চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

‘এমন গন্ডগোল লেগে থাকলে আর কেউই হলে যাবে না’

এফডিসি এবং ঢাকাই সিনেমার সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বললেন কাজী হায়াৎ

‘সিনেমায় একেবারে নাজুক অবস্থা বিরাজ করছে। হাতেগোনা দু একজন মানুষ চেষ্টা করছেন সিনেমাটাকে কীভাবে বাঁচানো যায়! এরমধ্যে শিল্পী সমিতির নির্বাচনে যে গন্ডগোল লেগে আছে, এতে করে আর কেউই হলে যাবে না। যাদের নিজেদের মধ্যে এত সমস্যা তাদের ছবি কেন মানুষ পয়সা দিয়ে দেখবে?”

– এফডিসি এবং ঢাকাই সিনেমার সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে এমন কথাই বললেন অর্ধশতাধিক সিনেমার পরিচালক কাজী হায়াৎ।

বাপ্পী চৌধুরীকে নিয়ে এই নির্মাতা নিজের ক্যারিয়ারের ৫১তম চলচ্চিত্র ‘জয় বাংলা’ শুটিং করছেন এফডিসির প্রশাসনিক ভবনে। মঙ্গলবার শুটিং সেট থেকে চ্যানেল আই অনলাইনের সাথে আলাপে বর্তমান চলচ্চিত্র সম্পর্কে নিজের অভিমত জানান।

কিছুটা সংক্ষুব্ধ কাজী হায়াৎ বলেন, ‘সিনেমা হলে মানুষ নেই। কেন নেই, সেটা নিয়ে চলচ্চিত্রের বেশিরভাগই মানুষদের গবেষণা নেই, কোনো চিন্তা নেই। সবাই খালি নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত।’

শিল্পী সমিতির নির্বাচন প্রসঙ্গ টেনে কাজী হায়াৎ বলেন, এই নির্বাচনে নানামুখী কথাবার্তা চলছে। মনে হচ্ছে সারাদেশে এই নির্বাচন হচ্ছে। অথচ এর কোনো মানেই হয় না। খুব দুঃখজনক। কারণ, যতটুকু মানুষের হলে যাওয়ার ইচ্ছা থাকতো তাও চলে যাচ্ছে।

নির্বাচন ঘিরে দু-পক্ষের ‘অতিরিক্ত কাদা ছোড়াছুড়ি হচ্ছে’ উল্লেখ করে দেশের প্রখ্যাত এই চলচ্চিত্র নির্মাতা বলেন, শিল্পীদের এমন সব ন্যাক্কারজনক কথাবার্তা বেরিয়ে আসছে যা দর্শকেরা আগে জানতো না। ফলে দর্শকরা ওইসব শিল্পীদের ছবি আর দেখবে না৷ একেবারে হল বিমুখ হবে।

‘আমি সিনেমা হলে গিয়ে দেখেছি কিছু শিল্পী পর্দায় এলে মানুষ তাদের দারুণভাবে ধিক্কার জানায়। এমনকি তাদের পরিবার তুলে গালমন্দ করে। কেন ওই সিনেমার পরিচালক প্রযোজকরা এসব শিল্পী নিয়েছে এজন্য তাদেরও গালাগাল শুনতে হয়। কাজেই এসব গন্ডগোল ঝামেলা অবিলম্বে বন্ধ করা উচিত।’

‘সিনেমার চেয়ে সমিতি নিয়ে মাতামাতির কারণে বহু প্রযোজক সিনেমায় বিনিয়োগ করা ছেড়ে দিয়েছেন’ বলে জানান কাজী হায়াৎ৷ তিনি মনে করেন, কাজের চেয়ে অকাজ ফোকাসে আসছে, কাজ কমে যাচ্ছে।

‘আম্মাজান’ খ্যাত পরিচালক বলেন, এতে করে চলচ্চিত্রে বেকারত্ব বাড়ছে। অনেকেই আবার পথের ফকির হয়ে যাচ্ছেন।

নিজের দেখা অভিজ্ঞতা শেয়ার করে কাজী হায়াৎ বলেন, বেশকিছু দিন আগে মিরপুর থেকে একজন প্রযোজক এসেছিলেন। তিনি নতুন প্রযোজক। পেশায় গার্মেন্টস ব্যবসা করেন। ভদ্রলোক তার লগ্নিকৃত টাকা তো তুলতেই পারেননি। তার প্রযোজিত সিনেমাটাও ভালো হয়নি, মানুষ একেবারে গ্রহণ করেনি। তিনি চরমভাবে লোকসান করেছিলেন। কাকরাইল থেকে বেরিয়ে টাকার খালি ব্যাগ হাইকোর্টের মাজারের ওখানে ফেলে দিয়ে তওবা করেছিলেন আর সিনেমা বানাবেন না।

কাজী হায়াৎ বলেন, সম্মান বাঁচাতে তার মতো অনেক ব্যবসায়ী সিনেমা থেকে সরে যাচ্ছেন। লোকসানের ভয়ে দ্বিতীয়বার আর সিনেমা বানাননি।

তিনি বলেন, এই যখন সিনেমার অবস্থা, তখন একটা অযথা নির্বাচন ঘিরে ‘ঢিল মারার প্রতিউত্তরে পাটকেল মারা খারাপ’, একেবারে খুব খারাপ। যারা এগুলো করছে তাদের বলছি এসব বন্ধ করুন। আসল কাজে মনোযোগ দেন। দিনশেষে নির্বাচন নয়, শিল্পী হয়ে শিল্প ও কাজটাকে প্রাধান্য দিন।