বাংলাদেশের সিনেমায় একই ধাঁচের কাহিনী নির্ভরতা আর অভিজ্ঞ অভিনেতাদের প্রতিভা কাজে না লাগানোর প্রবণতার উল্লেখ করে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন সাংস্কৃতিক সংগঠন বাতিঘরের পরিচালক এবং সৃজনশীল প্রকাশনী পাললিক সৌরভের প্রধান নির্বাহী তামান্না সেতু।
তামান্না সেতু ফেসবুকে লিখেন, “ঈদের ৭ দিনের প্রোগ্রামে বাংলা সিনেমা দেখলাম মোটামুটি মনযোগ দিয়ে। শংখচীল ছাড়া রিমোট ঘুরিয়ে যেখানেই গেলাম একই দৃশ্য, একই ডায়লগ। নায়িকা ছুটছে পেছনে ভিলেন, নায়িকা “আয়ায়া…… বাঁচাও বাঁচাও” করছে। অথবা, ‘তুই আমার দেহ পাবি মন পাবি না’। এর বাইরে আমরা কবে আসবো?
কলকাতার সাথে মিলেও এই ধারার বাইরে কিচ্ছু চোখে পরে না। নায়িকার গায়ের কাপড় জামার পরিধি কমার ওপর সিনেমার আয়ের পরিধি বাড়ছে!
সব গানের সুর দৃশ্য এক! আমি মাঝে মাঝে কলকাতার গানের চ্যানেল দেখি সকালে। একটানা একঘন্টা গান শোনার পর মনে হয়, এতক্ষণ ধরে একটা গানই কেন হচ্ছে!!! কলকাতায় এখন সারা বছরে দুটো গান হয়। একটা হল, ‘কি করে তোকে বলব তুই যে আমার’ এই টাইপ সুর, দৃশ্য, কাপড়ের ডিজাইন, কোরিওগ্রাফ। আরেকটা হল ‘ পাগলু’ সুর ও দৃশ্য ইত্যাদি ইত্যাদি। এর বাইরে কালে ভদ্রে হাতে গোনা চার পাঁচটা গান হচ্ছে।
সে তুলনায় আমাদের এখানে আমার মনে হয়েছে কিছু ভাল কাহিনী নিয়ে কাজ হচ্ছে শুধু ‘আয়ায়া… বাঁচাও’ আর ‘দেহ পাবি মন পাবি না’ টাইপ ডায়লগ থেকে বের হতে পারলে আমরা ভাল করতাম।
ভারতের সব থেকে বড় গুন হল, ওদের পরিচালকদের কাছে ওদের অভিনেতাদের বয়স বাড়ে না, অভিজ্ঞতা বাড়ে এবং ওরা সেই অভিজ্ঞতার ভরপুর ব্যবহার করে। তাই ওদের কাঁচা নায়ক নায়িকার অভিনয় ঢেকে দেয়ার জন্য সকল ছবিতেই কিছু অভিজ্ঞ অভিনেতার উপস্থিতির থাকে। যার কারণে গড়পরতা কাহিনীর ভেতরও এখনো কিছু অভিনয় দেখার ভাগ্য আমাদের হয়।
আমাদের এখানে অভিজ্ঞতার নাম বুড়িয়ে যাওয়া! বুড়ো অভিনেতা দিয়ে আমরা কাজ করাই না! তাই অভিনয় বলতে যা বোঝায় তা আমাদের দেখা হয় না।
আমার খুব কষ্ট হয় যখন আমি দেখি নায়ক রাজ্জাক ছলছল চোখে বলে, সে এখনো অভিনয় করতে চায় অথচ তার অভিজ্ঞতা মাথায় রেখে কোন স্ক্রিপ্ট লেখা হয় না।
আমাদের রাজ্জাক, সোহেল রানা, ফারুক, ববিতা, শবনম, কবরী এখনো জীবিত। চাইলে এদের যে কাউকে প্রধান চরিত্র করে একটা সিনেমা করা সম্ভব। রাজ্জাককে আমার অমিতাভ বচ্চনের তুলনায় প্রতিভাধর অভিনেতা মনে হয়েছে সবসময়। বুলবুল, আনোয়ার হোসেন মারা গেলেন। আমরা পরিনত বুলবুল বা আনোয়ার সাহেবের কাছ থেকে কিছুই রাখতে পারিনি। আনোয়ার কে বিরক্তিকর কাজের লোক বানিয়ে একটা মিনিমাম চরিত্র দিয়ে এই প্রতিভার অপব্যবহার করা হয়েছে! কি লজ্জা!
হয়তো এই ব্যথা রাজ্জাক ফারুক ববিতা চম্পার বেলাতেও রয়ে যাবে!”