১৮৫৪ সালে ব্রিটিশ শাসনামলে এদেশে চা বাগানের পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর কেটে গেছে প্রায় পৌণে দুইশ বছর। ব্রিটিশ আমল শেষে বর্বর পাকিস্তানিদের হটানোর পর ইতোমধ্যে স্বাধীন বাংলাদেশেরও ৪৭ বছর কেটে গেছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও চা বাগানের শ্রমিকদের জীবনমান এবং মর্যাদার ক্ষেত্রে যে তেমন কোনো উন্নয়ন হয়নি, তা সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া একটি ছবি দেখে বুঝা যাচ্ছে।
ওই ছবিতে দেখা যায়, হবিগঞ্জের বাহুবলে চা বাগানের শ্রমিকরা বাহুবল উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি)-এর পা ছুঁয়ে আছেন। কেউ কেউ বলছিলেন, চা বাগানে নিজেদের চাঁদায় গড়ে তোলা স্কুল টিকিয়ে রাখার আকুতি জানাচ্ছিলেন তারা। আবার অন্যরা বলছেন, স্কুল টিকিয়ে রাখার আশ্বাস পেয়ে তারা তাকে প্রণাম করছেন। ঘটনা যাই হোক, এটা একবিংশ শতাব্দীর জন্য অস্বাভাবিক একটি বিষয়। এ ছবি প্রমাণ করে আমরা কীভাবে তাদের পশ্চাৎপদ করে রেখেছি।
পশ্চাৎপদ করে রাখতে পেরেছি কারণ আমরা তাদের জন্য শিক্ষার ব্যবস্থা করতে পারিনি। সব চা বাগানে বিদ্যালয় থাকার নিয়ম। চা বাগানের মালিক এই আইন মানা তো দূরের কথা, উল্টো শ্রমিকদের চাঁদায় গড়ে তোলা স্কুল বন্ধের মতো পদক্ষেপও গ্রহণ করতে দেখি আমরা সময় সময়। এরকম হলে তা সরকারের শতভাগ শিক্ষা নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
চা শ্রমিকরা কতোটা নিপীড়িত ও অমানবিক জীবন পার করছেন যুগের পর যুগ এই অমানবিক ছবি প্রকাশ্যে আসার পর তা আমাদেরকে নতুনভাবে ভাবিয়ে তুলেছে। একইসঙ্গে তাদের মজুরির বিষয়ও নতুনভাবে ভাবতে হবে বলে আমরা মনে করি। কারণ, দৈনিক ৮০ থেকে ১০০ টাকার মজুরিতে পরিবারসহ তাদের জীবনমানের ব্যয় নির্বাহ হয় না বলে অনেক আগে থেকেই তাদের অভিযোগ। চা শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলোও দিনের পর দিন একই কথা বলে আসছে। তাদের অভিযোগ বাস্তবসম্মত বলে আমরা মনে করি। চা শ্রমিকদের জীবনমান উন্নত করতে দায়িত্বশীলদের ভূমিকা রাখার কথা স্মরণ করে দিয়েছে এই ছবি।
হবিগঞ্জের এই চা বাগানসহ দেশের সকল চা বাগানে স্কুল নির্মাণসহ আইন অনুযায়ী শ্রমিকদের সকল সুবিধা নিশ্চিত করে তাদের জীবনমান উন্নত করার লক্ষ্যে যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণে আমরা সংশ্লিষ্টদের আহ্বান জানাচ্ছি।