প্রথম শ্রেণিতে পড়ে শিশুটি, বয়স মাত্র সাত। বলা যায়, এই বয়সে শিশুদের একমাত্র কাজই হলো সহপাঠীদের সঙ্গে ছোটাছুটি আর খেলাধুলা করে সময় কাটানো। কিন্তু সেই খেলাই যেন কাল হলো তার, কঠিন এক নির্মমতার শিকার হতে হলো তাকে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, শনিবার সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের একটি নির্মাণাধীন ফসলরক্ষা বাঁধে খেলা করছিল শিশু ইয়াহিন। বাঁধে গড়াগড়ি দিতে দিতে থাকলে এক পর্যায়ে সামান্য ক্ষতিগ্রস্ত হয় ওই বাঁধের একটি অংশ। এই ‘অপরাধে’ প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি আবদুল অদুদ অগ্নিমূর্তি ধারণ করেন। এক পর্যায়ে শিশুটিকে ধরে কয়েকবার মাটিতে আছড়ে ফেলেন। এমন নির্যাতনে শিশুটির আতঙ্কিত মুখ দেখে দয়া হয়নি নির্যাতনকারীর। শুধু তাই নয়, বারবার পা জড়িয়ে ধরে ক্ষমা চেয়েও নির্যাতনকারীর হাত থেকে বাঁচতে পারেনি ইয়াহিন। বরং পা জড়িয়ে ধরায় আরো ক্ষিপ্ত হন অদুদ। আবারো মাটিতে আছড়ে ফেলে কাস্তে (ধান কাটার কাঁচি) দিয়ে তার হাতের চারটি আঙুল কেটে দেন। গুরুতর আহত শিশুটিকে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। কীভাবে এতটা নির্মম হয় মানুষ? ছোট্ট একটি শিশু কতটাই বা লাভ-ক্ষতির হিসাব বোঝে? এই সামান্য অপরাধের জন্য এত বড়, শাস্তি পেতে হবে তাকে? আমাদের প্রশ্ন এই ব্যক্তি কি মানুষ? নাকি অন্য কিছু? শিশুটির কচি মুখের করুণ আর্তনাদও তাকে রক্ষা করতে পারেনি ওই পাষণ্ডের হাত থেকে। এরইমধ্যে জানা গেছে, আবদুল অদুদ ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। আমরা ভাবছি ওই শিশুটির কথা। নির্মম নির্যাতনের অসহ্য যন্ত্রণা নিয়ে হাসপাতালের বেডে শুয়ে থাকা শিশুটির ভবিষ্যতের কথা। সে কীভাবে ভুলবে এই ভয়ংকর স্মৃতির কথা? আঙুল হারিয়ে কীভাবে অন্য শিশুদের মতো করে স্বাভাবিক জীবনযাপন করবে সে? আমরা এরইমধ্যে এই ঘটনায় সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপারের (এসপি) প্রশংসনীয় উদ্যোগের কথা শুনেছি। জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে তিনি শিশুটির সুচিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে নানাভাবে সান্ত্বনাও দিচ্ছেন তিনি। তবে এখনো ওই পাষণ্ড অদুদকে ধরতে পারেনি পুলিশ বাহিনী। আমরা মনে করি, বিলম্ব না করে ওই নির্যাতনকারীকে দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। সেই শাস্তি হোক এমন, যেন অার কেউ এমন নির্যাতনের সাহস না পায়।