ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপে ক্রিস্টিয়ান এরিকসেন যেদিন মাঠে জ্ঞান হারালেন, ক’জন ভেবেছিলেন আবারও স্বরূপে মাঠে ফিরবেন ডেনিশ মিডফিল্ডার। জীবন নিয়ে ফেরাই যেখানে ছিল সংশয়ে সেখানে ফুটবল খেলবেন এরিকসেন, এমন ভাবাটাও ছিল আকাশ-কুসুম!
সব হিসেব-নিকেশ, শঙ্কা-সম্ভাবনার খেরোখাতার ট্যালিকে ভুল প্রমাণ করেছেন ডেনমার্ক তারকা। শারীরিক অসুস্থতার অঙ্কের সমাধান মিলিয়ে ফিরেছেন মাঠে। ধরে রেখেছেন দুর্দান্ত ফর্ম। আন্তর্জাতিক, ক্লাব মিলিয়ে শেষ তিন ম্যাচে পেয়েছেন জালের দেখা। এরিকসেন যেন বিশ্বকে শুনিয়েছেন পুনরুত্থানের এক মহাকাব্যিক গল্প।
এরিকসেনের অনন্য প্রত্যাবর্তনের গল্প লেখাটা খুব সহজে হয়নি। ইউরো ২০২০ আসরের দ্বিতীয় দিনে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে খেলছিল ডেনমার্ক। ম্যাচের ৪২ মিনিটে হঠাৎ মুখ থুবড়ে পড়ে যান তিনি। পরে নানা শঙ্কা-আশঙ্কার পর হাসপাতালে নেয়া হয়।
এরিকসেনের অসুস্থতা বিমর্ষ করে দেয় ফুটবল বিশ্বকে। হাসপাতালেও তাকে যেতে হয় বাজে সময়ের মাঝ দিয়ে। হৃদরোগ থেকে মুক্তি পেতে শরীরে বসাতে হয় ইমপ্ল্যানটেবল কার্ডিওভার্টার ডেফিব্রিলেটর (আইসিডি)। যা হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়া থেকে রক্ষা করছে। কিন্তু আইসিডির কারণে সিরি আ’র আইনের বলি হন এরিকসেন। ডেনিশ তারকাকে মাঝ মৌসুমে বাতিল করতে হয় ইন্টার মিলানের সঙ্গে চুক্তি।
সেসব ছাপিয়ে ফুটবলে ফিরতে মরিয়া হয়ে ওঠেন এরিকসেন। শরীরের সঙ্গে লড়াই চালিয়ে জিতে যাওয়ার পর ফিরেছেন ফুটবল মাঠে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে আধ-মৌসুমের জন্য চুক্তিবদ্ধ হন ব্রেন্টফোর্ডের সঙ্গে। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে দুর্দান্ত পারফর্ম করে ফের সুযোগ করে নেন জাতীয় দলে, সেই নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষেই ফেরেন। প্রীতি ম্যাচ দিয়ে আন্তর্জাতিক ফুটবলে ২৮৭ দিন পর ফিরে দ্বিতীয় মিনিটেই পেয়ে যান জালের দেখা।
গত বছরের ১২ জুন কিছুক্ষণের তরে যার জন্য থমকে দাঁড়িয়েছিল ফুটবল বিশ্ব, সেই এরিকসেনই বিশ্বের ফিরে আসার গল্পগুলোর অন্যতম নায়ক বনেছেন। নেদারল্যান্ডস, সার্বিয়ার বিপক্ষে গোল পাবার পাশাপাশি প্রিমিয়ার লিগে চেলসিকে বিধ্বস্ত করতেও রেখেছেন দারুণ ভূমিকা। একবার পেয়েছেন জালের খোঁজ।
ছিলেন প্রাণশঙ্কায়, মাঠে ফিরে হয়ে উঠলেন দলের অন্যতম ভরসা। এরিকসেন যখন উড়ন্ত ফর্মে, ইউরোপীয় ফুটবলের শীর্ষ স্তরের কোনো ক্লাবে ফিরে আসাটাও হয়ত তার জন্য এখন কেবল সময়ের ব্যাপার!