প্রাথমিকে শিক্ষার্থী ঝরে পড়া কমানোর পাশাপাশি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি এবং উপস্থিতি বাড়াতে একটি প্রকল্পের প্রস্তাব দিয়েছিল প্রাথমিক ও গণ শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সেই প্রকল্পের নাম দেওয়া হয়েছিল ‘প্রাইমারি স্কুল মিল’। যার বাস্তবায়নে খরচ দেখানো হয়েছিল ১৭ হাজার কোটি টাকারও বেশি। মূলত বিদ্যালয়েই খিচুড়ি রান্না করে তা শিক্ষার্থীদের খাওয়ানোর পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু নানান অসঙ্গতি থাকায় তা অনুমোদন পায়নি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায়।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে বলা হচ্ছে, সারাদেশের ১ কোটি ৪৮ লাখ শিক্ষার্থীকে সপ্তাহের পাঁচ দিন খিচুড়ি রান্না থেকে শুরু করে খাওয়ানো পর্যন্ত বিরাট এক কর্মযজ্ঞ। তা বাস্তবায়নে ঠিকাদার, এনজিও, রাঁধুনী নিয়োগ থেকে শুরু করে প্রতিটি ধাপেই আছে নানান ঝামেলা। যাতে দৈনন্দিন শিক্ষাকার্যক্রম ব্যহত হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে। তাই খিচুড়ির পরিবর্তে অন্য কোনো খাবারের ব্যবস্থা রেখে নতুন প্রস্তাব দিতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শুধু যে এসব কারণে প্রকল্পটি বাতিল হয়েছে; আমরা তা মনে করি না। এর পেছনে আরও অনেক কারণ নিশ্চয়ই আছে। বিশেষ করে কোন খাতে কত টাকা খরচ হবে, তা অনেকক্ষেত্রে স্পষ্ট করা হয়নি। এমন কি যেসব এনজিও কর্মীরা কাজ করবেন তাদের বেতন, পরিবহন খরচ, রাঁধুনীদের পেছনে কত ব্যয় হবে- এমন অনেক কিছুই প্রকল্প প্রস্তাবে উল্লেখ নেই।
কিন্তু কেন নেই? ভুল করে হয়েছে, এমনটি ভাবারও কারণ নেই। কেননা যে কোনো উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে কোন খাতে কত খরচ হবে, তা নির্দিষ্ট করে বলাই নিয়ম। অথচ এখানে ইচ্ছা করেই তা অস্পষ্ট রাখা হয়েছে। তার উদ্দেশ্যটাও কারো বুঝতে বাকি থাকে না। আমরা এরই মধ্যে জেনেছি, এই প্রকল্প শুরু হওয়ার আগেই ১ হাজারেরও বেশি কর্মকর্তা খিচুড়ি রান্না দেখতে কোটি কোটি টাকা খরচ করে বিদেশ ভ্রমণের প্রস্তাব দিয়েছিল। তীব্র সমালোচনার মুখে শেষ পর্যন্ত তা বাতিল করা হয়।
হালের রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পসহ এর আগেও আমরা এমন সব প্রকল্পের কথা জানি। সেখানে এক শ্রেণির কর্মকর্তা সরকারি অর্থ লুটপাটের জন্যই অবাস্তব সব খরচ দেখান। তাতে সরকারের ভালো পরিকল্পনাও শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়, সমালোচনার মুখে পড়ে। ‘প্রাইমারি স্কুল মিল’ প্রকল্প প্রস্তাবের অস্পষ্টাও সেই উদ্দেশ্যেই।
আমরা মনে করি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক্ষেত্রে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। খিচুড়ির পরিবর্তে অন্য কোনো প্যাকেটজাত পুষ্টিকর খাবার দিলে সময়, অর্থ, শ্রম সব দিক থেকেই সাশ্রয় হবে।