেকের জন্য অপেক্ষা করতে হয়নি তানজিদকে। ২২ বছর বয়সী তরুণের শুরুটা অবশ্য হয় হতাশার। ওপেনার ফেরেন রানের খাতা খোলার আগেই।
কাসুন রাজিথার প্রথম ওভারের ৬টি বল মোকাবেলা করেন নাঈম শেখ। মারেন একটি বাউন্ডারি। দ্বিতীয় ওভারে স্ট্রাইক পান তানজিদ। দুই ওপেনারই বাঁহাতি হওয়ায় অফস্পিনার মাহেশ থিকসানাকে বোলিংয়ে আনেন লঙ্কান অধিনায়ক দাসুন শানাকা। তাতে শুরুতেই মেলে সফলতা।
প্রথম বল ব্যাটে লাগাতে পারেননি তানজিদ। বল লাগে প্যাডে। পরের বলে বাংলাদেশ ওপেনার হন এলবিডব্লিউ। বল স্টাম্পের ভেতর থাকায় রিভিউ নেয়ার প্রয়োজন হয়নি অভিষিক্ত তানজিদের।
তিন বাউন্ডারিতে ২৩ বলে ১৬ রান করে পরে সাজঘরে ফিরে যান নাঈম। দলের সংগ্রহ তখন ২৫। ধনঞ্জয়া ডি সিলভার অফস্পিনে ধরা পড়েন বাঁহাতি ওপেনার। পেসার পাথিরানার বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন সাকিব। ১১ বলে ৫ রান করে যান টাইগার অধিনায়ক। টানা তিন উইকেট পতনে চাপে পড়ে বাংলাদেশ।
সেই চাপ থেকে আর বেরোতে পারেনি সাকিবের দল। মুশফিকুর রহিম ৬ নম্বরে নেমে করেন ১৩ রান। ৫ রান করে শান্তর সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে রানআউট হন মিরাজ। আরেক অফস্পিনিং অলরাউন্ডার শেখ মেহেদী করেন ৬ রান।
তাসকিন আহমেদ ও শরিফুল ইসলাম রানের খাতা খোলার আগে আউট হলে দুইশর কাছাকাছিও যেতে পারেনি বাংলাদেশ। মাত্র তিন ব্যাটার পেয়েছেন দুই অঙ্কের দেখা। বাকিদের নামে পাশে সিঙ্গেল ডিজিট।
শ্রীলঙ্কার পক্ষে ৪ উইকেট দখল করেন মাথেশা পাথিরানা। দুই উইকেট নেন মহেশ থিকশানা। একটি করে উইকেট পকেটে পুরেন ধনঞ্জয় ডি সিলভা, দিনুথ ওয়েলাগেলা ও দাসুন শানাকা।
১৬৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে পাওয়ার প্লে-তে বাংলাদেশি বোলারদের শিকার হন তিন লঙ্কান ব্যাটার। লঙ্কানদের ব্যাটিং লাইনআপে প্রথম আঘাতটি হানেন তাসকিন আহমেদ। তৃতীয় ওভারের প্রথম বলে দলীয় ১৩ রানে ফেরান দিমুথ করুণারত্নকে। পরের ওভারেই পাথুম নিশাঙ্কাকে ফেরান শরিফুল ইসলাম। দশম ওভারের দ্বিতীয় বলে তৃতীয় আঘাতটি হানেন সাকিব। ফেরান কুশল মেন্ডিসকে। লঙ্কানরা ৪৩ রানেই হারায় ৩ উইকেট।
সাদিরা সামারা বিক্রমকে ও চারিথ আশালঙ্কা চতুর্থ উইকেটে ৭৮ রানের জুটি গড়ে বাংলাদেশের ম্যাচ জয়ের সম্ভাবনা কার্যত শেষ করে দেন। ফিফটি পাওয়া সামারা বিক্রম ৭৭ বলে ৬ চার ৫৪ রান করে শেখ মেহেদী হাসানের বলে স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে পড়লে জুটি ভাঙে।
ধনঞ্জয়া ডি সিলভা খানিকপর সাকিবের বলে বোল্ড হলেও ততক্ষণে স্বাগতিকরা জয়ের বেশ কাছেই পৌঁছেছিল। ধৈর্যশীল ইনিংস খেলে ৯২ বলে ৫ চার ও এক ছক্কায় ৬২ রানে অপরাজিত থাকেন আশালঙ্কা। তার সঙ্গে ১৪ রানে অপরাজিত থেকে ক্রিজ ছাড়েন লঙ্কান অধিনায়ক দাসুন শানাকা।
বাংলাদেশের পক্ষে সাকিব নেন ২ উইকেট। একটি করে উইকেট পান তাসকিন আহমেদ, শরিফুল ইসলাম ও শেখ মেহেদী হাসান।